Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Migrant Workers

‘গ্রামে অন্তত কচুপাতা খেতেও পাব’

নিজের এলাকায় কাজ জোটেনি। ঘরে  নিত্য অভাব। আর তাই সংসারের একটু হাসিমুখ দেখতে পাড়ি দিয়েছিলাম রাজস্থানে।

ঘরের পথে: শুক্রবার কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র

ঘরের পথে: শুক্রবার কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র

মদন কিস্কু
হেমতাবাদ (উঃ দিনাজপুর)  শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০২০ ০৬:১০
Share: Save:

সংসারের নিত্য অভাব থেকে মুক্তি পেতে স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে এক বছর আগে পাড়ি দিয়েছিলাম রাজস্থানে। সেখানে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতাম। আমাদের সঙ্গে আমার আরও দুজন আত্মীয় গিয়েছিলেন। কাজ সেরে ঘরে ছেলেপুলেদের হাসিমুখ দেখে দিনের ক্লান্তি শেষে স্বস্তি পেতাম। সবই ঠিক চলছিল। কিন্ত হঠাৎ করোনাভাইরাসের থাবা। তার জেরে লকডাউন। কিন্ত এই ভাইরাস আদৌ কী, তা এখনও আমাদের কাছে অজানা। প্রথম লকডাউন পর্ব পর্যন্ত ঠিকই চলছিল। মনে হয়েছিল, লক ডাউন উঠে গেলে কাজ ফিরে পাব। কিন্তু দ্বিতীয় লকডাউনে জমানো টাকা ধীরে ধীরে ফুরিয়ে যেতে শুরু করে। ঠিকাদার প্রথম দিকে কিছু খাবার দিয়েছিলেন। তার পর আর যোগাযোগ হয়নি। এক দিকে খাবার অভাব। অন্য দিকে ভাড়া দিতে না পাড়ায় ঘর ছাড়তে বললেন বাড়ির মালিক।

বাধ্য হয়ে পথে নামলাম। উপায় তো নেই। সঙ্গে আমাদের এলাকার আরও তিন জন ছিলেন। রাজস্থান থেকে রওনা দিলাম উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের বাড়ির উদ্দেশে। কখনও হাঁটছি, কখনও লরি ধরে কিছুটা পথ গিয়েছি। কখনও গ্রামের ধান খেত দিয়ে পথ চলা। কখনও পিচ ঢালা আগুন রাস্তা। পথে কোথাও পুলিশ লাঠি নিয়ে ধাওয়া করেছে। আবার কোথাও পুলিশ খাবার হাতে দিয়ে লরিতে উঠিয়ে দিয়েছে। এই ভাবে দশ দিনে নিজের জেলায় ফিরলাম।

নিজের এলাকায় কাজ জোটেনি। ঘরে নিত্য অভাব। আর তাই সংসারের একটু হাসিমুখ দেখতে পাড়ি দিয়েছিলাম রাজস্থানে। কিন্তু সঙ্কট থেকে মুক্তি পেতে নতুন করে যে আরও এক সঙ্কটের শিকার হতে হবে, তা কোনও দিন ভাবিনি। লকডাউন ফের আমাদের মতো দিনমজুরদের নতুন করে সমস্যায় ফেলে দিল। এর পর লকডাউন উঠলে কি রাজস্থানে ফিরে যাব, নাকি থাকব নিজের রাজ্যে— এই প্রশ্নটাও এসে গিয়েছে জীবনে।

অনেকে জানতে চেয়েছেন, এতটা পথ হেঁটে ফিরলাম কেন? উপায় ছিল না। লকডাউনে কাজ বন্ধ। ঘর ভাড়ার দেওয়ার টাকা নেই। খাবার নেই। কী ভাবে থাকব? তাই ভাবলাম নিজের গ্রামে ফিরলে অন্তত কচু পাতা খেয়ে তো বেঁচে থাকব।

জানি এলাকায় কাজ পাওয়া আরও সমস্যার। গোটা পথ চলতে চলতে শুধু সে কথা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। পথ চলতে ক্লান্ত শরীরে যখন দুই ছেলের দিকে তাকাচ্ছিলাম, চোখের জল আটকাতে পারিনি। আমাদের দেখে তারা হয়তো মনোবল খুঁজে পেয়েছিল। পায়ে ফোস্কা পড়ে গিয়েছে, তবুও হাঁটা থামেনি।

এখন সব সময় শুধু একটাই কথা বলি, হে ঈশ্বর, সবাইকে সুস্থ করে দাও, সবাইকে ভাল রাখ। সব কিছু যেন আমার আগের মতো হয়ে যায়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy