লোকসভা নির্বাচনের ময়দানে হাজির ‘রেড পান্ডা’। তার পরনে গোর্খার পোশাক, মাথায় টুপি। হাত নেড়ে নেড়ে সে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রচার করছে। তবে পুরোটাই ‘অ্যানিমেশনে’। সে দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের ‘ম্যাসকট’। বাসিন্দাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ উৎসাহিত করতে রেড পান্ডাকে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
সরকারি সূত্রের খবর, আজ, শনিবার দিল্লিতে নির্বাচন কমিশনের ভোটের সচেতনতা বিষয়ক একটি বৈঠকে ওই প্রচারের বিষয়বস্তু চূড়ান্ত হবে। সব ঠিকঠাক থাকলে, আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম থেকেই জেলা জুড়ে পাহাড়ি ‘রেড পান্ডা’ নেমে পড়বে ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রচারে। সম্প্রতি দার্জিলিং জেলা নির্বাচন সেল’-এর পক্ষ থেকে রেডপান্ডাকে নিয়ে এক ছোট্ট তথ্যচিত্র, পোস্টার, ফ্লেক্সের নমুনা রাজ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হয়। সেখান থেকে তা দেখে দিল্লিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক পুনীত যাদব বলেন, “দার্জিলিঙের রেড পান্ডা বিশ্ববিখ্যাত। জেলার পাহাড়ে রেড পান্ডার সঙ্গে মানুষের একটা আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। ছোট্ট সুন্দর এই প্রাণীটিকে আমরা জেলার ভোটের ম্যাসকট করতে চলেছি। কমিশনের প্রচারের বিষয়বস্তু পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, দ্রুত প্রচারের কাজ শুরু হয়ে যাবে।” জেলাশাসক জানান, এক দিকে যেমন ভোটের প্রচারও হবে, তেমনিই লুপ্তপ্রায় রেড পান্ডাকে সংরক্ষণের বিষয়ও প্রচার থেকে মানুষের সামনে উঠে আসবে।
উল্লেখ্য, গত ২০১২-১৩ সালে দীর্ঘ দিন পরে পাহাড়ে তৎকালীন জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের উদ্যোগে চা পর্যটন উৎসব নতুন ভাবে হয়। সে বার দার্জিলিঙের রেড পান্ডাকে উৎসবের ‘ম্যাসকট’ হিসাবে ঘোষণা করে প্রচার করা হয়েছিল। দার্জিলিঙের বাসিন্দারা রেডপান্ডাকে বিশ্বাসযোগ্য, দুর্লভ বন্ধুর তকমাও দিয়েছেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, নির্বাচন কমিশনের নামে তৈরি স্বল্প দৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্রে দার্জিলিঙের নানা জনজাতির পোশাক, টুপিতে রেড পান্ডাকে দেখা যাবে। ‘অ্যানিমেশনে’র মাধ্যমে ছোট্ট প্রাণীটি নানা জনজাতির কাছে নিজের ভোট সময় মতো পোলিং বুথে গিয়ে দেওয়ার আর্জি জানাবে। স্থানীয় কেবল চ্যানেল-সহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিন মাধ্যমেও ওই প্রচার চলবে। পাশাপাশি, ভোটের কাজে নিযুক্ত ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত স্লাইডেও রেড পান্ডা থাকবে। এ ছাড়া ভোটের প্রচারের পোস্টারেও প্রাণীটি থাকছে। গত সপ্তাহে দিল্লি থেকে নির্বাচন কমিশনের জেলার ভোট প্রচারের পর্যবেক্ষক অলোক মিশ্র জেলা সফরে আসেন। দিল্লির বৈঠকে তাঁরও থাকার কথা।
রেড পান্ডা বা ক্যাট বিয়ারের সম্পর্ক দার্জিলিঙের সঙ্গে দীর্ঘদিনের। এই অঞ্চলের হিমালয়ের পাশাপাশি দক্ষিণ পশ্চিম চিনের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে রেডপান্ডা পাওয়া যায়। অনেকটা বিড়ালের মত হলেও ভালুকের কিছু আদল থাকায় একে ক্যাট বিয়ারও বলা হয়। রেডপান্ডার বুক, পিঠ লাল হলেও পা এবং শরীরের তলার অংশ গায় খয়েরি। থুতুনি, মুখ এবং ভুরু সাদা। কেন্দ্রীয় সরকার লুপ্তপ্রায় প্রাণীর তালিকায় রেখেছে রেড পান্ডাকে। পাহাড়ের ২২০০ মিটার থেকে ৪৮০০ মিটারের মধ্যে এদের দেখা মেলে। সিঙ্গালিলা ন্যাশনাল পার্ক, নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক এবং সিনচল অভয়ারণ্যে রেড পান্ডা রয়েছে। তবে এদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকায় ৯০ দশকে পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্কে এদের সংরক্ষণ ও প্রজননের কাজ শুরু হয়। প্রতিদিন দার্জিলিঙের চিড়িয়াখানায় প্রাণীটিকে দেখতে বহু মানুষ কচিকাঁচাদের নিয়ে ভিড় জমান। জেলার অন্যতম আকর্ষণ এই প্রাণীটির পাশাপাশি অ্যাভভেঞ্চার ট্যুরিজমকে ভোটের প্রচারে লাগাচ্ছে কমিশন। প্যারা গ্লাইডিং-এর মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের স্লোগান মেলে ধরার পরিকল্পনাও নেওয়া হয়েছে। একই ভাবে ২৫ জানুয়ারি ন্যাশনাল ভোর্টাস ডেতে প্যারাগ্লাইডিং-র মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছিল। কেবল চ্যানেল, রেডিও এবং এম চ্যানেলে ইতিমধ্যে ভোটের প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে পোস্টার, ফ্লেক্স জেলার সমস্ত সরকারি দফতরে ঝোলানো হবে। লিফলেট ছড়িয়েও প্রচার হবে। মূলত জেলার যে সমস্ত এলাকায় ভোট প্রয়োগের সংখ্যা কম থাকে, সেখানেই মূলত জোর দেওয়া হচ্ছে। আর প্রতিটি মহকুমায় স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে তিনটি করে পথনাটিকা করার কাজ শুরু হচ্ছে। আগামী ১৭ এপ্রিল রাজ্যে প্রথম দফায় নির্বাচনে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। ওই দিন ১৪ লক্ষ ১৫ হাজার ভোটার নিজেদের মত প্রয়োগ করবেন। তার আগের দুই সপ্তাহ ভোট নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজে গতি আনতে রেড পান্ডাকে সামনে রাখার কথা ভাবা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy