কখনও আচমকা ঢুকে পড়ছে মোটরবাইক বাহিনী। কখনও আবার অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে মদ্যপরা। যাতায়াতের রাস্তায় চাঁদা আদায়কারীরা একাধিকবার দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন পর্যটকদের গাড়ি।
অভিযোগ, শীতের মরসুম জুড়ে কোচবিহারের রসমতি পর্যটন কেন্দ্র থেকে এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরছেন পর্যটকেরা। তারপরেও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বন দফতর কিংবা পুলিশ-প্রশাসন তেমন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। এমনকি পর্যটন কেন্দ্রে বনভোজনে যাওয়া ছাত্রীদের শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্তদের কেউই ঘটনার একমাস বাদেও ধরা পড়েনি বলে অভিযোগ। সব মিলিয়ে রসমতিকে ঘিরে পর্যটকদের উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।
রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “পর্যটকদের যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা দেখব। আমি নিজে রসমতির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে যাব। এলাকার বাসিন্দাদের কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” অভিযোগের কথা জানিয়েছেন কোচবিহার সদরের মহকুমা শাসক বিকাশ সাহা বলেন, “ওই পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ আমার কাছে এসেছে। পুলিশ ও বনকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।” জেলার পুলিশ সুপার রাজেশ যাদবও খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্রেই জানা গিয়েছে, রসমতি পর্যটন কেন্দ্র ও পিকনিক স্পটে শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা ভিড় করছেন। রসমতিতে পর্যটক ও বনভোজনকারীদের হেনস্থার অভিযোগ পুলিশের কাছেও জমা পড়েছে।
গত ১ জানুয়ারি ঘোকসাডাঙার একটি কোচিং সেন্টারের একদল ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি ও গাড়ি ভাঙচুর করে চালককে মারধরের অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় ১২ জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তাঁদের মধ্যে ১ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। পরে তিনি জামিন পান। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে ৭ জনের আগাম জামিনের আবেদন সম্প্রতি কোচবিহার জেলা ও দায়রা বিচারক রবীন্দ্রনাথ সামন্ত খারিজ করে দিয়েছেন। অভিযুক্তরা সকলেই পেটভাতা চন্দনচৌড়া এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের দাবি, একাধিকবার অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হলেও কাউকে ধরা যায়নি।
ঘোকসাডাঙার বাসিন্দা ওই বনভোজনকারী দলের গাড়ির চালক সঞ্জয় দে বলেন, “বনভোজন কেন্দ্রেই মোটরবাইক বাহিনী একদল যুবক ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে। বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের জানানোর পরে সাময়িকভাবে ওই যুবকেরা চলে যান। নিরাপত্তার কারণে খাওয়া-দাওয়া না সেরে সকলকে নিয়ে রওনা হলেও শেষরক্ষা হয়নি। রাস্তায় গাড়ি আটকে আমাকে ওই যুবকেরা মারধর করে। জেলার কোনও পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে এমন তিক্ত অভিজ্ঞতা হবে, ভাবতে পারিনি।”
ফেব্রুয়ারি মাসে রসমতি পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে যাওয়া কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, পর্যটন কেন্দ্রে যাতায়াতের পথে জাতীয় সড়ক থেকে গলিপথসব মিলিয়ে তিন বার চাঁদা আদায়কারীরা গাড়ি থামায়। ঝামেলা এড়াতে চাঁদা দিতে হয়।
ক্ষুব্ধ পর্যটকদের অভিযোগ, রসমতি পর্যটন কেন্দ্র চত্বরে বন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীর সংখ্যা কম। নজর মিনার ও রসমতি ঝিল লাগোয়া বিশাল এলাকার দায়িত্বে রয়েছেন বড় জোর দু’জন। পিকনিক স্পটেও হাতে গোনা কয়েকজন নজরদারি চালান বলে অভিযোগ। সেই সুযোগেই বহিরাগত মোটরবাইক বাহিনীর যুবকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে বলে দাবি। কোচবিহার নাগরিক অধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি তথা আইনজীবী রাজু রায় বলেন, “ওই পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা নেই। বনকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো ছাড়াও পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে।”
বন দফতর সূত্রের খবর, কোচবিহার শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে বাম জমানায় ওই পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠে। বিশাল রসমতি ঝিল, পাতলাখাওয়ার জঙ্গল ঘেরা রসমতিতে বন্যপ্রাণীর আনাগোনাও রয়েছে। ৫৫ ফুট উঁচু নজরমিনার বাড়তি আকর্ষণ। প্রকৃতির টানে সেখানে জেলার তো বটেই, বাইরের বাসিন্দারাও ছুটে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy