Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিল বাকি, বিদ্যুতে কোপ বিমানবন্দরে

ঢেলে সাজার জন্য মাটি পরীক্ষা-সহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম চলছে কোচবিহার বিমানবন্দরে। এই অবস্থায় সেখানে প্রায় আড়াই দিন ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল। কারণ, ৩২ লক্ষ টাকার বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়েছে।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৪ ০৯:০৮
Share: Save:

ঢেলে সাজার জন্য মাটি পরীক্ষা-সহ প্রয়োজনীয় কাজকর্ম চলছে কোচবিহার বিমানবন্দরে। এই অবস্থায় সেখানে প্রায় আড়াই দিন ধরে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রইল। কারণ, ৩২ লক্ষ টাকার বিদ্যুতের বিল বকেয়া পড়েছে। তাই গত ৪ মার্চ বিমানবন্দরে ঢুকে ১১ কেভি হাইটেনশন লাইন কেটে দিয়ে যান রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার দুই অফিসার। বিপাকে পড়ে যান বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ।

লাইসেন্সপ্রাপ্ত বিমানবন্দরের বিদ্যুৎ-সংযোগ আগাম নোটিস ছাড়াই এ ভাবে কেটে দেওয়ার নজির দেশে আর কোথাও রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিমানবন্দরের অফিসারেরা। কোচবিহারে এখন বিমান ওঠানামা করে না ঠিকই। কিন্তু সরকারি লাইসেন্স থাকায় নিয়মমতো প্রতিদিন দু’ঘণ্টা (বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা) চালু রাখতে হয় বিমানবন্দর। দিনের বেলা কোনও ছোট বিমান সেখানে জরুরি অবতরণ করতে চাইলে বা অন্য কোনও কারণে নামতে চাইলে তাকেও নামিয়ে আনতে হয়। সেই জন্য এনডিবি (নন-ডিরেকশানাল বেকন)-র মতো যন্ত্র বসানো হয়েছে ওই বিমানবন্দরে। গত মঙ্গলবার বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়ায় এনডিবি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যান্য যন্ত্র চালানো হয় জেনারেটরের সাহায্যে।

শুধু তা-ই নয়, দমকল, অ্যাম্বুল্যান্স, সাধারণ গাড়ি, ট্রান্সফর্মার ছাড়াও ছোট টার্মিনাল বিল্ডিংয়ের ভিতরে সিসিটিভি, কম্পিউটার-সহ অনেক যন্ত্রপাতি রয়েছে। বিদ্যুতের অভাবে কার্যত দু’রাত অন্ধকারে ডুবে ছিল কোচবিহার বিমানবন্দর। সেই অন্ধকারে ওই সব গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি খোয়া যেতে পারত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে খোঁজখবর শুরু হতেই এক ঘণ্টার মধ্যে তড়িঘড়ি বিমানবন্দরের সংযোগ ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা।

রাজ্য সরকার ওই বিমানবন্দরে নতুন করে টাকা ঢালার পরিকল্পনা করেছে। কোচবিহারের এখনকার ১০৬৯ মিটার লম্বা রানওয়েতে ছোট বিমান ওঠানামা করতে পারে। তবে মাঝারি মাপের বিমান ওঠানামার জন্য রানওয়ে আরও ৩৭০ মিটার বাড়াতে হবে। তার জন্য মাটি পরীক্ষা শেষ হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। দু’-এক মাসের মধ্যে রানওয়ে বাড়ানোর কাজ শুরু হয়ে যাওয়ার কথা। এই সন্ধিক্ষণে কিছু বকেয়া টাকার জন্য বিদ্যুতের লাইনে কোপ মারার ঘটনায় বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষ ও সরকার দু’পক্ষই বিব্রত।

বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ২৪ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে জানায়, বকেয়া ৩২ লক্ষ টাকা ১৪ মার্চের মধ্যে দিতে হবে। প্রশ্ন উঠেছে, ১৪ মার্চ পর্যন্ত সময় দেওয়া সত্ত্বেও ৪ মার্চ আচমকা বিদ্যুৎ-সংযোগ কেটে দেওয়া হল কেন? বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, ৪ মার্চ বেলা ২টো নাগাদ বণ্টন সংস্থার দুই অফিসার নিয়ম ভেঙে, রক্ষীর বারণ না-শুনে গাড়ি নিয়ে সটান ঢুকে পড়েন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর ভিতরে। তার পরে ১১ কেভি লাইন কেটে দিয়ে তাঁরা ফিরে যান।

১৪ মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েও তার আগে কেন লাইন কেটে দেওয়া হল, বণ্টন সংস্থা তার কোনও সদুত্তর দেয়নি। ওই সংস্থার চেয়ারম্যান নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, “আমরা বিষয়টি জেনেছি। আবার তো লাইন দেওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, বকেয়া টাকার ব্যাপারে রাজ্যের পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ী বলেন, “কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। আমরা সব স্তরে কথা বলে মেটানোর চেষ্টা করছি।”

বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষের দাবি, ২০০৭ সালে পরিবহণ দফতর লিখিত ভাবে বিমানবন্দর-কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছিল, কোচবিহারে বিদ্যুতের বিল রাজ্যই মেটাবে। তার পর থেকে বিল পৌঁছলেই তা জেলাশাসক মারফত পাঠিয়ে দেওয়া হতো রাজ্য সরকারের কাছে। রাজ্যই তা মিটিয়ে দিত। বিমানবন্দরের এক অফিসারের কথায়, “তা হলে ৩২ লক্ষ টাকার দায় আমাদের উপরে বর্তাবে কেন? সেটা তো রাজ্যেরই মিটিয়ে দেওয়ার কথা।”

রাজ্যের বক্তব্য, এই ব্যাপারে যে-চুক্তি হয়েছিল, সেটা দীর্ঘমেয়াদি ছিল না। সরকার চিরকাল কোচবিহার বিমানবন্দরের বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে যাবে, এটা ধরে নেওয়া ঠিক নয়। এই বিষয়ে ফের আলোচনা হবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। রাজ্যের পরিবহণসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার রাতে বলেন, “বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে কথা হল। রাতেই বিদ্যুৎ-সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে আমাদের জানানো হয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

sunanda ghosh cooch behar airport electric bill
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE