জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে গণশুনানি করে শিলিগুড়ি শহরে সমস্ত ধরনের প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। শিলিগুড়ি শহরে তো বটেই, মহকুমা জুড়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ তৈরি, মজুত, বিক্রি এবং ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়। এক সময় শিলিগুড়ি ‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত শহর’ বলে ঘোষণাও হয়। অথচ, বর্তমানে শহর জুড়ে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের রমরমা। পুরসভা বা প্রশাসনের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ। বস্তুত, পুরসভা এবং প্রশাসনের গাফিলতি এবং উদ্যোগের অভাবেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ এখনও ব্যবহার হয়ে চলেছে বলে পরিবেশপ্রেমী থেকে ব্যবসায়ীরাও সরব হয়েছেন।
প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ নিষিদ্ধ করতে তৎকালীন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী তথা শিলিগুড়ি পুরসভার বর্তমান মেয়র গৌতম দেব গণশুনানির ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ, তিনিই এখন কেন ‘উদাসীন’, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মেয়র অবশ্য বলেন, ‘‘শীঘ্রই রিভিউ বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ দৃষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এ নিয়ে কিছু বলতে চায়নি।
পরিবেশপ্রেমীদের অভিযোগ, ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার কথা বললেই সচেতনতা প্রচারের নামে দায় সারা হয়। আইন কার্যকর করতে জরিমানা, কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। একটি পরিবেশপ্রেমী সংগঠনের মুখপাত্র অনিমেষ বসু বলেন, ‘‘যাঁর উদ্যোগে ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার গণশুনানি হয়েছিল, এখন তিনি মেয়র। অথচ, পুরসভার গাফিলতিতেই প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ রমরম করে চলছে এটা ভাবতে কষ্ট হয়।’’ শিলিগুড়ি বৃহত্তর খুচরো ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লবরায় মহুরি বলেন, ‘‘আমরা বার বার পুরসভাকে বলেছি, লাগাতার অভিযান, জরিমানা করতে। কোথায় তৈরি হচ্ছে, মজুত হচ্ছে—সে সবও পুরসভাকে জানিয়েছি। কিন্তু তার পরেও কাজ না হওয়া খুব খারাপ।’’
২০০৯ সালে শিলিগুড়ি পুরবোর্ডে কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে তৎকালীন মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত এবং পরিবেশ বিভাগের মেয়র পারিষদ সুজয় ঘটকের উদ্যোগে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যগ বন্ধ করতে তৎপর হয় পুরসভা। ২০১০ সালে শিলিগুড়ি শহরকে ‘প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত’ বলে ঘোষণা হয়। নেপালের ইলাম পুরসভা এবং মুম্বই পুরসভার প্রতিনিধি দল শিলিগুড়িতে এসে শহরকে কী ভাবে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করা হয়েছে, তা দেখে যায়। বর্তমানে কংগ্রেসের পুরপ্রতিনিধি সুজয় ঘটক বলেন, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশে শহর প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ মুক্ত করতে উদ্যোগী না হওয়ায় পুরসভার বিরুদ্ধেই এফআইআর করা দরকার। প্লাস্টিক লবির অঙ্গুলি হেলনে সব চলছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)