বাগডোগরা বিমানবন্দরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমি দ্রুত হস্তান্তরের ‘আশ্বাস’ দিল রাজ্য সরকার। গত শনিবার কুমারগ্রামের শরণার্থী শিবির পরিদর্শনের পর বাগডোগরা বিমানবন্দর হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ফেরেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ডুয়ার্স থেকে বাগডোগরায় পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী বিমানবন্দরের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব সঞ্জয় মিত্র-সহ অন্য অফিসারেরাও। এয়ারপোর্ট অথারিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) তরফে বিমানবন্দর অধিকর্তা রাকেশ সহায় তখনই মুখ্যমন্ত্রীকে জমির সমস্যার বিষয়টি জানান। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি মুখ্য সচিবকে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিমাবন্দরের ইনস্ট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম (আইএলএস), অ্যাপ্রোচ লাইট বসানোর জন্য ২৩ একর জমির প্রয়োজন। এর অধিকাংশ জমি ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে প্রশাসন অধিগ্রহণ করলেও তিনটি পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা বেশি চাওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে। প্রশাসন জমি এএআইকে হস্তান্তর করতে না পারায় আইএলএসের কাজ থমকে রয়েছে। এর জেরে প্রতি বছর বিশেষ করে শীতের সময় কম দৃশ্যমানতার জন্য একাধিক বিমান বাতিল হওয়ার ঘটনা ঘটে। এবারও একাধিক দিন বিমান বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। একদিন নয়টি বিমান বাতিল হয়। দুর্ভোগে পড়েন কয়েকশো বিমানযাত্রী।
বিমানবন্দর অধিকর্তা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা ফেরার পথে বিমানবন্দরের সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। জমির সমস্যার কথাও মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি। উনি দ্রুত জমিটি হস্তান্তর করার আশ্বাস দিয়েছেন।” তিনি জানান, প্রতিবছর প্রায় ৫০ শতাংশ হারে ট্রাফিক বাড়ছে বাগডোগরায়। বিমানও বাড়ছে। টাটা ভিস্তারার মতো বিমান রাজ্যে বাগডোগরা থেকেই চলবে। সবই মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছি।
এক সপ্তাহ আগেই এএআই-র ইস্টার্ন রিজিওয়নের আঞ্চলিক অধিকর্তা শুদ্ধসত্ত্ব ভাদুড়ির নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দল বাগডোগরায় আসেন। দুই দিন ধরে তাঁরা বিমানবন্দরের পরিকাঠামোগত দিক খতিয়ে দেখেন। বাগডোগরা থেকে তিনি কলকাতায় সরকারের সচিব পর্যায়ে যোগাযোগ করে জমি হস্তান্তরের কথা জানান। এএআই-র কয়েকজন অফিসার জানান, সেই সময় রাজ্য সরকারের তরফে নতুন বছরের মধ্যে জমি জট কাটানোর আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলে গেলেন। দ্রুত ব্যবস্থা না নেওয়া হলে ভাল, নইলে যাত্রীদের ভোগান্তি তো চলতেই থাকবে।
দার্জিলিঙের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি সংস্কার) রচনা ভকত বলেন, “আমরা জমির সমস্যা অনেকটাই মিটিয়ে ফেলেছি। অধিকাংশ জমিই আমাদের হাতে রয়েছে। তিনটি পরিবার বেশি ক্ষতিপূরণ চাইছে। আশা করছি, নতুন বছরেই সমস্যা মিটবে।” এডিএম জানান, সরকারি নিয়ম মেনে ওই এলাকায় জমি মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি জমির মালিকের সঠিক খোঁজ মিলছিল না। ক্ষতিপূরণের সেই টাকা ট্রেজারিতে রাখা হচ্ছে।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে প্রশাসনের তরফে আপাতত অধিগ্রহণ হয়ে থাকা ১৯ একরের মতো জমি এএআই কর্তৃপক্ষকে নিয়ে নেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু পুরো জমি না পেলে তা সম্ভব নয় বলে এএআই জানিয়ে দিয়েছে। জমিতে থাকা একটি রাস্তা সরিয়ে বিমানবন্দরের অন্য পাশে আনার প্রশাসনের প্রস্তাব এএআই মেনে নিয়েছে। বিমানবন্দর অধিকর্তা জানান, জমিটি পেলেই তাঁরা তা বায়ুসেনার হাতে তুলে দেবেন। জমি পেলে ৩-৪ মাসের মধ্যেই কাজ হয়ে যাবে। তাতে খারাপ আবহাওয়া ছাড়াও রাতেও বিমান পুরোদমে ওঠানামা করতে পারবে।
বায়ুসেনার অধীনে থাকা বিমানবন্দরের ‘ওয়াচ আওয়ার’ বর্তমানে রাত ১০টা অবধি করা হয়েছে। এ ছাড়া টার্মিনাল ভবন সংস্কার করে ডোমেস্টিক ও ইন্টারন্যাশনালের চেক ইনের আলাদা গেট, সিকিউরিটি চেকের আলাদা ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। বাইরে তৈরি হবে নতুন রেস্তোরাঁ ভবনও। সেই সঙ্গে নতুন টার্মিনাল ভবন, পার্কিং-সব যাবতীয় ব্যবস্থার জন্য সামনের অংশের আরও ৮০ একর জমি চেয়ে রাজ্যকে চিঠিও দিয়েছেন এএআই কর্তৃপক্ষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy