মেয়াদ ফুরোনো গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেখছে পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
বাসিন্দাদের বিক্ষোভে শিলিগুড়ির প্রধাননগরের গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার গুদাম থেকে ৭৩টি সিলিন্ডার আটক করল মাটিগাড়া থানার পুলিশ। মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও ব্যবহার করার অভিযোগে এই সিলিন্ডারগুলি আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রধাননগরে সংস্থার সিলিন্ডার থেকেই আগুন ছড়িয়ে চম্পাসারির একটি পরিবারের তিন জনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল বলে অভিযোগ। সিলিন্ডার আটক করে গুদামটি তালাবন্ধ করেছে পুলিশ। এ দিন বিক্ষোভ-অভিযানের সময়েই গুদাম থেকে একটি লিক সিলিন্ডারও উদ্ধার করা হয়েছে। ওই সংস্থা সহ আরও দুটি গ্যাস সরবারহকারী সংস্থা মিলিয়ে মোট তিনটে সিলিন্ডার বোঝাই ট্রাক আটক করে মাটিগাড়া থানায় রাখা হয়েছে। এ দিন সকালেই গুদামে সিলিন্ডার পৌঁছতে ট্রাকগুলি দার্জিলিং মোড় এলাকায় আসে। প্রতিটি ট্রাকে ৩০৬টি করে সিলিন্ডার রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, বাসিন্দাদের বিক্ষোভের জেরেই ট্রাকগুলিকে আটক করা হয়েছে।পুলিশের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন রাত পর্যন্ত নির্দিষ্ট ধারায় অভিযোগ দায়ের না হওয়ায়, ঘটনাটি নথিভুক্ত করে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে। এ দিন সকাল থেকে বাসিন্দাদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হওয়া শিলিগুড়ির বৃক্ষ, পশু, মানুষ বন্ধু সমিতি নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা দাবি করেছেন, অভিযোগ করতে চাইলে, থানা থেকে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশার জগ মোহন বলেন, “সকালে একটি গ্যাস গুদামের সামনে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিছু সিলিন্ডার আটক করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে যেমন তথ্য উঠে আসবে সেই মতো ব্যবস্থা হবে।” যদিও, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার আইনি পরামর্শদাতা অলকেশ চক্রবর্তী বলেন, “পুলিশ কী ব্যবস্থা নিচ্ছে তা দেখে পদক্ষেপ করব।”
সিলিন্ডারে লিক থাকার কারণেই গত ২ মে রাতে চম্পাসারিতে দুর্ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। দগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় উত্তম সাহা, তাঁর স্ত্রী আদরিদেবী এবং তাঁদের কিশোরী মেয়ে বন্দনার। এ দিন সকালে চম্পাসারির বাসিন্দা এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা দার্জিলিং মোড়ে প্রধাননগরের গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার গুদামের সামনে বিক্ষোভ শুরু করে। বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলেন চম্পাসারির মৃত দম্পতির ছেলে কলেজ পড়ুয়া বাবু সাহাও। গুদামে থাকা এবং গ্রাহকদের নিয়ে আসা খালি সিলিন্ডারের দশা দেখে ক্ষোভ জানাতে শুরু করেন বাসিন্দারা।
কী ভাবে জানা যাবে সিলিন্ডারের মেয়াদ ফুরিয়েছে কিনা?
সিলিন্ডারের হাতলের ভেতরের দিকে মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ খোদাই করা থাকে বলে সংগঠন সূত্রে দাবি করা হয়েছে। গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার তরফেও সে কথা জানানো হয়েছে। এ, বি, সি অথবা ডি লেখা থাকে এবং হাইফেন দিয়ে বছর লেখা থাকে। বছরের বারো মাসকে চার ভাগে ভাগ করে এ থেকে ডি লিখে চিহ্নিত করা হয়। কোনও সিলিন্ডারে ‘এ-১৪’ লেখা থাকলে, সিলিন্ডারটি ২০১৪ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে পরীক্ষা করে যাচাই করতে হবে। পরীক্ষার পরে আবার নতুন তারিখ খোদাই করে দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে। এ দিন যে সিলিন্ডারগুলি আটক করা হয়েছে তার কয়েকটির মেয়াদ দু-তিন বছর আগে শেষ হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ।
প্রধাননগরের গ্যাস সরবারহকারী সংস্থার কর্ণধার বাপি দাস বলেন, “মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া সিলিন্ডার নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। বাসিন্দার দাবি মেনেই সিলিন্ডার সরবারহ করতে হয়। সব সিলিন্ডার খতিয়ে দেখার পরিকাঠামো আমাদের নেই।” ইন্ডিয়ান অয়েল কর্তৃপক্ষের শিলিগুড়ি অফিসের এরিয়া ম্যানেজার বৃন্দাবন সোরেন বলেন, “বাইরে আছি। শিলিগুড়িতে ফিরে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy