Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

শ্রমিক গ্রেফতারে তেতে উঠেছে হান্টাপাড়া বাগান

দুই ম্যানেজারকে ভোজালির কোপে জখম করার অভিযোগে এক শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে। তা নিয়ে আরও তেতে উঠেছে মাদারিহাটের হান্টাপাড়া চা বাগান।

হান্টাপাড়া চা বাগানে জল মেলে মাত্র এক ঘণ্টা। পঞ্চায়েত দফতরের সামনে জল নিতে লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

হান্টাপাড়া চা বাগানে জল মেলে মাত্র এক ঘণ্টা। পঞ্চায়েত দফতরের সামনে জল নিতে লাইন। —নিজস্ব চিত্র।

নিলয় দাস
মাদারিহাট শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৫ ০২:৪৩
Share: Save:

দুই ম্যানেজারকে ভোজালির কোপে জখম করার অভিযোগে এক শ্রমিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আরও কয়েকজনের খোঁজ চলছে। তা নিয়ে আরও তেতে উঠেছে মাদারিহাটের হান্টাপাড়া চা বাগান।

শ্রমিকরা জানান, দিনের পর দিন কাজ করলেও মজুরি মিলছে না। বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে পাঁচ মাস আগে। শ্রমিকদের রেশন দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। বেতন না পেয়ে মাসখানেক আগে বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছেন হাসপাতালের চিকিৎসক। ডানকান গোষ্ঠীর হান্টাপাড়া চা বাগানের হাল এখন এমনই বলে অভিযোগ শ্রমিকদের। বাগানের কর্তারা অনেকেই আশঙ্কা করছেন, যে কোনও মুহূর্তে শ্রমিক বিক্ষোভ তুঙ্গে উঠতে পারে।

বৃহস্পতিবার রাতে বাগানের কারখানা লাগোয়া চা বাগানের শেড ট্রি বা ছায়াগাছ গুলি কেটে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিলে বাগানের তিন কর্তার উপর ভোজালি নিয়ে চড়াও হন সাত-আট জন। বাগান পরিদর্শকের হাত ভোজালির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়। ওই ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে জিগনেশ মুন্ডা নামে শ্রমিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস মুরগাও বলেছেন, ‘‘একজনকে আমরা গ্রেফতার করেছি গাছ চুরি ও চা বাগান কর্তৃপক্ষের লোকজনকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করার ঘটনায়। বাকিদের খোঁজা হচ্ছে।’’

ওই যুবককে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার পরে বাগান জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। অচেনা কাউকে দেখলেই পুলিশের চড় বলে সন্দেহ করছেন শ্রমিকেরা। আগন্তুকের পরিচয় জানতে একের পর এক প্রশ্ন করছেন তাঁরা। সন্তুষ্ট হওয়ার পরে নিজেদের ক্ষোভের কথা উগড়ে দিচ্ছেন।

বাগানের শ্রমিকরা জানিয়েছেন, গত পাঁচ মাস ধরে বাগানের এই অচলাবস্থা চলছে। জল নেই, বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। হাতির হানার ভয়ে রাত জেগে পাহারা দিতে হচ্ছে। ঘরে ঘরে চরম অভাব। বহু মানুষ ভোরবেলা নদীতে পাথর ভাঙছেন। কেউবা চলে যাচ্ছেন ভুটানে দিন মজুরির কাজের সন্ধানে। অথচ বাগান কর্তৃপক্ষ মজুরি না দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে। পরিচর্যার অভাবে চা বাগান দখল করেছে আগাছা। গাছ থেকে তেমন পাতা মিলছে না। কয়েক দিন ধরে কাঁচা পাতা কিলো প্রতি চার টাকা করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। পরিমাণ এতটাই কম যে ১০-১২ কিলোর বেশী পাতা মিলছে না। এই চরম পরিস্থিতিতে সরকার ও ইউনিয়ন গুলি বাগানের অচলাবস্থা কাটাতে তেমন উদ্যোগী হচ্ছে না বলে শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন।

হান্টাপাড়া বাগানের বিচভাগা লাইনের বাসিন্দা শ্রমিক রাজেশ খড়িয়া ও তাঁর স্ত্রী মেরি দু’জনে বাগানে কাজ করে তিন সন্তান কে নিয়ে খেয়ে পড়ে আনন্দে দিন কাটিয়ে আসছিলেন। এখন বদলে গিয়েছে পরিস্থিতি। রাজেশবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের মত শ্রমিকরা না খেয়ে রয়েছি। এ ভাবে আর কিছু দিন চলতে থাকলে শেড ট্রি কাটা ছাড়া উপায় থাকবে না। যারা ওই গাছ কেটেছে তাঁদের পেটে ভাত নেই বলে ওই কাজ করছে।’’

মনিলাল নাইকের কথায়, ‘‘আমাদের পিঠ এখন দেওয়ালে ঠেকেছে। বাগানটি সচল রাখার জন্য আগ্রহ দেখাচ্ছে না মালিক পক্ষ। ১২ কিলোগ্রাম অনুদানের চাল দিয়ে সরকার দায় এড়িয়ে চলছে। ওঁরা ভালই আছেন। আমাদের দিন কাটছে না খেয়ে।’’

বাগানের এই অচলাবস্থার কারণে যে ভাবে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে তার পূর্বাভাস মিলেছিল বৃহস্পতিবার বিকালে বাগানের অফিসের সামনে। এক দল বাসিন্দা রীতিমত বকেয়ার দাবিতে হাঁসুয়া,ভোজালি নিয়ে বিক্ষোভ দেখান। রাতেই আক্রান্ত হন তিন জন। বাগানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার প্রসেনজিৎ সরকার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটার আশঙ্কা করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘দিনের বেলা বাগানে থাকলেও রাত কাটাচ্ছি বাগানের বাইরে। কর্তৃপক্ষের লোকজন বাগানে থাকলে শেড ট্রি লুঠ করা সম্ভব হচ্ছে না দেখে শ্রমিকরা যে কোনও সময় অঘটন ঘটাতে পারে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

hantapara tea garden Nilay Das Madari Hat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE