রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের বাসভূমি বলে প্রচার করা হচ্ছে, অথচ পর্যটকেরা সেখানে বাঘ দেখতে পান না বললেই চলে। খান তিনেক বাদ দিলে আন্তর্জাতিক মানের রিসর্ট তেমন নেই। তার উপর জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে নতুন রিসর্ট করা যাবে না, পুরনো কিছু ভাঙাও পড়তে পারে।
বিদেশি পর্যটকদের চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। অথচ এই সব সমস্যা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে সুন্দরবনের উপযোগিতা পুরোদস্তুর পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় বলে স্বীকার করছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যের পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাই সুন্দরবনে পর্যটনের প্রসার কোন মডেলে হবে, তা নিয়ে দু’পক্ষই উদ্বিগ্ন।
পশ্চিমবঙ্গকে কেন্দ্র করে পূর্ব ভারতে বিদেশি পর্যটক টানতে পর্যটন দফতর ও বণিকসভা সিআইআই (কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি) আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী পর্যটন সম্মেলন ও মেলা ‘ডেস্টিনেশন ইস্ট’ এ বছর ছিল ২৭ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি। স্বদেশ থেকে বিদেশে পর্যটকের দল নিয়ে যান— ৩৩টি দেশের এমন ১০৩টি ট্যুর অপারেটর সংস্থা এ বার ওই মেলায় যোগ দেন। পশ্চিমবঙ্গের গন্তব্য বলতে তাঁদের অধিকাংশের পছন্দ যথাক্রমে: সুন্দরবন, কলকাতা, দার্জিলিং, শান্তিনিকেতন ও বিষ্ণুপুর। সুন্দরবন এক নম্বরে থাকার কারণ— ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে বাঘের এমন বাসস্থান ভারতে কোথাও নেই।
সিআইআইয়ের পূর্বাঞ্চলের ট্যুরিজম সাব-কমিটির চেয়ারম্যান বিজয় দেওয়ানের কথায়, ‘‘আগের ছ’বার এত বেশি বিদেশি প্রতিনিধি কখনও আসেননি। বোঝাই যাচ্ছে, বিদেশি পর্যটকেরা এখন কতটা আগ্রহী পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে।’’ তাতে খুশি হওয়ার পাশাপাশি সরকার ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন, বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটকের চাহিদা মেটানোর ক্ষমতা বা ধারণ-ক্ষমতা আদৌ সুন্দরবনের আছে তো!
তার উপর সুন্দরবনকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তুলে ধরার প্রচারে এ যাবৎ ভুল পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন পর্যটন ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ। তাঁদের বক্তব্য, মধ্যপ্রদেশে কানহা কিংবা বান্ধবগড়ের জঙ্গলে ঘন ঘন বাঘ দেখা যায়। সেখানে সুন্দরবনে বাঘের দর্শন মেলে কালেভদ্রে। তবু এত দিন সুন্দরবনকে তুলে ধরা হয়েছে শুধু বা প্রধানত বাঘকে সামনে রেখে। পর্যটন দফতরের ওয়েবসাইটে প্রথমেই বলা হচ্ছে, সুন্দরবন আড়াইশোরও বেশি বাঘের বাসস্থান। বাঘ দেখার প্রত্যাশা জাগিয়ে আনা হয়েছে পর্যটকদের, অথচ তাঁরা বাঘ না দেখে ফিরে গিয়েছেন। বাঘকে সুন্দরবনের প্রধান দ্রষ্টব্য হিসেবে তুলে না ধরে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল, নদী, কুমির, মাছ ও মানুষের জীবনযাত্রার প্রচার করলে লাভ হতো বলে পর্যটন ব্যবসায়ীদের অভিমত।
ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটরস কাউন্সিল-এর সভাপতি শুদ্ধব্রত দেব বলেন, ‘‘ইদানীং পর্যটন দফতরের প্রচারের ছবিতে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, সুন্দরবনের এক বাসিন্দা নৌকোয় বসা এক বিদেশিনিকে চাক-ভাঙা মধু খাওয়াচ্ছেন। এই ছবিটা সুন্দরবনের প্রচারে বেশি কার্যকর।’’ তবে তিনি মনে করেন, ‘‘সুন্দরবনের ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে সেই মতো পর্যটন শিল্পের প্রসার করতে হবে।’’
এ বারের ‘ডেস্টিনেশন ইস্ট’-এ প্রশ্ন উঠেছে, আফ্রিকায় নাইরোবি থেকে মাসাইমারা জঙ্গলে যদি বিমানে যাওয়া যায়, তবে কলকাতা থেকে সুন্দরবন যেতে কেন হেলিকপ্টার পরিষেবা থাকবে না?
কিন্তু হেলিপ্যাড তৈরি তো দূরস্থান! জাতীয় পরিবেশ আদালতের বরং বক্তব্য, সুন্দরবনের অধিকাংশ রিসর্টই তৈরি হয়েছে উপকূলবিধি বা কোস্টাল রেগুলেশন জোন রুল ভেঙে। সুন্দরবনে আর কোনও নতুন নির্মাণ করা যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় পরিবেশ আদালত।
আন্তর্জাতিক মানের রিসর্ট তৈরি না করা গেলে বিদেশি পর্যটকেরা সুন্দরবনে গিয়ে থাকবেন কোথায়?
পর্যটন ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সুন্দরবন পর্যটনের মডেল অনুসরণের কথা বলছেন। সেখানে দ্বীপের কোনও রিসর্টে নয়, মূলত জলযানে ঘোরা এবং থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত। খুলনা থেকে কটকা-কচিখালির মতো অভয়ারণ্য দু’রাত-তিন দিন ভ্রমণ প্যাকেজে থাকা-খাওয়া ভেসেলেই।
একই চিন্তা পর্যটন দফতরেরও। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলছেন, ‘‘কেরলের ধাঁচে আমরা আটটি বিলাসবহুল হাউসবোট কিনব, যার তিনটি থাকবে সুন্দরবনে। এক-একটি হাউসবোটে চারটি করে ডাবল বেড রুম থাকবে।’’ প্রতিটি হাউসবোটের দাম প্রায় দেড় কোটি টাকা। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মাথায় রেখেই সুন্দরবনে পর্যটন হবে। আমাদের হাউসবোট ভাল চললে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আরও হাউসবোট সুন্দরনে চালু করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy