Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Unnatural Death

ভাড়াবাড়িতে ‘রহস্য-মৃত্যু’ যুবকের, উঠছে নানা প্রশ্ন

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত যুবকের স্ত্রী।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত যুবকের স্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৬:০৪
Share: Save:

একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে জলপাইগুড়িতে, উঠেছে একাধিক প্রশ্নও। বৃহস্পতিবার রাতে জলপাইগুড়ির নিউটাউনপাড়ায় এক যুবকের গলায় ফাঁস লাগানো দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃত ব্যক্তির নাম হীরেন্দ্রনাথ রায় (৩৯)। রাতেই পুলিশ দেহ
উদ্ধার করে।

এলাকার বাসিন্দারা দাবি করেন, মাস ছয়েক হল হীরেন্দ্রনাথ রায় তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে নিউটাউন পাড়ায় বাড়ি ভাড়া কর থাকতেন। শুক্রবার সকালের পরেই বিষয়টি নাটকীয় মোড় নেয়। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় এসে কাদোবাড়ির বাসিন্দা পপি রায় দাবি করেন, তিনি হীরেন্দ্রনাথ রায়ের স্ত্রী। নিউটাউনপাড়ার যে বাড়ি থেকে দেহ উদ্ধার হয়েছে সেটি হীরেন্দ্রনাথের বন্ধুর বাড়ি। বন্ধুর থেকে পাওনা টাকা ফেরত নিতে তিনি কাদোবাড়ি থেকে জলপাইগুড়ি এসেছিলেন এবং তখন তাঁকে খুন করা হয়েছে। এ দিকে, নিউটাউনপাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, হীরেন্দ্রনাথ তাঁদের পাড়াতেই স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকতেন, সেখানেই তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জেনেছে, স্বামী-স্ত্রী হিসাবে পরিচয় দিয়ে এক বন্ধুপত্নীকে নিয়ে হীরেন্দ্রনাথ নিউটাউনপাড়ার বাড়িতে থাকতেন শুধু একবেলা। অর্থাৎ, দুপুরে বা বিকেলে এসে থাকতেন এবং রাতে আবার নিজের বাড়ি কাদোবাড়িতে ফিরে যেতেন।

মৃত্যু নিয়েও রহস্য দানা বেঁধেছে। জানলার শিকের সঙ্গে গলায় ওড়নার ফাঁস দেওয়া অবস্থায় দেহ উদ্ধার হয়েছে। তবে দেহ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল না। পা মাটিতে ছুঁয়ে ছিল। দেহ উদ্ধারের সময়ে হীরেন্দ্রনাথ গামছা পরা অবস্থায় ছিলেন। সে কারণেই তাঁর স্ত্রী পপি রায় এবং পরিজনদের দাবি, হীরেন্দ্রনাথকে খুন করে, আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। পপির দাবি, ‘‘স্বামী অন্য কারও সঙ্গে থাকতেন বলে জানা নেই। আমি জানতাম, উনি পাওনা টাকা নিতে গিয়েছেন।’’ পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, এ দিন সকালে কোতোয়ালি থানায় গেলে, প্রথমে অভিযোগ নিতে চাওয়া হয়নি। পরে, দেহ নিয়ে বিক্ষোভ দেখাতে পরিজনেরা থানায় আসেন। বিকেলে পরিবারের অভিযোগ নিয়ে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি অর্ঘ্য সরকার জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। ময়না-তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষায় রয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার রাতে দেহ উদ্ধারের পরেই হীরেন্দ্রনাথ যে মহিলাকে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে নিউটাউনপাড়ার বাড়িতে থাকতেন সেই মহিলার স্বামী চলে আসেন। পুলিশ সেই মহিলাকে স্বামীর সঙ্গে পাঠিয়েছে এবং জলপাইগুড়ি ছেড়ে যেতে বারণ করেছে। পুলিশ সূত্রের দাবি, তাদের ওই মহিলা জানিয়েছেন, হীরেন্দ্রনাথের মৃত্যুর সময়ে তিনি ভাড়াবাড়িতে ছিলেন না। যে বাড়িতে হীরেন্দ্রনাথ ভাড়া থাকতেন তার মালিক লীলা বক্সী বলেন, “আমাদের স্বামী-স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েই ঘরভাড়া নিয়েছিলেন ওঁরা। বলেছিলেন হীরেন্দ্রনাথ আলিপুরদুয়ারে কাজ করেন এবং মহিলা আয়া-র কাজ করেন। প্রতিদিন বিকেলে এসে রাতে কাজে বেরিয়ে যেতেন।”

জলপাইগুড়ি শহরের অভিজাত এলাকা বলেই পরিচিত নিউটাউনপাড়ায় এমন ভুয়ো পরিচয় দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে দিনের পর দিন থাকা এবং রহস্য-মৃত্যু ঘিরে শোরগোল উঠেছে। কেন যথাযথ পরিচয়পত্র ছাড়া, বাড়ি ভাড়া দেওয়া হল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ওই বাড়িতে আরও কয়েক জনের যাতায়াত ছিল বলে শোনা গিয়েছে। তারা কারা এবং গত বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে তৃতীয় বা চতুর্থ কোনও ব্যক্তির উপস্থিতি ছিল কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jalpaiguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy