Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
অভিযোগ, প্রতিবাদ করলে কাজ মেলে না
Not Equal Payment

অর্ধেক পারিশ্রমিক ‘অর্ধেক’ আকাশের

শুধু হবিবপুরই নয়, বেতনে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে মালদহ জেলা জুড়েই। এখন জেলায় ধান কাটার কাজ চলছে।

হাবিবপুর বাস স্ট্যন্ড থেকে কর্মক্ষেত্র যাওয়ার জন্য ভিড় মহিলাদের।

হাবিবপুর বাস স্ট্যন্ড থেকে কর্মক্ষেত্র যাওয়ার জন্য ভিড় মহিলাদের। নিজস্ব চিত্র।

অভিজিৎ সাহা
হবিবপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২৪ ০৯:১২
Share: Save:

সকাল ৭টা। হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে শতাধিক মহিলা। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে ভিড় দ্বিগুণ। কেউ টোটো, কেউ হেঁটে ছাড়তে শুরু করলেন এলাকা। স্ট্যান্ডে জনা দশেক মহিলার সঙ্গে দাঁড়িয়ে হবিবপুরের জাজইল পঞ্চায়েতের ভবানীপুরের চল্লিশোর্ধ্ব সানজিনি সোরেন।

দাঁড়িয়ে কেন? সানজিনি বলেন, “দিনভর জমিতে ধান কাটলে ছেলেদের ৪০০-৪৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। অথচ, সেই কাজে আমাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ২৫০-২৭৫ টাকা। মজুরি বাড়ানোর কথা বলায় আমার কপালে কাজ জোটেনি।” কাজ না মেলায় মুখ শুকনো করে সানজিনির পাশে দাঁড়িয়ে ভবানীপুরেরই সরলা সরকার। তিন বছর আগে, তাঁর স্বামী মারা গিয়েছেন। মাঠে-ঘাটে পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাধ মিলিয়ে দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করছেন বছর পঁয়ত্রিশের সরলা। তিনি বলেন, “মেয়েদের মজুরি কম। সে আপনি ধানই কাটুন বা নির্মাণ শ্রমিকের কাজ, পুরুষদের প্রায় অর্ধেক মজুরি পাবেন।” আক্ষেপের সুরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মহিলা বলে চাল, ডাল, আনাজ কি আমাদের কম দামে দেওয়া হবে?’’

শুধু হবিবপুরই নয়, বেতনে বৈষম্যের অভিযোগ রয়েছে মালদহ জেলা জুড়েই। এখন জেলায় ধান কাটার কাজ চলছে। ধান কাটা, ঝাড়াই, মজুত করে বস্তাবন্দি করা, সব কাজই পুরুষদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে করতে দেখা যাচ্ছে মহিলাদের। তবে মজুরি পুরুষদের মতো না মেলায় ক্ষোভের চোরাস্রোত বইছে মহিলা মহলে। বুলবুলচণ্ডীর শম্পা সিংহ বলেন, “মহিলাদের অর্ধেক আকাশ বলা হয়। এখন দেখছি, মহিলাদের অর্ধেক বেতন দেওয়া হচ্ছে। অথচ, পুরুষদের মতোই সমপরিমাণে কাজ করছি।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জমির মালিক বলেন, “এক জন পুরুষ যত দ্রুত এক বিঘা জমির ধান কাটতে পারবেন, তা এক জন মহিলার পক্ষে সম্ভব নয়। কাজে মহিলাদের ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা থাকে। কাজ শেষের আগে বাড়ি ফেরার তাড়া থাকে তাঁদের।” মেয়েরা কাজে ফাঁকি দিলে কেন তাঁদের দিয়ে জমিতে কাজ করানো হচ্ছে, পাল্টা প্রশ্ন পুরাতন মালদহের বিমলা দাসের। তিনি বলেন, “যে কোনও উপায়ে মেয়েদের মজুরি কম দিতে হবে। তাই কাজে ফাঁকি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।” তিনি বলেন, “ভোটে লক্ষ্মীর ভান্ডার, অন্নপূর্ণা ভান্ডার, মহালক্ষ্মী ভান্ডার প্রকল্পে হাজার হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে প্রচারে কারও মুখে কোনও কথা শোনা যায়নি।” সমকাজে মহিলাদের সমবেতনের দাবিতে সরব একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও। এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেত্রী জয়শ্রী কর্মকার বলেন, “ধান, নির্মাণ, বিড়ি শ্রমিকের কাজেও মহিলাদের মজুরি কম দেওয়া হয়। অথচ, এক জন মহিলা পুরুষের সমশ্রম দেন। যত্ন এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেন। আমরা প্রশাসনের দারস্থ হব।” গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা রুনু দাস বলেন, “মহিলাদের সমকাজে সমমজুরির দাবিতে একাধিক বার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। কাজের কাজ কিছু হয়নি।” শ্রম দফতরের তরফে মালদহের জয়েন্ট কমিশনার তানিয়া দত্ত বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি শুভদীপ স্যানালের বক্তব্য, “মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আমরা সব সময়ে মহিলাদের পাশে আছি। প্রয়োজনে, পথেও নামব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Malda Habibpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy