তেমনই: আজও বরোলি খেলা করে তোর্সার জলে। কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র
নদী ফুলেফেঁপে উঠতে শুরু করেছে। স্রোতে ভেসে চলেছে কচুরি পানা, দুই-একটি কাঠের টুকরো। ঝাঁপি জাল হাতে সারি সারি মানুষ ছুটছেন। চর এখনও ডোবেনি। তাই দেখে খুশি ওঁরা। মাছের বড় বড় হাঁড়ি সাইকেলে বেঁধে বাঁধের রাস্তা ধরে বাড়ি ফিরছিলেন প্রবীণ বীরেন দাস। ঠোঁটের কোনে হাসি। বললেন, “সেই ছোটবেলায় যেমন দেখেছিলাম, নদী যেন তেমনই হয়ে উঠেছে। বরোলি আবার খেলা করছে জলে। জালেও পড়ছে।”
বরোলি যেমন তিস্তায় মেলে, তেমনই মেলে তোর্সাতেও। খাদ্যরসিকদের কথায়, দুই নদীর বরোলির স্বাদ আলাদা। একসময় তোর্সা জুড়েই দেখা মিলত বরোলি মাছের। হাজার হাজার মানুষ এই রুপোলি শস্যের উপরে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। কিন্তু একসময়ের এই খরস্রোতা নদী ধীরে ধীরে শীর্ণকায় হয়ে পড়ে। জল-রেখা ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে যায়। মাছেরাও হারাতে শুরু করে। একসময়ে শুশুকের দেখা মিলত, তারাও উধাও হয়ে যায়।
তোর্সার ফাঁসিরঘাটে চায়ের দোকান মজিদ মিয়াঁর। ‘চাচা’ বলে ডাকেন সবাই। দিনভর তাঁর দোকানে চলতে থাকে ভাওয়াইয়ার সুর। বেজে ওঠে, “তোর্সা নদীর উথাল-পাতাল কার বা চলে নাও।” অনেক ভাঙা-গড়ার সাক্ষী তিনি। তাঁর চোখের সামনেই তোর্সা কাউকে নিঃস্ব করেছে। কেউ বেঁচে রয়েছে সেই তোর্সাকে ঘিরেই। তিনি বলেন, “নদী এখন অন্যরকম। কী সুন্দর টলটলে জল! কতবছর এমন দেখেনি।’’
কোচবিহার জেলা সদরের ঠিক পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে তোর্সা। শহর আর নদীর মাঝে একটি সীমারেখা টেনেছে বাঁধ। সেই বাঁধ ঘেঁষেই নদীর জেগে ওঠা চরে বসতি গড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের রোজকার যাপন তোর্সা জুড়েই। তাঁদের একজনের কথায়, “তোর্সার জলই আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। এত দিন পানীয় জল দূর থেকে টেনে আনতাম। তবে এবারে যে জল পেয়েছি, বলা চলে তা পানযোগ্য।” কবি ও শিক্ষক নীলাদ্রী দেবের বাস এই শহরে। তিনি বলেন, “ওই নদীই তো আমাদের অক্সিজেন।”
নদীতে স্রোত বেড়েছে, কিন্তু তা এখনও চরের বেশির ভাগটাই ছুঁতে পারেনি। চরের কাছে গেলেই স্পষ্ট হয়ে উঠবে, কলা বাগানের ছবি। সেখানে তরমুজ বাগানও তৈরি করেন চাষিরা। কোথাও হয়েছে বোরো ধানের চাষ। কালীঘাটের সুকোমল রাজভর বলেন, “এবারে তো তরমুজের চাষ খুব ভাল হয়েছে। আমরা কিছু পয়সাও পেয়েছি।” তোর্সার ঠিক পাশেই রবীন দাসের বাড়ি। যুবক রবীনের কথায়, “ছোটবেলায় বাবা-কাকাদের সঙ্গে নৌকায় চেপে তোর্সায় মাছ ধরতে গিয়েছি। মাঝের কতগুলি বছর আর সেই তোর্সা চোখে পড়ত না। অনেক দিন দেখলাম, নদীর রূপ খুলেছে। শুশুকও আবার আসতে শুরু করেছে।’’
এই ভাবেই আলাদিনের জিনের ছোঁয়ায় যেন বদলে যাচ্ছে নদী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy