ছবি: সংগৃহীত।
বড় ও ছোট ছেলে প্রবাসী। তাঁরা বাবা-মায়ের কোনও দায়িত্ব নেন না এবং তাঁদের সঙ্গে বিরোধ-বিবাদও নেই। কিন্তু বছর চারেক আগে মেজো ছেলের বিয়ের পর থেকেই সেই বৌমার সঙ্গে শুরু হয় পারিবারিক অশান্তি। অভিযোগ, বৌমা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। বৌমার বাপের বাড়ির লোকেদের কাছেও বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়িকে মারধর খেতে হয়েছে, সেই সঙ্গে এসেছে খুনের হুমকি। বৃদ্ধ পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেও সুরাহা মেলেনি। অগত্যা আইনজীবীর মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন হাওড়ার দাশনগরের বাসিন্দা নারায়ণচন্দ্র ভৌমিক এবং তাঁর স্ত্রী ক্ষণাময়ী ভৌমিক। মামলাটি রবিবার পর্যন্ত শুনানির জন্য ওঠেনি।
অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক, ৭৫ বছর বয়সি নারায়ণবাবু আবেদনপত্রে লিখেছেন, তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে কর্মসূত্রে সস্ত্রীক বাইরে থাকেন। ছোট ছেলে-বৌমাও প্রবাসী। তাঁরা কেউই বাবা-মায়ের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন না। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে কোনও গোলমালও নেই। ২০১৭ সালে মেজো ছেলের বিয়ের পর থেকেই বাধে বিরোধ। বৌমার শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনে দুঃসহ হয়ে ওঠে বৃদ্ধ দম্পতির জীবন। এক সময় বৃদ্ধের মেজো ছেলে স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ছেড়ে ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকতে শুরু করেন।
আবেদনপত্রে প্রাক্তন শিক্ষকের অভিযোগ, ছেলে বাড়ি ছেড়ে গেলেও সমস্যা মেটেনি। বসতবাড়ি মেজো বৌমার নামে লিখে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি শুরু হয়। তা নিয়ে মেজো ছেলের শ্বশুর-শাশুড়ি লোকজন এনে বৃদ্ধকে মারধর করেন এবং বাড়ি লিখে না-দিলে আগুনে পুড়িয়ে মারার হুমকিও দেন। মার্চে দাশনগর থানায় অভিযোগ করেন নারায়ণবাবু। কিন্তু পুলিশ সাহায্য করেনি। অভিযোগের ভিত্তিতে দাশনগর থানা যথাযথ ব্যবস্থাও গ্রহণ করেনি বলে জানান নারায়ণবাবু।
এই পরিস্থিতিতে আদালতের কাছে বৃদ্ধের আবেদন, তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হোক। নিজেদের শান্তিপূর্ণ জীবন ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি পুলিশের কাছ থেকে নিরাপত্তাও চেয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
অনেকেরই প্রশ্ন, পারিবারিক অশান্তি থেকে রেহাই পেতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু পরিবারের বৃদ্ধ সদস্যদের এ ভাবে বার বার আদালতে হত্যে দিতে হবে কেন? এই পারিবারিক অশান্তি ক্ষয়িষ্ণু পরিবার ব্যবস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
এর আগে বেশির ভাগ মামলাতেই বৃদ্ধ বাবা-মায়ের পক্ষে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। ২০১৭ সালের বাদুড়িয়ার এক দম্পতির মামলায় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী নির্দেশ দিয়েছিলেন, বাবা-মায়ের বাড়িতে থাকতে হলে তাঁদের নির্দেশ মান্য করতে হবে। নতুবা সন্তানেরা ভিন্ন বাসা খুঁজে নিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য নারায়ণবাবুর ছেলে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখানে নির্যাতনের পাশাপাশি মারধর ও প্রাণনাশের হুমকির অভিযোগ উঠেছে। আঙুল উঠছে ‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা’র দিকেও। সেই সব থেকে পরিত্রাণ পেতে বৃদ্ধ দম্পতি আপাতত বিচার ব্যবস্থার দিকেই তাকিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy