বালুরঘাটে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যে পরিবর্তনের পরে তৃণমূল জামানায় কোচবিহারের বিমান চলাচল শুরুর একমাস পরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তিন বছরে আশ্বাস মিললেও, বিমান চলাচল আর শুরু হয়নি। গত বছর মালদহ-বালুরঘাট থেকে সপ্তাহে একদিন কলকাতায় হেলিকপ্টার চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে তাও অনিয়মিত। এ বার সরকারি সিদ্ধান্ত হয়েছে, মালদহ-বালুরঘাটের সঙ্গে কলকাতায় ছোট বিমান পরিষেবা চালু হবে।
বুধবার সেই প্রস্তাবিত বিমান চলাচলের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে গেলেন রাজ্যের পরিবহণ সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। মালদহ এবং বালুরঘাট দু’জায়গা থেকেই বর্তমানে কলকাতায় হেলিকপ্টার যোগাযোগ থাকলেও, বিমানবন্দরের পরিকাঠামো বলতে যা বোঝায়, তা দুই জায়গার কোথাও নেই বলে অভিযোগ। মালদহে বিমানবন্দর বলতে একটি ছোট মাপের ঘর, অন্য দিকে একসময়ের বালুরঘাট বিমানবন্দরের সব ভবনই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিধায়ক উন্নয়ন তহবিলে সেখানে যাত্রী শেড তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দু’জায়গাতেই রানওয়ের যা অবস্থা, তাতে ছোট বিমানও ওঠা নামা সম্ভব নয় বলে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানানো হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কবে থেকে বিমান পরিষেবা চালু হতে পারে তা নিয়ে বৈঠকের পরেও কোনও আশ্বাস এ দিন মেলেনি। তবে আলাপনবাবু জানান, আপাতত বালুরঘাট-কলকাতা ভায়া মালদহ সপ্তাহে চার দিন ১৯ আসনের ছোট বিমান চালানোর কথাবার্তা চলছে। ভাড়া হবে সাড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে।
বালুরঘাট সার্কিট হাউসে আলাপনবাবু বলেন, “দুর্গাপুর, বাগডোগরা এবং কোচবিহার সেক্টরে একটি বেসরকারি সংস্থা বিমান চালাবে। রাজ্য সরকার তাতে কিছুটা আর্থিক সহায়তা করবে। ওই বিমান পরিষেবা বালুরঘাট এবং মালদহের সঙ্গে যুক্ত করা যায় কি না, আমরা দেখে নিতে চাইছি। তবে বালুরঘাট-মালদহকে উড়ান পরিষেবায় সংযুক্ত করতে বিমানক্ষেত্রে দরকারি কারিগরি এবং নির্মাণ কাজ করতে হবে। সেজন্য পূর্ত দফতর এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে।” বিমান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র কোন দফতরগুলি থেকে নিতে হবে, কী ধরনের নির্মাণ কাজ করতে হবে, সে সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ হেলিকপ্টারে চেপে মালদহে পৌঁছন পরিবহণ সচিব। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিমামবন্দর কর্তৃপক্ষের জেনারেল ম্যানেজার আর কে যোশী। জেলা শাসক শরদকুমার দ্বীবেদী, অতিরিক্ত জেলা শাসক (সাধারণ) দেবতোষ মন্ডল, পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্য আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। ঘন্টাখানেক বৈঠক করে তাঁরা বালুরঘাট রওনা দেন।
১৯৮৬ সাল পর্যন্ত মালদহে বিমান পরিষেবা চালু ছিল। এই বিমানবন্দর চালু জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। বছর খানেক আগে রাজ্য সরকার কলকাতা-বালুরঘাট ভায়া মালদহ একটি হেলিকপ্টার পরিষেবা চালু করে। ৮ আসনের কপ্টারটি প্রতি সপ্তাহে বুধবার ওঠা-নামা করে। তবে বিমান চালানোর জন্য ন্যূনতম পরিষেবা যেমন যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা, যথাযথ রানওয়ের ব্যবস্থা নেই। বালুরঘাটের মাহিনগর এলাকায় পরিত্যক্ত বিমানবন্দরটি রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, বালুরঘাটের বর্তমান বিমানবন্দরের যে পরিস্থিতি, তার হাল ফেরাতে প্রথমে দরকার কারিগরি পরিকাঠামো তৈরি। আলাপনবাবু জানিয়েছেন, কাজ শুরু করতে অন্তত ছ’মাস লাগবে। তার আগে বালুরঘাট থেকে উড়ান চালু সম্ভব নয়।
প্রায় ১০০ একর জায়গা নিয়ে বালুরঘাট বিমান বন্দর। এক কিলোমিটারের উপর রয়েছে এয়ারস্ট্রিপ। ওই রানওয়ের অবস্থাও পুরোপুরি বেহাল বলে অভিযোগ। ১৯৯৮ সালের পর এখান থেকে উড়ান চালাচল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাম আমলে কখনও পিয়ারলেস কখনও বায়ুদূত সার্ভিসকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে উড়ান চালুর ব্যাপারে সরকার উদ্যোগী হলেও, পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
জেলা চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি সুদীপ বাগচী বলেন, “বিমানক্ষেত্রের পরিকাঠামোগত উন্নতি না করে যাত্রী বিমান চালানো সম্ভব নয়। আশা করি সরকার এবারে উদ্যোগী হবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy