ফাইল চিত্র।
দলত্যাগের অভিযোগ প্রতিষ্ঠা করার মতো যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ নেই, এই কারণ দেখিয়ে মুকুল রায়ের বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য বিজেপির আবেদন নাকচ করে দিলেন বিধানসভার স্পিকার। বিধানসভার এই সিদ্ধান্তে স্বস্তি পেয়ে স্পিকারের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন মুকুল ও তাঁর আইনজীবীরা। প্রধান বিরোধী দল বিজেপি প্রত্যাশিত ভাবেই এমন সিদ্ধান্তে খুশি নয়। বিধানসভার রায়কে কটাক্ষ করে তারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তাদের নজর এখন সুপ্রিম কোর্টের দিকে।
কৃষ্ণনগর উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক মুকুল গত বছর বিধানসভা ভোটের পরেই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূল ভবনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে। তার প্রেক্ষিতেই দলত্যাগ-বিরোধী আইনে মুকুলের বিধায়ক-পদ খারিজের জন্য স্পিকারের কাছে আবেদন করেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই বিষয়ে দীর্ঘ শুনানি-পর্ব শেষ হয়েছিল আগেই। রায় দিতে গিয়ে শুক্রবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘শুনানিতে দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে এবং জমা পড়া সব তথ্য খতিয়ে দেখে আমার মনে হয়েছে, আবেদনকারীরা তাঁদের দাবির পক্ষে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে পারেননি। এমন কোনও তথ্য-প্রমাণ হাতে পাওয়া যায়নি, যার ভিত্তিতে সংবিধানের দশম তফসিলের ২ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দলত্যাগের ধারা প্রযোজ্য হতে পারে। তাই এই আবেদন খারিজ করে দেওয়া হচ্ছে।’’
স্পিকারের সিদ্ধান্তের পরে মুকুলের আইনজীবী সায়ন্তক দাসের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে যে অনুষ্ঠানের কথা বলা হচ্ছে, তা একটিই ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’। কোনও বিধায়ক দলত্যাগ করেছেন বলে অভিযোগ থাকলে হুইপ জারি, সাসপেনশন-সহ যে সব প্রক্রিয়া পরিষদীয় দলে হয়ে থাকে, তার কোনওটাই বিজেপি করেনি। স্পিকার তাই বিধায়ক-পদ খারিজের আবেদনই খারিজ করে দিয়েছেন। আর স্বয়ং মুকুলের প্রতিক্রিয়া, ‘‘বিধানসভার এই সিদ্ধান্তে খুশি। বারবারই বলেছি, আমি বিজেপিতে ছিলাম, বিজেপিতেই আছি!’’
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিধানসভার এই প্রক্রিয়ায় তাঁদের উৎসাহিত বা আশাবাদী কোনওটাই ছিলেন না। আইন মেনে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য, সংবিধানের দশম তফসিলের মর্যাদা সুপ্রিম কোর্টে রক্ষা পাবে বলে তাঁরা আশাবাদী। ‘দলত্যাগী’ মুকুলকে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির (পিএসি) চেয়ারম্যান করার বিরোধিতা সংক্রান্ত মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে। মুকুলের দলত্যাগ সংক্রান্ত বিষয়ের নিষ্পত্তি বিধানসভায় ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে হয়ে যাবে বলে ‘আশাপ্রকাশ’ করেছিল সর্বোচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। এর পরে আগামী সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্টে মামলার ফের শুনানি হওয়ার কথা।
স্পিকারের সিদ্ধান্তকে কটাক্ষ করে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য এ দিন বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মুকুল রায়কে ফিরিয়ে নিয়েছেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর গলায় উত্তরীয় পরিয়ে দিয়েছিলেন। আর স্পিকার বলছেন, মুকুল নাকি বিজেপিতেই আছেন! এই ঘটনা ভারতের ইতিহাসে, পৃথিবীর কোনও গণতন্ত্রের ইতিহাসে ঘটেছে বলে জানা নেই! এতে সংসদীয় গণতন্ত্র এবং বিধানসভার মর্যাদার প্রতিই তিনি শুধু বিশ্বাসঘাতকতা করেননি, নিজের পরিবারের ঐতিহ্য, আইনজীবী, বিধায়ক এবং সন্তানের পিতা সত্তার সঙ্গেও বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। আমরা এর বিরুদ্ধে আইনি পথে শেষ পর্যন্ত যাব।” মুকুল ‘সরকারি ভাবে’ বিজেপির বিধায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরে তিনি কি পুরভোটে গেরুয়া শিবিরের প্রচারে যেতে পারেন? শমীকের মন্তব্য, ‘‘ওই দায়িত্ব স্পিকারকেই দিলাম! উনি মুকুলকে বিজেপির পতাকা দিয়ে কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচারে পাঠান!’’
এই বিতর্কে এ দিন আবার নতুন মাত্রা যোগ করে সিবিআই এবং ইডি-র হাতে মুকুলের গ্রেফতারের দাবি তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। বিধানসভায় মুকুল বিজেপিরই বিধায়ক বলে ‘সিলমোহর’ পড়ার পরেই কুণালের দাবি, ‘‘সারদা ও নারদ-কাণ্ডে সিবিআই এবং ইডি-র উচিত বিজেপি নেতা মুকুল রায়কে গ্রেফতার করা। তিনি এক জন প্রভাবশালী ষড়যন্ত্রকারী, শুধু নিজে বাঁচার জন্য বিভিন্ন দলকে ব্যবহার করেছেন! আমার সঙ্গে বসিয়ে তাঁকে জেরা করার আবেদন জানিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাদু’টির কাছে চিঠি পাঠিয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy