Advertisement
২৯ নভেম্বর ২০২৪

শিক্ষকদের বচসা, থমকাল প্রশাসনিক কাজও

পড়ুয়াদের বিক্ষোভের জেরে গত শুক্রবার থেকে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র বিএড কলেজের ক্লাস বন্ধ। শনিবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মও থমকে গিয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বিএড কলেজ সংক্রান্ত দু’টি অভিযোগ জমা পড়েছে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায়। প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন কলেজের শিক্ষিকা কল্যাণী সাহু।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৪ ০০:৪৩
Share: Save:

পড়ুয়াদের বিক্ষোভের জেরে গত শুক্রবার থেকে জলপাইগুড়ি আনন্দচন্দ্র বিএড কলেজের ক্লাস বন্ধ। শনিবার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগে কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মও থমকে গিয়েছে।

শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যার মধ্যে বিএড কলেজ সংক্রান্ত দু’টি অভিযোগ জমা পড়েছে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায়। প্রথম অভিযোগ দায়ের করেন কলেজের শিক্ষিকা কল্যাণী সাহু। তাঁর দাবি, এ দিন সকালে তিনি অধ্যক্ষের ঘরে হাজিরা খাতায় সই করতে গিয়েছিলেন। সে সময় অধ্যক্ষের ঘর ফাঁকাই ছিল। কিছুপরে, অধ্যক্ষ শুভেন্দু মোদক, শিক্ষক সঞ্জীব রায়, সরোজ ঘোষ এবং শিক্ষা কর্মী প্রমোদ মণ্ডল ঘরে ঢুকে শিক্ষিকাকে ধাক্কাধাক্কি করেন বলে অভিযোগ। অভিযোগে অধ্যক্ষ সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ‘যৌন হেনস্থা’র নালিশ জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, কলেজ কর্তৃপক্ষের তরফে অধ্যক্ষের দায়ের করা পাল্টা অভিযোগের দাবি, অধ্যক্ষের ঘর ফাঁকা পেয়ে মোবাইলে বিভিন্ন নথির ছবি তুলে পাচারের চেষ্টা করছিলেন শিক্ষিকা কল্যাণী সাহু। দেখতে পেয়ে তাঁর মোবাইলও ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগের সঙ্গে মোবাইল ফোনটিও থানায় জমা দেওয়া হয়েছে। এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সভা ঘটনার সূত্রপাত। তার পরে বৈঠক ভেস্তে যায়। কলেজের প্রশাসনিক কাজকর্মও ব্যহত হয়। বলে জানা গিয়েছে।

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” কলেজে অচলাবস্থার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। কলেজের অধিকাংশ পড়ুয়াই বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা। গত বৃহস্পতিবার শিক্ষিকা লিলি সরকার কলেজের পড়ুয়াদের (তাঁরাও শিক্ষক-শিক্ষিকা) কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ। সে ঘটনায় ‘অপমানিত’ হয়েছেন বলে অভিযোগ করে গত শুক্রবার থেকে পড়ুয়ারা ক্লাস বয়কট শুরু করেন। এ দিন পড়ুয়াদের প্রতিনিধিদের নিয়ে কলেজের টিচার্স কাউন্সিল জরুরি বৈঠকে বসে। সেই বৈঠক চলাকালীনই ঘটনার সূত্রপাত।

দুপুর ১টা নাগাদ কলেজের ‘এডুকেশন’ বিষয়ের শিক্ষিকা কল্যাণী সাহু ক্লাসে গিয়েও, পড়ুয়াদের না পেয়ে ফিরে আসেন। ফাঁকা ক্লাসঘরের ছবি মোবাইলে তুলে রাখেন শিক্ষিকা। কল্যাণী দেবীর দাবি, “আমাকে আগে থেকে কিছু না জানানোয় জরুরি সভায় যাইনি। অধ্যক্ষের ঘরে ঢুকে হাজিরা খাতায় সই করে ক্লাস নিতে না পারা কথা নোট লিখে রাখি।” হাজিরা খাতার ছবিও মোবাইল ফোনে তুলে রাখেন শিক্ষিকা। তাঁর দাবি, সে সময়ে কলেজের অধ্যক্ষ ছবি তুলতে দেখে কারণ জানতে চান। তবে তিনি কিছু বলার আগেই আরেক শিক্ষক সরোজ ঘোষ ধাক্কা দিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন বলে অভিযোগ। কলেজের টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক সঞ্জীব রায় এবং চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষা কর্মী তথা সিপিএম কাউন্সিলর প্রমোদ মণ্ডল অপমানজনক কথা বলেন বলে শিক্ষিকার অভিযোগ।

এরপরেই থানায় যান। সঙ্গে ছিলেন লিলিদেবীও। গত বৃহস্পতিবারই লিলি দেবীর বিরুদ্ধে পড়ুয়া শিক্ষকদের কান ধরে বেঞ্চে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে উঠেছিল। সে কারণে ক্লাসও বয়কটও চলছে। লিলি দেবী অবশ্য এ দিন কলেজে যাননি। পরে লিলি দেবীকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে কল্যাণী দেবী অভিযোগ করেন, “আমার গায়ে হাত দিয়ে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। পুলিশকে সবই জানিয়েছি।”

কলেজের অধ্যক্ষ পাল্টা দাবি করে বলেন, “একটি খাতা আনতে ঘরে ঢুকে দেখি শিক্ষিকা হাজিরা খাতায় ছবি তুলছেন। কেন এটা করছেন জানতে চাওয়া হলে তিনি উত্তর দিতে পারেননি। গায়ে হাত দেওয়া ধাক্কাধাক্কি করার অভিযোগ কেমন করে আসছে বুঝতে পারছি না।” টিচার্স কাউন্সিলের সম্পাদক সঞ্জীববাবুর পাল্টা অভিযোগ, “অনুমতি না নিয়ে ছবি তোলা যায় না। নথি পাচারের চেষ্টা হচ্ছিল।’’ আরেক অভিযুক্ত শিক্ষক সরোজবাবু বলেন, “চেঁচামেচি শুনে ছুটে গেলে শিক্ষিকা আমারও ছবি তুলতে শুরু করেন। আমি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে অধ্যক্ষের হাতে জমা দেয়েছি।” একই দাবি প্রমোদবাবুরও।

কল্যাণী দেবীর দাবি, “আমি কোনও নোট দিলে অধ্যক্ষ মুছে নিজের মর্জি মতো নোট লেখেন। সেটা যেন না হয় তাই ছবি তুলে রাখতে চেয়েছিলাম।” পরিচালন সমিতির সভাপতি সুশীল দেব বলেন, “পরিচালন সমিতি কোন শিক্ষক অথবা অশিক্ষককে কলেজের নথির ছবি তোলার অনুমতি দিতে পারে না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy