মৃত্যুর পরে রামুয়া। নিজস্ব চিত্র
পাড়ার লোকে এক সময়ে যাকে চিনত কাগজকুড়ানি হিসেবে, কালে কালে সে-ই হয়ে উঠেছিল গোটা এলাকার ত্রাস। যে হাতে সে রং-তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে ভালবাসত, সেই হাতেই অবলীলায় একের পর এক নৃশংস খুন করত সে। দাবি মতো ‘তোলা’ না দেওয়ায় এক যুবকের মুন্ডু কেটে নিয়ে তা দিয়ে ফুটবল খেলারও অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। শুধু তা-ই নয়, নিজেরই ঘনিষ্ঠ দুই শাগরেদের সঙ্গে মাদক বিক্রির টাকা নিয়ে গোলমাল হওয়ায় তাদের খুন করার পরে দু’টো করে হাত কেটে সাঁতরাগাছি সেতুর নীচে ঝিলের জলে ফেলে দিয়ে মৃতদেহ লোপাট করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। হাওড়ার ত্রাস সেই নৃশংস দুষ্কৃতী রামমূর্তি দেওয়ার বা রামুয়ার খুন স্বাভাবিক ভাবেই নাড়িয়ে দিয়েছে হাওড়া সিটি পুলিশ থেকে সাধারণ মানুষকে।
হাওড়া পুরসভার ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের শিবপুরে ধর্মদাস গাঙ্গুলি লেনের তস্য গলির এক বস্তির ঘর থেকে নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে উত্থান রামুয়ার। আদতে অন্ধ্রের বাসিন্দা হলেও তার জন্ম-কর্ম সবই শিবপুরের ওই ধর্মদাস গাঙ্গুলি লেন ও অতীন্দ্র মুখার্জি লেন সংলগ্ন এলাকায়। জমি সংক্রান্ত গোলমালের জেরে এলাকার বাসিন্দা বদ্রুজা আহমেদ ওরফে ‘বাঙালি’কে গুলি করে মেরে তার অপরাধ জগতে প্রবেশ। এর চার মাস পরে নাজির আহমেদ নামে এলাকার আর এক বাসিন্দাকে দিনেদুপুরে তাস খেলতে যাওয়ার নাম করে গলা কেটে খুন করার অভিযোগ ওঠে রামুয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, খুনের পরে নাজিরের কাটা মুন্ডু একটি ওষুধের দোকানের সিঁড়িতে রেখে ফুটবল ফেলে সে। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় পড়ে যায় হাওড়ায়। ঘুম ছুটে যায় পুলিশের।
সে দিনের সেই ঘটনার কথা বলতে গিয়ে মুখার্জিপাড়ার বাসিন্দা বাবুয়া শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘দিনটা ছিল ১৫ অগস্ট। সকালে আমি ক্লাবের মাঠে বসে ছিলাম। রামুয়া ট্যাক্সিতে যাওয়ার সময়ে আমার সঙ্গে হেসে কথা বলে গেল। তার আধ ঘণ্টার মধ্যেই শুনি, ও খুন করে মুন্ডু নিয়ে ঘুরেছে। এমন ঠান্ডা মাথার নৃশংস দুষ্কৃতী হাওড়া আগে দেখেনি।’’
এক সময়ের এলাকা কাঁপানো ‘দাদা’, তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলর বুদ্ধদেব সরকার বলেন, ‘‘স্রেফ তোলাবাজির জন্য ও মানুষ খুন করত। আমার সঙ্গে বেশি টক্কর নিত না। আমি ওকে বলে দিয়েছিলাম, আমার এলাকায় কিছু না করতে। তবে কিছু রাজনৈতিক নেতার জন্যই ও এতটা বেড়ে গিয়েছিল।’’
সোমবার সকালে ধর্মদাস গাঙ্গুলি লেনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকার পরিবেশ থমথমে। যে বস্তির ঘরে রামুয়া বড় হয়েছে, সেখানে এখন আর কেউ থাকে না। একটা তক্তপোষ ছাড়াও রয়েছে দেওয়ালে রামুয়ার আঁকা কিছু ছবি। এলাকার বাসিন্দা সত্যবতী দেবী বলেন, ‘‘রামুয়া ছবি আঁকতে খুব ভালবাসত। সময় পেলেই আঁকত। জেলে বসেও অনেক দেবদেবীর ছবি এঁকেছিল শুনেছি।’’
যে হাত দিয়ে সে রং-তুলি নিয়ে মজে থাকত, সেই হাতে মানুষ খুন করত কী করে?
আরও পড়ুন: ‘শেষ মুহূর্তেও পিস্তল চালানোর চেষ্টা করেছিল রামুয়া’, স্ত্রীর বয়ান ঘিরে বাড়ছে সন্দেহ
এলাকার এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘রামুয়া ছিল সাক্ষাৎ শয়তানের প্রতিমূর্তি। এলাকা ওর অত্যাচারে তটস্থ ছিল। নিজের লোকেদেরও ছাড়ত না। নিজের দুই শাগরেদ বিশু মণ্ডল ও পিঙ্কু সাউয়ের সঙ্গে টাকা নিয়ে গোলমাল হওয়ায় ওদের খুন করে দেহ পাচার করে দিয়েছিল। শুধু ওদের চারটে হাত পাওয়া গিয়েছিল সাঁতরাগাছি সেতুর ঝিলে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy