ফিরোজের মৃত্যুর খবর পেয়ে অভিযুক্তদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়
মোটরবাইক কেনার জন্য শো-রুমে অগ্রিম দিয়েছিলেন এক যুবক। সেই সময় তাঁর সঙ্গে থাকা বন্ধুরা জানত অগ্রিম দিয়েও হাজার চল্লিশ টাকা রয়েছে যুবকের কাছে। পরিবারের দাবি, সেই টাকার লোভেই পিকনিক করার নামে এক বন্ধুর বাড়িতে ডেকে গুলি করে খুন করা হয় মহম্মদ ফিরোজ শেখকে (২১)। মালদহের কালিয়াচকের নয়াগ্রামে শুক্রবার রাতে ওই ঘটনার পরে গ্রামবাসীর হাতে ধরা পড়ে যায় ফিরোজের দুই বন্ধু। তবে ফিরোজকে গুলি করে, তাঁর টাকা নিয়ে পালিয়েছে ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত মহম্মদ সাহেদ।
ফিরোজ-খুনের কথা চাউর হতে শনিবার সকালে উত্তেজিত গ্রামবাসী অভিযুক্ত তিন যুবকের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেন। কালিয়াচক থানার পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। জেলার পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ফিরোজের দুই বন্ধুমহম্মদ রকি এবং মহম্মদ নুরউদ্দিনকে ধরা হয়েছে। পলাতক সাহেদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
স্থানীয় সূত্রের খবর, নয়াগ্রামের বাসিন্দা ফিরোজ ও তার তিন বন্ধু দিল্লিতে শ্রমিকের কাজ করত। সপ্তাহখানেক আগে তারা গ্রামে ফেরে। ফিরোজের বাবা মহম্মদ শাজাহান মাছ ব্যবসায়ী। তিনি জানান, ফিরোজ তাঁর কাছে একটি মোটরবাইক চেয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, বাবার থেকে মোট ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে ফিরোজ সাহেদ, রকি এবং নুরউদ্দিনের সঙ্গে কালিয়াচক সদরে শো-রুমে গিয়ে মোটরবাইক পছন্দ করে অগ্রিম পাঁচ হাজার টাকা দেন। শো-রুম থেকে বেরিয়ে চার বন্ধু প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে জালালপুরে ফিরোজের মামা বাড়িতে যায়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে ফিরোজ জানান, তাঁর মোটরবাইক কেনার খুশিতে পিকনিকের প্রস্তাব দিয়েছে বন্ধুরা। রকির বাড়িতে রাতে খাওয়াদাওয়া হবে। তিনি সেখানেই যাচ্ছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ রকির বাড়ি থেকে পর-পর তিনটে গুলির শব্দ পান গ্রামবাসীরা। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখেন, ঘরের ভিতরে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ফিরোজ। তাঁর বুকে দু’টি এবং গলায় একটি গুলি করা হয়েছে। রকি এবং নুরউদ্দিন পালানোর চেষ্টা করলেও স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের ধরে ফেলে, একটি ঘরে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন। মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিত্সকেরা ফিরোজকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
নিহত মহম্মদ ফিরোজ শেখ
ফিরোজের বাবা মহম্মদ শাজাহানসাহেদ, রকি এবং নুরউদ্দিনের নামে কালিয়াচক থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি বলেন, “ছেলের কাছে থাকা টাকা কাড়ার মতলবে ছিল ওর তিন বন্ধু। সে জন্যই ওকে খুন করেছে ওরা।”
পুলিশ সূত্রের দাবি, ধৃতদের জেরা করে তারা জেনেছে, ফিরোজের কাছ থেকে টাকা কাড়ার মূল ছক ছিল সাহেদের। সে একটি দেশি পিস্তলও জোগাড় করেছিল।
রকির বাড়িতে শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ মাংস-ভাত খাওয়ার পরে, মোটরবাইকের টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য ফিরোজকে চাপাচাপি শুরু করে সে। ফিরোজ বেঁকে বসেন। তখন তিন বন্ধুর সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সেই সময়ে সাহেদ ফিরোজকে গুলি করে বলে অভিযোগ। ফিরোজ লুটিয়ে পড়তে তাঁর পোশাক হাতড়ে টাকার বান্ডিল বার করে নিয়ে সাহেদ পালায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy