সেই দম্পতি।
বিদ্যুতের তার জড়ানো অবস্থায় বৃদ্ধ দম্পতির দেহ উদ্ধারের ঘটনায় শনিবার চমকে উঠেছিলেন চুঁচুড়াবাসী। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে দম্পতির এক মেয়ে রবিবার দাবি করেন, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তাঁর বাবা-মায়ের সাধের দু’টি নারকেল গাছ। ইচ্ছার বিরুদ্ধেই কাটতে হয়েছিল গাছ দু’টি। সেই শোক সহ্য করতে না-পেরে আত্মঘাতী হন তাঁরা।
গাছঅন্ত প্রাণ ছিলেন বৃদ্ধ ওই দম্পতি। ঝড়-বৃষ্টি হলে যাদের নিয়ে সব থেকে বেশি দুশ্চিন্তায় থাকতেন তাঁরা, সেই দু’টি নারকেল গাছ আমপানের তাণ্ডবে হেলে পড়েছিল। বিপজ্জনক ভাবে ঝুঁকে পড়েছিল বস্তির দিকে। অগত্যা, অনিচ্ছা সত্ত্বেও গাছ দু’টি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চুঁচুড়ার তালডাঙা গুপ্তগলির বাসিন্দা গঙ্গাধর দাস। কিন্তু বুঝেছিলেন, স্ত্রী জ্যোতিদেবী কখনই এই সিদ্ধান্ত মানবেন না। তাই, গত বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী যখন মন্দিরে গিয়েছিলেন পুজো দিতে, তখন কাঠুরিয়া ডেকে নারকেল গাছ কাটা শুরু করেছিলেন গঙ্গাধরবাবু। বাড়ি ফিরে গাছের গায়ে করাত চলছে দেখে মেজাজ হারান জ্যোতিদেবী। গঙ্গাধরবাবুর সঙ্গে বিবাদ হয়। খবর পেয়ে দম্পতির দুই মেয়ে এসে শান্ত করেন বাবা-মাকে। দু’দিন পরেই শনিবার দুপুরে নিজেদের ঘরেই মৃত অবস্থায় পাওয়া যায় দম্পতির দেহ। দু’জনেরই পায়ে জড়ানো ছিল বিদ্যুতের তার। তারের সংযোগ ছিল প্লাগ পয়েন্টে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, আত্মঘাতী হয়েছেন তাঁরা।
দম্পতির ছোট মেয়ে সোমা সেনের দাবি, ‘‘বাবা নারকেল গাছ দু’টি কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়াতেই অশান্তির সৃষ্টি হয়। তাতে দু’জনেই আত্মঘাতী হবেন এটা আমরা বুঝতেই পারিনি।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘গাছ ছিল বাবা-মায়ের প্রাণ। দু’জনই গাছ কাটার বিরোধী ছিলেন।’’
আরও পড়ুন: ধৃত তৃণমূল নেতা, আজ বন্ধের ডাক কুলতলিতে
শনিবার দুপুরে প্রতিবেশীরা দম্পতির কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের দরজা ঠেলেন। দেখেন, মেঝেতে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার জড়ানো তাঁদের দেহ। পুলিশ এসে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করে দেহ দু’টি চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে য়ায়। পরে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু হয়।
রবিবার সকালে ওই দম্পতির বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, বাগানে পড়ে রয়েছে সদ্য কাটা নারকেল গাছের গুঁড়িগুলি। বাগান ভর্তি ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ। যেগুলি বসিয়েছিলেন ওই দম্পতি। ঘটনায় বাকরুদ্ধ এলাকাবাসী। কবিতা নিয়োগী নামে এক প্রতিবেশীর কথায়, ‘‘গঙ্গাধরবাবুকে আমরা বিশ্বকর্মা বলে জানতাম। কারণ, উনি কাজপাগল মানুষ ছিলেন। এমন কোনও কাজ ছিল না, যা উনি জানতেন না। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা উপেক্ষা করে সারাদিনই গাছ নিয়ে থাকতেন ওঁরা। এমন ভাবে দু’জন এক সঙ্গে আত্মঘাতী হবেন, তা কল্পনাও করিনি। এখন ওঁদের গাছগুলি দেখার কেউ রইল না।’’
আরও পড়ুন: ফের আক্রান্ত চিকিৎসক, এ বার কোপ রেডিয়েশনে
প্রতিবেশীরা জানান, পরিবেশপ্রেমী ছিলেন গঙ্গাধরবাবু ও তাঁর স্ত্রী জ্যোতিদেবী। বৃদ্ধ কাজ করতেন এক বেসরকারি সংস্থায়। অবসর নেওয়ার পরে চন্দননগরের আলো-শিল্পের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। সাইকেল সারানো থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ— সবেতেই পটু ছিলেন তিনি। রুটিন মেনে গাছের পরিচর্যা করতেন। ছোট্ট জায়গায় নারকেল, সুপারি থেকে হরেক রকম গাছ বসিয়েছিলেন ওই দম্পতি। বাড়ির ছাদে ছোট ছোট টবে নানা প্রজাতির গাছ দেখা গিয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ের পর বাড়িতে একাই থাকতেন তাঁরা। মেয়েরা নিয়ম করে আসতেন বাবা-মাকে দেখতে। সোমাদেবী বলেন, ‘‘বাবা-মা গাছ এত ভালবাসতেন যে ঝড়বৃষ্টি হলেই গাছের দিকে তাকিয়ে থাকতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy