বাঘিনির ভয়ে আতঙ্কিত ঝাড়গ্রাম। —প্রতীকী চিত্র।
অশনিসঙ্কেত কেটেও কাটল না! ওড়িশার বাঘিনি জ়িনত সেই ঢুকেই পড়ল ঝাড়গ্রামে। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বেলপাহাড়ির জঙ্গলে।
বছর সাতেক আগে একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার লালগড়ের জঙ্গলে ঢুকে পড়ায় ঝাড়গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। পরে এক দল শিকারির বল্লম আর টাঙ্গির ঘায়ে প্রাণ গিয়েছিল ওড়িশার সিমলিপালের জঙ্গল থেকে আসা সেই বাঘটির। ওড়িশা থেকে সম্প্রতি জ়িনতও ঝাড়খণ্ডের জঙ্গলে হাজির হওয়ায় ঝাড়গ্রামের ঝাড়খণ্ড সীমানায় সেই পুরনো আতঙ্ক ফিরে এসেছিল। মাঝে অবশ্য খবর মিলেছিল, ঝাড়খণ্ডের জঙ্গল ঘুরে শেষ পর্যন্ত ঝাড়গ্রামের দিকে পা বাড়ায়নি বাঘিনি। সে ওড়িশার দিকেই ফিরে যাচ্ছে। কিন্তু শেষমেশ তা হল না। ঘুরেফিরে শুক্রবার সকালে সেই ঝাড়গ্রামের জঙ্গলেই ঢুকে পড়েছে জ়িনত।
বন দফতর সূত্রে খবর, ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া রেঞ্জের রাজাবাসার জঙ্গল পেরিয়ে চিয়াবাঁন্ধি এলাকা থেকে ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি থানার অন্তর্গত কাটুচুয়া জঙ্গলে ঢুকে পড়ে জ়িনত। আপাতত সেখানেই রয়েছে সে। তার গতিবিধি নজরে রাখছেন বনকর্মীরা। ড্রোন দিয়ে নজরদারি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি, জ়িনতের গলায় ট্র্যাকারও রয়েছে। ফলে তার অবস্থান জানতে বিশেষ বেগ পেতে হচ্ছে না বনকর্মীদের। অন্য দিকে, ওড়িশার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের কর্মীরা তাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বনকর্মীদের সূত্রেই খবর, জ়িনতকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছাগলের টোপ দিয়ে গভীর জঙ্গলে খাঁচা বসানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদিও তা কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে বনকর্মীদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। কারণ, একই ভাবে আগেও জ়িনতকে টোপ দেওয়া হয়েছিল। তখনও সেই ফাঁদে পা দেয়নি বাঘিনিটি।
বন দফতর সূত্রে খবর, জঙ্গল সংলগ্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। গ্রামবাসীদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যাতে জঙ্গলে না যান। অত্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া সন্ধ্যার পর বাড়ি থেকে বেরোতে নিষেধ করা হচ্ছে। আর বেরোতে হলে দল বেঁধে বেরোনোর পরামর্শ দিচ্ছেন বনকর্মীরা। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের উদ্দেশে তাঁদের অনুরোধ, বাঘিনি সংক্রান্ত কোনও খবর পেলেই যেন থানায় অথবা বন দফতরে তাঁরা জানান। এ ছাড়া বাঘিনি সম্পর্কে কোনও গুজব ছড়াতেও নিষেধ করা হয়েছে।
বন দফতর সূত্রে খবর, জ়িনত সিমলিপালের ব্যাঘ্র প্রকল্পের সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকেই এসেছে। সিমলিপাল থেকে গুরবান্দা হয়ে সুবর্ণরেখা নদী পেরিয়ে ঝাড়খণ্ডে পৌঁছে গিয়েছিল সে। সেখানে জামশেদপুর বন বিভাগের চাকুলিয়া রেঞ্জের জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছিল তাকে। তখন থেকেই সীমান্তে কড়া প্রহরা বসানো হয়েছিল রাজ্য বন দফতরের তরফে। রাত জেগে পাহারা দিচ্ছিলেন বনকর্মীরা।
গত ১৫ নভেম্বর মহারাষ্ট্রের তাডোবা-আন্ধারি ব্যাঘ্র প্রকল্প থেকে তিন বছরের জ়িনতকে ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পে (টাইগার রিজ়ার্ভ, সংক্ষেপে বা এসটিআর) আনা হয়েছিল। কয়েক দিন ঘেরাটোপে রেখে পর্যবেক্ষণের পরে রেডিয়ো কলার পরিয়ে ২৪ নভেম্বর তাকে সিমলিপাল ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ছাড়া হয়েছিল। তার পরেই ঝাড়খণ্ডের দিকে হাঁটা দেয় জ়িনত। যদিও বাঘের এ ভাবে ভিন্রাজ্যের জঙ্গলে বিচরণ করা অস্বাভাবিক নয় বলেই জানাচ্ছেন প্রাণী বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের বক্তব্য, নতুন জায়গায় ছাড়া হলে বাঘ বা বাঘিনি সাধারণত নিজের বিচরণক্ষেত্র চিহ্নিত করে নেয়। এমন এলাকা, যেখানে পর্যাপ্ত শিকার ও পানীয় জল পাওয়া যাবে। এ জন্য দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে তারা। তার পর ৩০-৪০ কিলোমিটার বৃত্তাকারে নিজের এলাকা তৈরি করে নেয়। অনুমান, এ ক্ষেত্রেও তেমনই ঘটছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy