শহর থেকে দূরত্ব মাত্র সাড়ে সাত কিলোমিটার। পাকা রাস্তা, আলো থেকে রয়েছে হাই স্কুলও। সে গ্রামেই ‘ডাইন’ অপবাদে দিদিকে সঙ্গে নিয়ে শাশুড়িকে মারধরের অভিযোগ উঠল বৌমার বিরুদ্ধে। আক্রান্ত মহিলাকে আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টাও করা হয়। বুধবার সকালে আক্রান্ত মহিলার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত বৌমা ও তার দিদিকে আটক করে পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন,“অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”
ইংরেজবাজারের যদুপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের জহুরাতলা গ্রাম। গ্রামের বুক চিরে গিয়েছে কংক্রিটের পাকা রাস্তা। বাড়ি-বাড়ি পৌঁছেছে বিদ্যুৎ। একাধিক প্রাথমিক থেকে হাই স্কুলও রয়েছে গ্রামে। এই দিন সকালে পঞ্চাশোর্ধ্ব আদিবাসী মহিলাকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বৌমার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে বৌমার দিদিও তাঁকে মারধর করে। পরে তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টাও করা হয় বলে অভিযোগ। গ্রামবাসীরা ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি সামলান। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার স্বামী অসুস্থ। তাঁদের চার ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে দুই ছেলে দীর্ঘদিন আগে মারা যান। বাকি দুই ছেলে ও এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকে বাড়িতে আলাদা থাকেন। যক্ষ্মায় আক্রান্ত অসুস্থ মেয়েকে নিয়ে থাকেন আক্রান্ত মহিলা। তিনি বলেন, “দিনের পর দিন আমাকে ‘ডাইন’, ‘ফুসকিন’ অপবাদ দিয়ে বৌমা ও ছেলে অত্যাচার করত। বলত, দুই ছেলে আমার কারণে মারা গিয়েছে। আমার মেয়ে, স্বামীও আমার জন্যই অসুস্থ। এ দিন বৌমা দিদিকে সঙ্গে নিয়ে ‘ডাইন’ অপবাদ দিয়ে মারধর করে। আগুন দিয়ে পোড়ানোর চেষ্টা করে। গ্রামবাসীরা না এলে শেষ করে দিত। পুলিশে অভিযোগ জানিয়েছি।”
পুলিশ অভিযুক্ত বৌমা এবং তার দিদিকে আটক করে। অভিযুক্ত ছেলে এ দিন বলেন, “ডাইন, ফুসকিনের অপবাদের অভিযোগ ঠিক নয়। তবে পরিবারে অশান্তি হয়েছে।” তৃণমূলের স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য জানান, আদিবাসী পরিবারের মধ্যে গোলমাল হয়েছে। কুসংস্কারের কোনও ব্যাপার নেই। এলাকায় কুসংস্কার বিরোধী প্রচারও চালানো হয়।” বিজ্ঞানমঞ্চের মালদহ শাখার সভাপতি সুনীল দাস বলেন, “ডাইন, ফুসকিন বলে কিছু নেই। সংগঠনের তরফে নিয়মিত প্রচার চালানো হয়। গ্রামটিতে ফের প্রচার চালানো হবে।” মালদহের জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলেন, “কুসংস্কারের বিরোধী সচেতনতা প্রচারে জোর দেওয়া হবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)