উত্তরকন্যায় চলছে নির্মাণকাজ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শহরেই রয়েছে বিশাল সার্কিট হাউস। তৃণমূল জমানায় তার কলেবরও বেড়েছে। গা ঘেঁষে থাকা সুকনা বনবাংলোও সংস্কার করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এ বার শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে ‘উত্তরকন্যা’য় প্রায় ৯ কোটি টাকা খরচ করে নতুন একটি বিলাসবহুল অতিথি নিবাস তৈরি হচ্ছে। ২০ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ উৎসবের উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই অতিথি নিবাসেই থাকবেন বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। তখনই ওই অতিথি নিবাসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও নামকরণ করারও কথা মুখ্যমন্ত্রীর।
অতিথি নিবাসে মোট ৫টি স্যুইট রয়েছে। তার একটিতে শুধু মুখ্যমন্ত্রীই থাকবেন, সেটি অন্য কোনও পদস্থ সরকারি আধিকারিক বা ভিভিআইপি-কে দেওয়া হবে না বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। বিরোধীদের বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রীর মতো ভিভিআইপি-দের থাকার জন্য শিলিগুড়ির কাছাকাছি এতগুলি জায়গা রয়েছে। তা সত্ত্বেও কেন আবার এত টাকা ব্যয়ে অতিথিনিবাস করা হচ্ছে? উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের যুক্তি, “প্রথমত একা মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এই অতিথি নিবাস তৈরি হচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, একাধিক থাকার জায়গা থাকলেও বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য আরও ভাল বন্দোবস্ত করতেই এই অতিথি নিবাস করা হচ্ছে।”
প্রশাসন সূত্রেই অবশ্য জানানো হয়েছে, অতিথি নিবাসটি গড়ে তোলা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের কথা মাথায় রেখেই। উত্তরবঙ্গ সফরে এলে কাঠের তৈরি বিভিন্ন বনবাংলোয় থাকতে পছন্দ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই অতিথি নিবাসের দেওয়াল মুড়ে দেওয়া হয়েছে দামি কাঠের আস্তরণে। বাংলোর সামনেই হবে একটি বড় ফোয়ারা। যেখানে জলের ধারার রং বদলে যাবে আলোর পরিবর্তনে। বাংলোর সামনে তৈরি হয়েছে ৪-৫ ফুট গভীর ‘লিলি পুল’। তাতে মাছ থাকবে। এক আধিকারিকের কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী যাতে বাংলোর লনে দাঁড়িয়েই জলে মাছ ঘুরে বেড়াতে দেখতে পান, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।” অতিথি নিবাসে থাকছে পাঁচটি স্যুইট। প্রতিটি স্যুইটে একটি করে শোওয়ার ঘর ও একটি করে বসার ঘর থাকছে। থাকছে আরেকটি করে ঘরও। কয়েকটি স্যুইটের স্নানঘরে ‘জাকুজি’ও রয়েছে। সব ক’টি স্যুইট লাগোয়া প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে। থাকছে সেগুন কাঠের ফলস সিলিং। সিলিং তৈরির জন্য কলকাতা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে প্রশিক্ষিত কারিগরদের। বাংলো চত্বর পুরোপুরি সবুজ করতে কলকাতা থেকে আনা হচ্ছে বিশেষ ধরনের ঘাস। ‘মেক্সিকান ঘাস’ বলে পরিচিত ওই ঘাস আগামী সপ্তাহেই পৌঁছে যাবে শিলিগুড়িতে। পুরোপুরি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত এই অতিথি নিবাসে থাকবে শব্দবিহীন অত্যাধুনিক জেনারেটর।
কিন্তু এই অতিথিনিবাসের প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর অভিযোগ, “আগে যে ভাবে রাজা-বাদশারা খরচ করতেন, এখন সরকারি টাকা সে ভাবেই খরচ হচ্ছে।” দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার বক্তব্য, “এই সরকার কোনও নিয়ম নীতির পরোয়া করে না। মানুুষ ভেবেছিলেন উত্তরকন্যায় ন্যায়-বিচার পাবেন, তাঁরা কিন্তু এত কোটি টাকার অতিথি নিবাস চাননি।” অশোকবাবুর বক্তব্য, গত বছর প্রায় ৬০ কোটি টাকা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় বলে উত্তরকন্যার উদ্বোধন করা হয়, কিন্তু তারপর থেকে সেখানে মাত্র একবার মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, “তারপরে আবার কেন এই অতিথি নিবাস?”
তবে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব আয়োজনে কোনও বিলাসিতা রয়েছে বলে মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, “বরাদ্দের মধ্যে কী ভাবে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে তোলা যায়, তার উদাহরণ এই অতিথি নিবাস।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy