ফের প্রকাশ্যে শিক্ষকদের বিবাদ চাঁচলের ঐতিহ্যবাহী সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশনে। স্কুলে আসা-যাওয়ার সময়কে ঘিরে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে এ বার এবিটিএ-র এক শিক্ষক নেতার বিবাদ গড়াল হাতাহাতিতে। এর আগেও একাধিকবার শিক্ষকদের বিবাদে কালিমালিপ্ত হয়েছিল ১২৫ বছরেরও বেশি প্রাচীন ওই স্কুল। এ দিনের ঘটনার পরেও নিন্দায় সরব হয়েছেন অভিভাবকেরা। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক আশিস চৌধুরী (মাধ্যমিক) বলেন, ‘এটা অত্যন্ত নিন্দনীয় ঘটনা। আমি খোঁজ নিচ্ছি।’’
পুলিশ ও স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটের জন্য সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে এ বার ডিসিআরসি-সহ স্ট্রংরুম করা হয়েছে। গরমের জন্যও অবশ্য শিক্ষা দফতরের নির্দেশেও স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের স্কুলে যেতে হচ্ছে। পড়ুয়ারা না থাকায় শিক্ষকরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। তা নিয়েই প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ওই শিক্ষকের বিরোধ শুরু হয়।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষকেরা ঠিক করেন যে তাঁরা বেলা দুটোর সময় স্কুল ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু এবিটিএ-র চাঁচল জোনের সভাপতি পার্থ সরকার দাবি করেন, বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হবে। সেই বিবাদের জেরেই এ দিন স্কুলে ঢুকে মোবাইলে হাজিরা খাতার ছবি তুলছিলেন পার্থবাবু। তিনি প্রধান শিক্ষকেরও ছবি তুলতে থাকেন। প্রধান শিক্ষক বাধা দেওয়ায় পার্থবাবু তাঁকে মারধর করে তাঁর পোশাক ছিঁড়ে দেন বলে অভিযোগ।
প্রধান শিক্ষক আসরারুল হক বলেন, ‘‘উনি স্কুলে হাজিরা দিয়েই বাড়ি চলে যান। তারপর ফের সাড়ে চারটায় এসে খাতায় স্বাক্ষর করবেন বলে দাবি করেন। পড়ুয়ারা না থাকায় শিক্ষকরা থাকছেন না। আমি কি ওঁর জন্য বসে থাকব? এটা বোঝানো হলেও গা-জোয়ারি করে তিনি আমাকে নানাভাবে হেনস্থা করতে থাকেন। এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে ভাবতেই পারছি না।’’ পার্থবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে পাইনি। এ দিন গিয়ে দেখি তিনি আমার হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত করে দিয়েছেন। তাই এ দিন হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে তা মোবাইলে তুলে রাখতে যাই। তখন উনি আমার মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি বাধা দেওয়ায় ধস্তাধস্তি হয়। আমিও হাতে চোট পেয়েছি। আমি প্রধান শিক্ষককে মারতে যাব কেন?’’ এ দিনের গোলমালের পরে আহত প্রধান শিক্ষককে সহকর্মীরা হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিত্সার পর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রধান শিক্ষক আনসারুল এবিটিএ-র ওই শিক্ষক নেতা পার্থবাবুর বিরুদ্ধে থানাতেও অভিযোগ দায়ের করেন। চাঁচলের এসডিপিও রানা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সব খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা হবে।’’
চাঁচলের ওই স্কুলে শিক্ষকদের মধ্যে বিবাদ অবশ্য নতুন নয়। এর আগেও প্রধান শিক্ষককে মারধরের অভিযোগে ওই স্কুলের এক শিক্ষককে সাসপেন্ডও করা হয়েছিল। পরে ওই শিক্ষক বদলি নিয়ে অন্য স্কুলে চলে যান। তারপর স্কুলের সমস্যা মেটাতে একাধিকবার পরিচালন সমিতির বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমস্যা মেটেনি তা এ দিনের ঘটনাতেই পরিষ্কার। ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে স্কুলের পরিচালন সমিতি। পরিচালন সমিতির সভাপতি দেবজিৎ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই স্কুলে অনেক সমস্যা কাটিয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু এ দিন যা ঘটেছে তা লজ্জাজনক। প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে। সমিতির তরফেও ব্যবস্থা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy