ফিরল-অতীত: গ্রাম দখলের লড়াইয়ে তির-ধনুক বাহিনী। সোমবার কেশপুরের পঞ্চমীতে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
‘শান্তি নয়, যুদ্ধ চাই’ স্লোগানের পরে ২৪ ঘণ্টাও কাটল না। ‘যুদ্ধ’ বেধেই গেল কেশপুরে! রবিবার কেশপুর সদরে পুরনো দাপুটে নেতা মহম্মদ রফিকের নেতৃত্বে তৃণমূলের মিছিল থেকে ওই স্লোগান ওঠে। তারপর সোমবার কেশপুরে বিজেপির মিছিলে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। কিছু লোককে তির-ধনুক নিয়ে ঘুরতে দেখা যায়। বিজেপির দাবি, চরকা থেকে দলের কর্মী-সমর্থকেরা মিছিলে যোগ দিতে আসছিলেন। পঞ্চমীতে তাঁদের বাধা দেওয়া হয়। তাঁদের লক্ষ করে গুলি-বোমা ছোঁড়া হয়। চারজন মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভর্তি।
হামলার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে তৃণমূল। পুলিশ জানিয়েছে, কেশপুরে গুলি চলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার বলেন, ‘‘কারও বুলেট ইনজুরির কোনও খবর নেই।’’ স্থানীয় সূত্রে খবর, এলাকায় বোমাবাজি হয়েছে। বোমার স্প্লিন্টারে জখম হয়েছেন বছর তেইশের শেখ বাদশা, বছর চল্লিশের শেখ রফিকুল, বছর চব্বিশের শেখ মহিদুল ও বছর বত্রিশের শেখ মঞ্জুর নামে চার বিজেপি কর্মী।
ক’দিন আগেই কেশপুর থেকে ঘুরে গিয়েছেন বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষ। তাঁর সরাসরি অভিযোগ, ‘রফিক নিজে গুলি চালিয়েছে। আমাদের লোকেরা সাক্ষী রয়েছেন। আমরা পুলিশে ওর নামে এফআইআর করব। পুলিশ ওকে গ্রেফতার না করলে যেখানে যাওয়ার যাব।’’ জেলার প্রাক্তন পুলিশ সুপারের আরও দাবি, ‘‘পুলিশের ক্লোজ ডোর বৈঠকে বলা হয়েছে, যে করেই হোক চরকা পুনরুদ্ধার করতে হবে। আমাদের কাছে সব খবর রয়েছে।’’ রফিক পাল্টা বলেন, ‘‘কেশপুরে এখন নাটক চলছে। আর তার নাট্যকার ভারতী ঘোষ।’’ গুলি, বোমা কি চলেছে? সদুত্তর এড়িয়ে রফিকের জবাব, ‘‘কিছু হয়ে থাকলে তা বিজেপির লোকজনই করেছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতিও অভিযোগ, ‘‘বিজেপিই কেশপুরকে ফের অশান্ত করতে চাইছে।’’
বিজেপির মিছিল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল।
রাজ্য রাজনীতিতে বরাবরের রণক্ষেত্র কেশপুর। এ বার লোকসভা ভোটের দিনও এলাকায় এসে ‘নিগৃহীত’ হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী ভারতী। ভোটের ফলপ্রকাশের পরে নতুন করে তৃণমূল-বিজেপি সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কেশপুরের একের পর এক এলাকায় বিজেপির পতাকা উড়তে দেখা গিয়েছে। ব্লক সদরে বিজেপি পতাকা তুলতেই শোরগোল পড়ে যায় শাসক-শিবিরে। তড়িঘড়ি কেশপুরে মিছিলের ডাক দেয় তৃণমূল। রবিবার সকালে সেই মিছিলেরই নেতৃত্বে ছিলেন ১৯৯৮-২০০০ কেশপুরে তৃণমূলের ‘রবিনহুড’ বলে পরিচিত রফিক।
সেই মিছিলে ‘যুদ্ধ চাই’-এর স্লোগান কেশপুরবাসীর মনে ভয় ধরিয়েছিল। রফিক যদিও দাবি করেছিলেন, কেউ কেউ ভুল করে স্লোগান উল্টে ফেলেছে। তবু এলাকাবাসীর আশঙ্কা ছিল, ফের তেতে উঠবে এলাকা। সেই শঙ্কা সত্যি করেই বিজেপির মিছিল ঘিরে সংঘর্ষ বাধে এ দিন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, এ দিন পঞ্চমীতে যে ভাবে সংঘর্ষ হয়েছে, যে ভাবে একদল লোক জমির আলপথ ধরে ছুটে বেরিয়েছে, ঠিক সেই ছবিই দেখা যেত ১৯৯৮-২০০০ সালে, কেশপুরের পুরনো অশান্তিপর্বে। মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন মঞ্জুর, রফিকুলরা বলেন, ‘‘আমরা মিছিলে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম। পঞ্চমীতে তৃণমূলের লোকজনেরা হামলা চালায়। পুলিশ-প্রশাসনের সামনেই হামলা করেছে।’’ বিজেপির কর্মীরা কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করেন বলেও অভিযোগ।
পঞ্চমীর ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) শচীন মক্কর, জেলার ডেপুটি পুলিশ সুপার উৎপল পুরকাইত প্রমুখ। সংঘর্ষের পর থেকে পঞ্চমীর পরিস্থিতি থমথমে।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy