থমকে থাকা ট্রাকের সারি। বৃহস্পতিবার মালদহের মহদিপুর সীমান্তে মনোজ মুখোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবে একরকম অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মালদহের মহদিপুর সীমান্তে। গত সাতদিন ধরে এখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে পণ্য বোঝাই বহু ট্রাক। আমদানি ও রফতানি ব্যহত হওয়ায় কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। ওপার বাংলার সোনা মসজিদের পানামা বন্দরে বহু ট্রাক আটকে থাকায় চরম সমস্যায় পড়েছেন এপারের গাড়ি চালক ও খালাসিরা। ঘরে ফেরার আশায় মহদিপুর আন্তর্জাতিক সীমান্তে দিন গুনছেন তাঁরা। তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্দরে বাংলাদেশের অস্থিরতার কোনও প্রভাব পড়েনি বলে জানা গিয়েছে।
বৃহস্পতিবার মহদিপুর এক্সপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, “সাতদিন ধরে এই বাণিজ্য কেন্দ্রে আমদানি-রফতানির কাজ ধীর গতিতে চলছে। ওপার বাংলায় বহু পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে রয়েছে। এপার বাংলাতেও একই ছবি। আমাদের বহু চালক ও সহকারি চালকেরা বাংলাদেশে আটকে রয়েছে। তাঁদের খুবই সমস্যা হচ্ছে। আমরা সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি।” তিনি জানান, সাত দিনে কয়েক কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে।
গত পয়লা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। শাসক বিরোধীর সংঘাতের জেরে বাংলাদেশে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। রফতানিকারকরা জানিয়েছেন, ওপার বাংলার সোনা মসজিদের পানামা বন্দরে প্রায় ৩০০টি ট্রাক আটকে রয়েছে। এই সমস্ত ট্রাকে গম, চাল, ভুট্টা, শুকনো লঙ্কা প্রভৃতি পণ্য মজুত রয়েছে। এপার বাংলায় এই সীমান্ত কেন্দ্রে প্রায় দুশো’টি গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এরমধ্যে ৬০টি ফল ও ১০০টি পেঁয়াজ বোঝাই গাড়ি রয়েছে। সূত্রের খবর, গাড়ি পিছু দৈনিক দু’হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে মালিকদের।
ঘটনায় কোচবিহারের চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন ও চ্যাংরাবান্ধা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন উদ্বেগ প্রকাশ করলেও সেখানে এখনও পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক বলে দাবি করেছে। ওই দুটি সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা, পাথর, ফল, ও প্রসাধনী সহ প্রতিদিন গড়ে দুশো ট্রাক বাংলাদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে তুলো, মশারি, পানীয় সহ নানা সামগ্রী নিয়ে অন্তত ৫০টি ট্রাক এদেশে আসছে। এখনও ওই যাতায়াত কমেনি। তবে গোলমালের জেরে তিন দিন থেকে সীমান্ত পেরোনোর পরে বুড়িমারিতে এদেশের পণ্যবাহী সব ট্রাক দৈনিক পণ্য খালাস করে ফিরতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীদের বাড়তি ট্রাক ভাড়া গুনতে হচ্ছে। চ্যাংরাবান্ধা এক্সপোটার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অজয় প্রসাদ বলেন, “এ ভাবে টানা অচলাবস্থা চললে ট্রাকের সংখ্যা কমে যাবে।”
চ্যাংরাবান্ধা ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক জয়প্রকাশ গুপ্তা বলেন, “এখনও আমদানি-রফতানির কাজে যাতায়াতকারী ট্রাকের সংখ্যা কমেনি। তবে পরিস্থিতির দ্রুত স্বাভাবিক না হলে বাংলাদেশের পাঠানো পণ্যের চাহিদা কমবে। ফলে, উদ্বেগ তো রয়েইছে।”
বুধবারের মতই বৃহস্পতিবারেও দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পণ্য নিয়ে ট্রাক ঢুকেছে। হিলি কাস্টমস অ্যান্ড ক্লিয়ারিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক মন্ডল জানান, এদিন ৬০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক বাংলাদেশে গিয়েছে। হিলি বাণিজ্য বন্দরে আপাতত কোনও সমস্যা না থাকলেও পাশের জেলাগুলির আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্দরে আমদানি-রফতানি ব্যাহত হওয়ায় হিলি দিয়ে পণ্য রফতানিতে চাপ বাড়ছে। বালুরঘাটের পতিরাম থেকে হিলি এলাকার রাস্তার দুধারে শতাধিক ট্রাকের লম্বা লাইন পড়েছে। এতে যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জেলা পুলিশের তরফে পণ্য বোঝাই ট্রাকগুলিকে এলাকার ঠাকুরপুরা রাজ্য সড়কের ধারে পার্কিং করিয়ে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy