Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

প্রাণ বাঁচাতে পাঁচিল টপকে রক্ত দিতে গিয়েছিলেন সুনু

শহরের দিপালীনগর এলাকার সুকোমল সাহাকে অবশ্য মনে রাখার কারণ অনেক। তাঁর রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ। যা খুবই কম পাওয়া যায়।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

অনুপরতন মোহান্ত
বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৫৯
Share: Save:

তখন গভীর রাত। বাড়ির পাঁচিল টপকে হাসপাতালে গিয়েছিলেন তিনি। অনেকদিন আগের ঘটনা। কিন্তু রক্ত দিয়ে একজনের প্রাণ বাঁচানোর জন্য এই ঘটনা এখনও মনে রেখেছেন বালুরঘাটের অনেকে।

শহরের দিপালীনগর এলাকার সুকোমল সাহাকে অবশ্য মনে রাখার কারণ অনেক। তাঁর রক্তের গ্রুপ ও নেগেটিভ। যা খুবই কম পাওয়া যায়। এখনও পর্যন্ত ৬২ বার রক্তদান করে নজির করেছেন সুকোমলবাবু। শুধু নিজের এলাকাই নয়, কলকাতা, বহরমপুরের একাধিক মুমূর্ষু রোগীকে নিজের রক্ত দিয়ে বাঁচিয়েছেন তিনি। সুকোমলবাবুকে বালুরঘাট শহরের লোক সুনু নামেই বেশি চেনে। তপন ব্লকের সেচবিভাগের ওই কর্মীর বয়স এখন ৫২। বয়স হওয়ায় রক্তদানের সময় বাড়ির লোক মৃদু আপত্তি করে ঠিকই। তবে তাতে যে তিনি বিশেষ পরোয়া করেন না তাও সটান জানিয়ে দিলেন তিনি।

প্রাণ বাঁচানোর সুকোমলের বহু কীর্তির কথা আজও মনে রেখেছেন অনেকে। তাঁদেরই একজন শহরের সাড়ে তিন নম্বর মোড়ের অলোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ‘‘রাত তখন ১২টা। দুর্ঘটনায় জখম এক পরিচিতের জন্য ও নেগেটিভ রক্তের দরকার। ঘুম থেকে উঠে হাসপাতালে দৌড়েছিল সুনু।’’ শহরেরই এক ব্যবসায়ী প্রকাশ কর্মকারের দোকানের এক শ্রমিক দুর্ঘটনায় পড়েছিলেন। প্রকাশের বক্তব্য, ‘‘সুনুদা রক্ত না দিলে ওই শ্রমিককে বাঁচানোই যেত না।’’

বাড়িতে স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার সুকোমলবাবুর। তাঁর কথায়, ‘‘প্রথম এক আত্মীয়ের জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে রক্ত দিয়েছিলাম। সেই রক্ত লাগেনি। পরে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে আমাকে বলা হয়। ‘ও নেগেটিভ’ বলে রেখে দেওয়া হলো। সচরাচর এই রক্ত মেলেনা। সাবধানে থাকবেন।’’ একবার কলকাতায় চিকিৎসাধীন স্থানীয় এক রোগীকে ও-নেগেটিভ রক্ত দেওয়ার প্রয়োজনে বালুরঘাট হাসপাতালে এনে ভর্তি করে সুকোমলের ডাক পড়ে।

নিজের রক্তের গ্রুপের জন্য সমস্যাতেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। সচরাচর ওই গ্রুপের রক্ত মেলে না বলে আরটিও অফিসার তাঁকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে চাননি। শেষে একটু আধটু দাদার স্কুটার চালানোর কথা বলে লাইসেন্স মেলে। সুকোমলবাবু জানান, ১৯৯৪-তে রক্ত পেয়ে বহরমপুরের এক মহিলা জোর করে একটি অ্যাটাচি উপহার দিয়েছিলেন। কিন্তু রোগীর আত্মীয়দের অগাধ ভালোবাসা পেয়েই তিনি খুশি। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধীর ব্লাড গ্রুপ ছিল ও নেগেটিভ। তাঁর সঙ্গে ৫ জন ব্লাড ডোনার সবসময় থাকতেন।

রাজীবের সচিবালয় থেকেও রক্তের জন্য প্রস্তুত থাকতে একবার চিঠি পাঠানো হয়েছিল সুকোমলবাবুকে। যদিও ওই পুরনো চিঠি তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। বালুরঘাট হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুকান্ত মান্না বলেন, ‘‘ও-নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত সচরাচর মেলে না। দাতাকেও নিজের প্রয়োজনের জন্য সাবধান থাকতে হবে।’’ কিন্তু নিজের রক্তের প্রয়োজন হলে কী হবে? শুনে হাসেন সুকোমলবাবু। বলেন, ‘‘মালদহ, রায়গঞ্জ, বুনিয়াদপুর এলাকায় তাঁর গ্রুপের তিন জনের ঠিকানা একসময় ছিল।’’ তাঁর কাজকে দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন ব্লাডডোনার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি সুশান্ত কুণ্ডুও।

অন্য বিষয়গুলি:

O negative blood Donation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy