ধৃত শেখ নাসিম।-নিজস্ব চিত্র
অগস্টের গোড়া থেকে বারবার আসছিল হুমকি ফোনটা। শালবনিতে জিন্দলদের নির্মীয়মাণ কারখানার সিনিয়র ম্যানেজার উত্তম সরকারকে বলা হচ্ছিল— ‘ইমারতি সরঞ্জাম সরবরাহের বরাত আমাদেরই দিতে হবে। না হলে প্রাণে বাঁচবেন না।’ সেই ঘটনায় রবিবার রাতে শেখ নাসিম আখতার নামে এক ঠিকাদারকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত যুবক শালবনির সুন্দ্রার বাসিন্দা।
পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “তদন্তে দেখা গিয়েছে হুমকি-ফোনগুলি এসেছিল দুবাইয়ের নম্বর থেকে। এগুলি সাধারণ ফোন-কল নয়, নেট-কল। এ ক্ষেত্রে সফটওয়্যারের সাহায্য নেওয়া হয়। খাদিম-মামলায় এ রকম ফোন-কল দেখা গিয়েছিল।” গুরুত্ব বুঝে শালবনির এই মামলার তদন্তভার তাই সিআইডি-র হাতে তুলে দিতে ইচ্ছুক জেলা পুলিশ। ভারতীদেবী বলেন, “সিআইডি-র কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।” ধৃতকে সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে হাজির করা হলে দু’দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ হয়। এ দিন সিআইডি-র এক অফিসারও আদালতে এসেছিলেন। মামলার ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নেন।
৮০০ কোটি টাকা লগ্নি করে শালবনিতে এখন জিন্দলদের সিমেন্ট প্রকল্পের কাজ চলছে। ২০১৭ সালে কারখানা চালু হওয়ার কথা। স্থানীয়দের কাজের দাবিতে বারবার জমিদাতাদের বিক্ষোভ হয়েছে জিন্দলদের এই প্রকল্প এলাকায়। স্থানীয় ভাবে তৃণমূল নেতারা সেই দাবি সমর্থনও করেছেন। যদিও চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সিমেন্ট কারখানার শিলান্যাস অনুষ্ঠানে এসে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা ছিল, ‘‘আমায় ‘কনট্র্যাক্ট’ দিন, একে ‘কনট্র্যাক্ট’ দিতে হবে, এ সব যেন না হয়। জিন্দলদের অভ্যন্তরীণ কাজে কারও হস্তক্ষেপ করার কথা নয়।’’
তারপরেও এই ঠিকাদার গ্রেফতারের ঘটনায় জড়িয়ে গিয়েছে শাসক দলের নাম। এলাকায় তৃণমূল ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই ঠিকাদার আগেও জিন্দল প্রকল্পে ইমারতি সরঞ্জাম সরবরাহ করেছেন। তা ছাড়া, নাসিমের হয়ে যিনি মামলা লড়ছেন, সেই গৌতম মল্লিক তৃণমূলের আইনজীবী সংগঠনের জেলা সভাপতি। যদিও তৃণমূলের শালবনি ব্লক সভাপতি নেপাল সিংহের দাবি, “দায়িত্ব নিয়ে বলছি, ধৃতের সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।” আর গৌতমবাবুর বক্তব্য, ‘‘আইনজীবী হিসেবে মামলাটি নিয়েছি। এর সঙ্গে সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া, আমার মক্কেলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যে।’’
যাঁর কাছে হুমকি ফোন এসেছিল, জিন্দল প্রকল্পের সেই আধিকারিক উত্তমবাবু এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত’ বলে ফোন কেটে দিয়েছেন প্রকল্পের অ্যাসোসিয়েট ভাইস-প্রেসিডেন্ট অলোক ভট্টাচার্যও। তবে পুলিশকে উত্তমবাবু জানিয়েছেন, প্রথম ফোনটা আসে গত ৩ অগস্ট দুপুরে। গোড়ায় বিষয়টিতে তিনি আমল দেননি। তবে ৩ থেকে ২১ অগস্টের মধ্যে বারবার ফোন আসায় গত ৯ সেপ্টেম্বর উত্তমবাবু পুলিশে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তবে কোনও ফোনেই কাকে কাজের বরাত দিতে হবে, সেই নাম বলা হয়নি।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, উত্তমবাবুর কাছে যতবার ফোন এসেছে, তার আগে-পরে নাসিমের মোবাইলেও দুবাইয়ের ওই নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছে। যে ব্যক্তি ফোন করেছে, সে নাসিমের বিশেষ পরিচিত বলেও জেনেছে পুলিশ। সেই সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয়েছে নাসিমকে। মামলার তদন্তকারী অফিসার অমিত অধিকারী এ দিন আদালতে বলেন, “মনে হচ্ছে আরও বেশি কাজের বরাত পেতেই নাসিম এই কাজ করেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy