চার বছর আগে দুর্নীতির অভিযোগে মালদহে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষার গোটা প্রক্রিয়া বাতিল হয়ে গিয়েছিল। হতাশ হয়ে পড়েছিলেন জেলার ১৬ হাজার পরীক্ষার্থী। হাইকোর্টের নির্দেশে রবিবার সেই ১৩৩১টি শূন্যপদে ফের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে। কিন্তু সেই পরীক্ষাতেও এ বার ‘প্রশ্ন ফাঁসে’র অভিযোগ উঠল।
এ দিন পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরেই জেলাশাসকের কাছে এই পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ জানিয়েছে ছাত্র পরিষদ এবং এসএফআই। জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।” জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান স্বপন মিশ্রর কথায়, “প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার তো কথা নয়। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে প্রশ্ন তৈরি করার পরে তা থানায় পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছিল। তবে কেউ প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করানো হবে।”
এই পরীক্ষায় মোট নম্বর ৫০। তার মধ্যে লিখিত পরীক্ষা হয়েছে ৩০ নম্বরের। এর মধ্যে ২০ নম্বর ছোট প্রশ্ন। বাকি ১০ নম্বর রয়েছে প্রবন্ধ রচনায়। দু’টি ছাত্র সংগঠনেরই অভিযোগ, ওই ১০ নম্বরের প্রশ্নটিই ‘ফাঁস’ হয়ে গিয়েছিল। প্রবন্ধটির বিষয় ছিল, ‘স্কুলছুট ছাত্রদের প্রাথমিক স্কুলে আরও ভাল ভাবে ধরে রাখার উপায় কী?’ ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি বাবুল শেখ বলেন, “গত শনিবার সকাল থেকেই বহু পরীক্ষার্থী জানতেন, প্রবন্ধের বিষয় কী আসবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে দেখলাম, সেই একই প্রশ্ন এসেছিল পরীক্ষার।” জেলাশাসকের কাছে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তাঁর দাবি, “এই পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নিতে হবে।” এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক অভিজিৎ দে বলেন, “প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা প্রহসনে পরিণত হয়েছে। পরীক্ষার অনেক আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে গিয়েছে। পুনরায় পরীক্ষার দাবি জেলাশাসকের কাছে জানানো হয়েছে।”
তবে এ ধরনের সব পরীক্ষার ক্ষেত্রেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেলে বিকল্প প্রশ্নপত্র তৈরি করে রাখা হয়। এ ক্ষেত্রে বিকল্প প্রশ্নপত্র দেওয়া হল না কেন? স্বপনবাবুর দাবি, “প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে পরীক্ষার পরে অভিযোগ করা হয়েছে। আগে লিখিত ভাবে সেই অভিযোগ কেউ করেননি। তাই পরীক্ষার্থীদের বিকল্প প্রশ্নপত্র দেওয়া হয়নি।” আগে কেন অভিযোগ করা হয়নি? ছাত্র সংগঠনগুলির এ ক্ষেত্রে বক্তব্য, প্রশ্নপত্র দেওয়ার পরেই তাঁরা বুঝতে পেরেছেন যে প্রশ্ন ‘ফাঁস’ হয়ে গিয়েছে। তারপরেই অভিযোগ করা হয়েছে।
এই ১০ নম্বরের প্রবন্ধের নম্বর দেওয়া নিয়েই ২০১০ সালে এই পরীক্ষার পরে বিভ্রাট তৈরি হয়েছিল। ২০১১ সালে সরকার পরিবর্তনের পরে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যানের বদল হয়। জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের তৎকালীন চেয়ারম্যান রামপ্রবেশ মন্ডল বলেন, “সেই সময় ফল প্রকাশের ক্ষেত্রে দেখা যায় প্রচুর গরমিল রয়েছে। বিশেষ করে এই ১০ নম্বরের প্রবন্ধের প্রশ্নের উত্তরের ক্ষেত্রেই ঠিক ভাবে নম্বর দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই কারণে ওই পরীক্ষা বাতিল করার জন্য বিদ্যালয় শিক্ষা দফতরে সুপারিশ করা হয়েছিল।”
কিছু পরীক্ষার্থী তখন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘদিন মামলা চলার পরে হাইকোর্ট ফের পরীক্ষা নেওয়ার নির্দেশ দেয়। হাইকোর্টের নির্দেশে রবিবার ৪০টি স্কুলে ৩০ নম্বরের পরীক্ষায় বসেছিলেন ওই ১৬ হাজার পরীক্ষার্থী।
কিন্তু আবার সেই পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেওয়ায় পরীক্ষার্থীদের অনেকেই আতঙ্কিত। তাঁদের বক্তব্য, চার বছর আগে পরীক্ষার ফল নিয়ে বিভ্রাটে গোটা প্রক্রিয়াই বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এ বার আবার যদি তা হয়, তা হলে বিরাট সমস্যায় পড়তে হবে। তাঁদের এক জন জানান, ক্রমশ বয়স বেড়ে যাচ্ছে। তাই পরীক্ষায় পাশ করলেও চাকরিজীবন কম হয়ে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy