বিশাল দাস। —নিজস্ব চিত্র।
হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশাল দাস-সহ তার ৩ সঙ্গীকে গ্রেফতার করল চন্দননগর পুলিশ। একাধিক খুন, তোলাবাজির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে খুঁজছিলেন গোয়েন্দারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকায় গা-ঢাকা দিয়েছিল বিশাল এবং তার সঙ্গীরা। সোমবার রাতে গ্রামবাসীদের তৎপরতায় সেখানে ধরা পড়ে তারা।
পুলিশ সূত্রে খবর, হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী বিশালকে খুঁজছিলেন চন্দননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। গত ১০ অক্টোবর চুঁচুড়া কামারপাড়ার যুবক বিষ্ণু মালকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে বিশাল ও তার সঙ্গীরা। খুনের পর বিষ্ণুর দেহ টুকরো টুকরো করে ফেলে দেয় বৈদ্যবাটি শেওড়াফুলিতে।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বিষ্ণুর হাত-পা ধড় উদ্ধার হলেও মাথা উদ্ধার হয়নি। বিশালের ৫ সঙ্গীকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বিশালের খোঁজে জোর তল্লাশি চলছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে জীবনতলা থানার কুড়িয়াভাঙ্গা এলাকায় বিশাল কোথাও লুকিয়ে রয়েছে বলে খবর পায় পুলিশ। তার খোঁজে গোয়েন্দারা ওই এলাকায় যান। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, জীবনতলার কুড়িয়াডাঙা গ্রামে বিশালের পূর্বপরিচিত ১ রিক্সাচালক কুতুব শেখের বাড়িতে সঙ্গীদের নিয়ে লুকিয়ে ছিল সে। কুতুবের বাড়িতে কয়েক জন বহিরাগত দুষ্কৃতী রয়েছে জানতে পেরে গত কাল গ্রামবাসীরা তাঁর বাড়ি ঘিরে ফেলে। এলাকার মানুষজনের আসার খবর পেয়েই সেখান থেকে গা ঢাকা দেয় সেই দুষ্কৃতী দল। ঘটনার খবর পেয়ে মাছের ফিশারির “আলাঘরে’ উপস্থিত হন গ্রামের মানুষজন। সেখান থেকেও পালিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। এর পর পিছু ধাওয়া করে জনা পঞ্চাশেক গ্রামবাসী। সে সময় গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে ৩ দুষ্কৃতী। গ্রামবাসীদের গুলি করে পালানোর সময় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পরে যায় বিশাল-সহ ৩ জন। অভিযোগ, তাদের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন ৩ জন গ্রামবাসী। ঘটনার খবর পেয়ে এর পর ওই ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। সে সময় পুলিশ জানতে পারে, তাদের মধ্যেই রয়েছে বিশাল।
আরও পড়ুন: বহু দিন পর শুভেন্দুর মুখে ‘নেত্রী’, বার্তা কি কালীঘাটকে
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে খবর দুষ্কৃতীদের গুলিতে আহত ৩ ব্যক্তি মাজেদ গাজী, আলমগীর গাজী এবং মোসলেম মোল্লাকে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
সোমবার রাতের ওই ঘটনার পর বারুইপুর জেলা পুলিশের ১টি বিরাট টিম ওই এলাকায় আসে। শুরু হয়েছে তল্লাশির কাজ। বিশালদের কাছ থেকে ২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এই আগ্নেয়াস্ত্র দিয়েই গুলি তারা চালিয়েছিল বলেই মনে করছে পুলিশ। অন্য দিকে, বিশালকে জেরা করতে চুঁচুড়া থেকে হুগলি জেলা পুলিশের ১টি দল জীবনতলা গিয়েছে।
বিশালকে ঘিরে ফেলেছে গ্রামবাসীরা। —নিজস্ব চিত্র।
এ দিন চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ূূন কবির জানান, ৪টি খুন-সহ একাধিক তোলাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত হুগলি চুঁচুড়ার বাসিন্দা বিশাল। তার বিরুদ্ধে ১ জন রংমিস্ত্রি, ১ জন গাড়িচালক এবং ১ জন গ্যাংস্টারকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে হুগলির কুখ্যাত দুষ্কৃতী টোটন বিশ্বাসের দাদা তারক বিশ্বাসকে তাদের ডেরায় ঢুকে খুন করে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকাতেই গা ঢাকা দিয়েছিল বিশাল। পরে সেই ঘটনায় গ্রেফতার হয় বিশাল। প্রায় আড়াই বছর জেল খাটার পর সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিনে ছাড়া পায় সে। তার শেষ শিকার বিষ্ণু মাল। চুঁচুড়া কামারপাড়ার বাড়ি থেকে বিষ্ণুকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করে দেহ টুকরো করে ফেলে দেয় বিশাল। খুনের দৃশ্য মোবাইলবন্দিও করে সে।
আরও পড়ুন: বুধবার রাজ্যে আসছেন অমিত শাহ, সঙ্গে ফিরছে মধ্যাহ্নভোজ রাজনীতি
পুলিশ জানিয়েছে, ত্রিকোণ প্রেমের জেরে নৃশংস ভাবে খুন করা হয় বিষ্ণুকে। বিশালকে রিমান্ডে নিয়ে এসে বিষ্ণু মালের মাথা উদ্ধার করা হবে বলে জানিয়েছেন সিপি হুমায়ূূন কবির। মঙ্গলবারই আইসি চুঁচুড়া প্রদীপ দাঁ-র নেতৃত্বে চন্দননগর পুলিশের একটি দল বিশালকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে জীবনতলা রওনা দেয়। বিশালের বিরুদ্ধে পুলিশের হাতে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলে দাবি করেছেন সিপি। যা আদালতে পেশ করে তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
গত কাল রাতে গুলিবিদ্ধ হওয়া ৩ জন তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত। এ বিষয়ে ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক শওকত মোল্লা বলেন, “দুষ্কৃতীরা এলাকায় অশান্তি করার জন্যই ঢুকেছিল। এর পিছনে বিজেপি-র ষড়যন্ত্র আছে। এলাকা অশান্ত করতেই এই সব করা হচ্ছে।”
বিশাল ধরা পড়ায় স্বস্তি মিলেছে চুঁচুড়ার বাসিন্দাদের। কামারপাড়ার বাসিন্দা সপ্তর্ষি বন্দোপাধ্যায় বলেন, “বিষ্ণু-খুনে মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে, এটা ভাল খবর। এ বার পুলিশ তার শাস্তির ব্যবস্থা করুক।” ছেলের খুনির শাস্তির দাবি করেছেন বিষ্ণুর বাবা-মা গোপাল এবং কুন্তি মালও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy