Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

পরপর তিন মেয়ে, বধূকে পিটিয়ে ‘খুন’

পরপর তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় এক বধূকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী এবং শ্বশুরের বিরুদ্ধে। মালদহের কালিয়াচক থানার বৈরগাছি এলাকায় ওই বধূকে গত বৃহস্পতিবার ভোটের দিন দুপুরে মারধর করা হলে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার ভোরে তিনি মারা যান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৪ ০০:৪৯
Share: Save:

পরপর তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেওয়ায় এক বধূকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠেছে স্বামী এবং শ্বশুরের বিরুদ্ধে। মালদহের কালিয়াচক থানার বৈরগাছি এলাকায় ওই বধূকে গত বৃহস্পতিবার ভোটের দিন দুপুরে মারধর করা হলে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল। শনিবার ভোরে তিনি মারা যান। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম মাসকুরা বিবি (২৬)। বধূর মৃত্যুর পর এ দিন দুপুরে পরিবারের লোকেরা পুলিশে অভিযোগ জানান। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত স্বামী এবং শ্বশুর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

মালদহের পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে.।” পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, কালিয়াচকের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা মাসকুরা বিবির সঙ্গে আট বছর আগে বিয়ে হয় বৈরগাছি এলাকার রশিদ শেখের। পেশায় ইটভাটার শ্রমিক রশিদ মাঝেমধ্যে ভিনরাজ্যেও কাজ করতে যান। স্বামী ছাড়া বাড়িতে রয়েছেন শ্বশুর সামসের শেখ। অভিযোগ, মাসকুরা বিবি পরপর দুটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার পর থেকেই স্বামী এবং শ্বশুর তাঁর উপর নির্য়াতন শুরু করেন। কেন পরপর দুটি কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন সেই প্রসঙ্গ তুলে হামেশাই মাসকুরাকে মারধর করা হত। ওই দম্পতির বড় মেয়ের বয়স সাড়ে তিন বছর, দ্বিতীয় কন্যাসন্তানের বয়স দু বছর। আর ছোট মেয়ের বয়স দেড় মাস।

পুলিশ এবং বধূর পরিবার সূত্রে জানা যায়, মাসকুরা বিবি তৃতীয়বার সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর থেকেই তাঁর উপরে নির্য়াতনের মাত্রা বেড়ে যায়। এ বার পুত্র সন্তান না-হলে তাঁকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এমনকী তালাক দেওয়া হবে বলেও প্রতিনিয়ত তারা হুমকি দিনের বলে অভিযোগ। হুমকি আর অত্যাচারে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অন্তঃসত্ত্বা মাসকুরা বিবি মাস তিনেক আগে বাপের বাড়িতে চলে যান। দেড়মাস আগে তার ফের কন্যাসন্তান হয়। তা জেনে মাসকুরাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে আর আগ্রহ দেখাননি স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। বধূর দাদা মাহিবুর শেখ মাসকুরার স্বামী ও শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করে অনুরোধ করে সপ্তাহখানেক আগে বোনকে শ্বশুরবাড়িতে রেখে আসেন।

পরিজনেরা জানান, শ্বশুরবাড়িতে এর পর থেকেই তাঁর উপর প্রচণ্ড নির্য়াতন করা হচ্ছে করছে বলে ফোনেও দাদাকে বিষয়টি জানিয়েছিলেন মাসকুরা। এমনকী তাঁকে ও মেয়েদের অনেক সময়ই খেতে দেওয়া হত না বলেও জানিয়েছিলেন। নির্বাচনের দিন স্বামী ও শ্বশুর মিলে মাসকুরাকে বেধড়ক পেটান বলে অভিযোগ। এরপরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে ভেবে পালিয়ে যায় তারা। মাসকুরাকে অচেতন অবস্থায় গ্রামবাসীরাই হাসপাতালে ভর্তি করান। ভর্তির পর থেকেই অচেতন হয়েছিল মাসকুরা। শুক্রবার কিছু সময়ের জন্য তার জ্ঞান ফিরেছিল। ওই সময় দাদাকে জানায় যে তাঁকে বেধড়ক পেটানো হয়েছে। এ দিন তার মৃত্যুর পর কালিয়াচক থানায় অভিযোগ জানান দাদা মাহিবুর। মাহিবুর বলেন, “আমাদের কষ্টে সংসার চলে। তাই বোন ও ওর স্বামী দু’জনকেই বুঝিয়ে ওকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠাই। খেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে আমাকে ও নিয়ে আসতেও বলেছিল। শুধু মেয়ে হওয়ার অপরাধে ওকে যে ওরা মেরে ফেলবে ভাবিনি।”

অন্য বিষয়গুলি:

chachol domestic violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE