Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

কয়েকশো কিমি হেঁটে ফিরলেন বাদলরা

খলিসা গোসানিমারির এক ফালি জমিতে ছোট্ট ঘর বাদলের। তিন ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে। ওই গ্রাম ও পাশের এলাকার অনেকেই ভিন্ রাজ্যে কাজে যান।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নমিতেশ ঘোষ
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২০ ০১:১৫
Share: Save:

কখনও পুলিশ তাড়া করেছে। কখনও অভুক্ত অবস্থাতেই পাড়ি দিতে হয়েছে মাইলের পর মাইল পথ। কখনও আবার খাবার এগিয়ে দিয়েছেন স্থানীয় মানুষ। এ ভাবেই টানা বারো দিন ধরে পথ চলে লকডাউনের মধ্যে হরিয়ানার গুরুগ্রাম থেকে কোচবিহারের বাড়িতে ফিরলেন আট জন নির্মাণ শ্রমিক।

এই দলেই রয়েছেন খলিসা গোসানিমারির বাদল হালদারও। তিনিই শোনাচ্ছিলেন ঘরে ফেরার গল্প। বলছিলেন, ‘‘কাগজেকলমে হিসেব না থাকলেও কমপক্ষে ছ’শো কিলোমিটার হেঁটেছি আমরা। কিছুটা পথ পুলিশের গাড়িতে, কিছুটা আলু বোঝাই গাড়িতে এসেছি।’’ গুরুগ্রাম থেকে কোচবিহার দেড় হাজার কিলোমিটারেরও বেশি পথ। আট জন মিলে কী ভাবে সেই পথ পার হলেন, সেটাই এখন এলাকায় গল্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর কর্মীরা বাদলদের হোম কোয়রান্টিনে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বাদল বলেন, “স্ত্রী, তিন ছেলেমেয়েকে নিয়ে আমার সংসার। নিত্য অনটন লেগেই থাকে। ভেবেছিলাম কিছু টাকা রোজগার করে বাড়ি ফিরব। কিছুই হল না। যা টাকা ছিল সবই শেষ। এখন চলব কী করে, কে জানে!”

খলিসা গোসানিমারির এক ফালি জমিতে ছোট্ট ঘর বাদলের। তিন ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়াশোনা করে। ওই গ্রাম ও পাশের এলাকার অনেকেই ভিন্ রাজ্যে কাজে যান। তাঁদের কাছে বেশি টাকার গল্প শুনে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে গুরুগ্রাম যান বাদল। কিন্তু বিধি বাম। দিন কয়েক যেতে না যেতেই করোনাভাইরাসের আতঙ্কে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে। লকডাউনের পরে গোটা এলাকায় নিস্তব্ধতা নেমে আসে।

বাদল জানান, সে দিন ছিল ২৭ মার্চ। পুলিশের গাড়ি গিয়ে দাঁড়ায় তাঁদের ঝুপড়ি ভাড়া বাড়ির সামনে। কয়েক জন পুলিশকর্মী নেমে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এলাকা ছাড়তে হবে। এক মুহূর্তে দেরি না করে যার হাতে যা ছিল, তা নিয়েই রওনা হয়ে পড়েন তাঁরা। পুলিশই একটি গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের।

বাদল জানান, প্রায় ছ’ঘণ্টা গাড়িযাত্রার পরে একটি রাস্তার ধারে নামিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের। তার পর শুরু হয় হাঁটা। নাগাড়ে অন্তত একশো কিলোমিটার হেঁটে উত্তরপ্রদেশ ছাড়িয়ে বিহারে ঢুকে একটি আলুর ট্রাক পেয়ে যান তাঁরা। তাতে যান অনেকটা পথ। বাদল বলেন, “সেই সময় কী করে কেটেছে জানি না। সব রাস্তা আমরা চিনি না। ভগবানের ভরসায় এগোতে থাকি।’’

বিহারের দ্বারভাঙার কাছে একটি পরিবার তাঁদের অবস্থা বুঝতে পেরে কিছুটা খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, “মাঝে মাঝে রাস্তায় ঘুমিয়ে পড়েছি। পকেটে পাঁচশো টাকা ছিল। চা-বিস্কুট খেতে খেতে তা কখন শেষ হয়ে গিয়েছে, বুঝতে পারেনি।” শিলিগুড়ি থেকে কপর্দকশূন্য অবস্থায় কোচবিহারে পৌঁছন তাঁরা।

হাড়িভাঙায় বাদলকে দেখতে পান স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শঙ্কর দেবনাথ। তিনি বলেন, “ওই মানুষটির পিঠে একটি বড় ব্যাগ ছিল। হাঁটতে পারছিলেন না। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি, পকেটে এক পয়সাও নেই। একটি টোটো তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দেয়।” বাদলের প্রতিবেশী রাজা মোহান্ত বলেন, “বাড়ির মধ্যেই এক কোনার ছোট্ট ঘরে বাদল এখন রয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Coochbehar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy