বাগুইআটি আঞ্চলে ফাটানো হচ্ছে বাজি। ছবি: সুমন বল্লভ।
বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতের রেশ রয়ে গেল শুক্রবার রাতেও।
কালীপুজোর রাতে শব্দবাজির তাণ্ডব দেখেছে কলকাতা থেকে জেলার নানা প্রান্ত। শুক্রবারও সন্ধে ছাপিয়ে রাতে বাজির শব্দ কানে তালা ধরিয়েছে। রাস্তায় পুলিশের টহল, ধরপাকড়, এমনকি কিছু জায়গায় বৃষ্টিতেও জব্দ হয়নি শব্দ।
কলকাতায় কালীপুজোর রাতকে সমানে সমানে পাল্লা দিয়েছে শুক্রবার গোটা দিন। এ দিন সকালে সবচেয়ে বেশি বাজি ফাটানোর অভিযোগ এসেছে গরফা, কালিকাপুর, মুকুন্দপুর, গল্ফগ্রিন, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের মতো একাধিক জায়গা থেকে। বিকেলের পরে পাল্লা দিয়ে বাজি ফাটানোর অভিযোগ আসা শুরু হয় বেহালা, টালিগঞ্জ, বেলতলা, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, লেকটাউন, শ্রীভূমি, বাঙুর, বেলেঘাটার মতো একাধিক জায়গা থেকে। বেলেঘাটা চাউলপট্টিতে সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মাঝরাস্তায় শব্দবাজি বসিয়ে দেদার ফাটানো চলে। খানিক দূরে কয়েক জন যুবককে আবার হাতে ধরে রকেট ফাটাতে দেখা গিয়েছে। প্রায় কোথাওই সবুজ বাজির দেখা মেলেনি বলে দাবি।
কাশীপুরে আবার একের পর এক আবাসনে মাত্রাতিরিক্ত শব্দে বাজি ফাটানোর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকতে হয়েছে পুলিশকে। অভিযোগ, যে আবাসনেই পুলিশ যাওয়ার চেষ্টা করেছে, সেখানে বলা হয়েছে, দরজায় তালা। চাবি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ধরপাকড় অবশ্য থেমে ছিল না। লালবাজার জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে এ দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত মোট ৬০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজি ফাটানোর দায়ে ধৃত ২৬৫ জন। কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ বর্মার আশ্বাস, ‘‘কড়া আইনে পদক্ষেপ করে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে নজির তৈরি হয়।’’
কোথাও শব্দবাজির দৌরাত্ম্য, কোথাও আবার শব্দ সরিয়ে আলোর বাজিতে উৎসব পালন— জেলায় জেলায় কিন্তু দেখা গিয়েছে দুই ছবিই। কালীপুজোর রাতে উত্তরবঙ্গ জুড়ে শব্দবাজির দাপট ছিল ভালই। রাস্তায় পুলিশ থাকা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার রাতভর নিষিদ্ধ বাজির দাপট চলে বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে দাবি করা হয়। অভিযোগ, রাত ১০টার পরে শহর ও গ্রামে দেদার শব্দবাজি ফেটেছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত শব্দবাজির দাপট চলেছে কোচবিহার ও অলিপুরদুয়ারে। এমনকি, কালীপুজোর গভীর রাতে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামে জলপাইগুড়ি শহরে, তার মধ্যেও শহরের নানা দিক থেকে লাগাতার বাজির তীব্র শব্দ কানে এসেছে। ময়নাগুড়ি এবং ধূপগুড়িও শব্দাসুরের উপস্থিতি টের পেয়েছে। কালীপুজোর রাতের পরে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকেও শিলিগুড়ি শহরের খালপাড়া, হাকিমপাড়া, দেশবন্ধুপাড়া, মিলনপল্লি, সুকান্তপল্লি-সহ নানা এলাকায় নাগাড়ে শব্দবাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
পুলিশকর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, বাজির উৎপাত গত বারের তুলনায় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। মালদহে ১৭ কেজি, উত্তর দিনাজপুরে ১৫ কেজি এবং দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০ কেজি বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, এ বার শব্দবাজি নিয়ে ১৮টি মামলা হয়েছে। ১৯ জনকে ধরা হয়েছে। অন্তত সাত হাজার প্যাকেট শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী বলেন, “যেখানেই অভিযোগ মিলেছে, সেখানেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” তবে পুলিশেরই একটি সূত্র মানছে, সবুজ বাজি হিসেবে যেগুলি বিক্রি হয়েছে, সেগুলিই পোড়ানোর সময়ে তীব্র শব্দ হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে হুগলির শিল্পাঞ্চলে কোনও কোনও এলাকায় রাত ১১টার পরেও বাজি ফেটেছে। তবে শুক্রবার সন্ধ্যায় আর বাজির শব্দ কানে আসেনি। একই ছবি গ্রামীণ হাওড়াতেও। হরেক রকম আলোর বাজি দেখা গেলেও এ বার মুর্শিদাবাদ জুড়েও শব্দবাজি খুব কম। তবে লাগোয়া নদিয়া জেলায় শব্দবাবাজির উৎপাত সব থেকে বেশি ছিল কল্যাণী শহরে। রানাঘাট, চাকদহেও টুকটাক শব্দবাজি ফেটেছে। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরে দেদার বাজি ফাটলেও ঝাড়গ্রামে শব্দবাজির প্রকোপ অনেকটাই কম ছিল।
দুই ২৪ পরগনাতেও বাজির দাপট ছিল কম। ডায়মন্ড হারবার শহর ও গ্রামীণ এলাকায় সে ভাবে শব্দবাজি ফাটেনি। তবে আতশবাজি দেদার ফেটেছে। পরিবেশ কর্মী প্রদীপ্ত সরকার বলেন, “পরিবেশের জন্য আতশবাজিও ক্ষতিকারক। এর ধোঁয়া প্রবল বায়ুদূষণ ঘটায়। এ নিয়েও মানুষকে সচেতন হতে হবে।” বাজি নিয়ে কার্যত অভিযোগই নেই বর্ধমান, কাটোয়া, কালনার মতো শহরে। পুলিশের দাবি, গোড়া থেকেই অভিযান চালানো হয়েছে বলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে বৃহস্পতিবার রাত যত বেড়েছে, শব্দ-তাণ্ডবের দাপাদাপি ছিল আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি-শিল্পাঞ্চলে। নিয়ামতপুরে অনেকের অভিযোগ, বার বার পুলিশকে ফোন করেও সুরাহা হয়নি। দুর্গাপুরে তুলনায় শব্দবাজির অভিযোগ কম। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি পিন্টু সাহা জানান, দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজোর রাত পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ কেজি বাজি উদ্ধার হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy