স্তব্ধপথে : অসম সীমান্তে ট্রাকের সারি। বৃস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
গত তিনদিন ধরে জাতীয় সড়কই ওঁদের ঘর-সংসার। সেখানেই স্নান, স্টোভে রান্না-খাওয়া, ঘুমনো সব। অসমের উত্তপ্ত পরিস্থিতির জেরে এ রাজ্যের সীমানায় আটকে পড়েছে কয়েক হাজার ট্রাক। অসম সীমার বারবিশা পাকড়িগুড়িতে ট্রাকের লম্বা লাইন। ফলে চালক এবং অন্য কর্মীদের ‘সংসার’ বলতে এই মুহূর্তে ৩১-সি জাতীয় সড়কই।
পাঞ্জাবের হরসিংহ ট্রাক নিয়ে গুয়াহাটি যাচ্ছিলেন। তিনদিন ধরে আটকে আছেন অসম সীমানার বারবিশা সেলস ট্যাক্স গেটে। শুধু হরসিংহ নন। বিনোদ শা, কুলদীপ সিংহ, বিজয় গুপ্তার মতো বহু চালক এবং অন্য কর্মীদেরও একই অবস্থা। হরসিং জানালেন, অসমের অবস্থা স্বাভাবিক না হলে ওদিকে এগনোর কোনও প্রশ্নই নেই। কোকরাঝাড় থেকে ট্রাকের লাইন শুরু হয়েছে। বারবিশা পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার পর্যন্ত শুধু ট্রাকের সারি। কবে তাঁরা গন্তব্যে পৌঁছবেন কিছুই জানেন না।
অসম সীমানায় গিয়ে দেখা গেল, গাড়ির নীচে বসে কয়েকজন চালক রান্নাবান্না করছেন। একটু দূরে ট্রাকের ছায়ায় কেউ কেউ মাদুর পেতে ঘুমোচ্ছেন। ভীম গুপ্তা নামে এক চালক বললেন,‘‘পথের জীবনে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। কিন্তু উপার্জনহীন ভাবে আটকে থাকা খুব যন্ত্রণার। আমার বাড়ি হরিয়ানা। অসম থেকে ফিরে বাড়ি যাওয়ার কথা ছিল। বউয়ের শরীর ভাল নেই। কিন্তু কবে রাস্তা খুলবে সেটাই তো জানি না।’’
অসমের প্রভাব সবচেয়ে বেশি এসে পড়েছে অসম সীমানার বারবিশা, কামাখ্যাগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারে। এই এলাকাগুলিতে ব্যবসা ব্যাপক ভাবে মার খেয়েছে। ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত তিন দিনে অন্তত পঞ্চাশ লক্ষ টাকার ব্যবসা মার খেয়েছেন তাঁরা। তাঁদের ৭৫ শতাংশ ব্যবসা অসমের উপর নির্ভরশীল। এই বন্ধের জেরে অসমের লোকজন অসম লাগোয়া আলিপুরদুয়ার জেলার বাজারগুলিতে আসতেই পারছেন না এর ফলেই ব্যবসায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে ওই বাজারগুলিতে। গোসাইগাঁও এবং শ্রীরামপুর পর্যন্ত কিছু গাড়ি চলাচল করলেও অসমের অন্য রুটে গাড়ি চলাচল বন্ধ।
বারবিশা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক কার্তিক সাহা বলেন, ‘‘নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে কেন্দ্র করে অসমের উত্তপ্ত পরিস্থিতির প্রভাব এসে পড়েছে বারবিশা, কামাখ্যাগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের বাজারে। অসমে কোনও পণ্য যাচ্ছে না। মাছ, আনাজ, চাল-ডাল, আটা, লবণ, কাপড়, লোহার সামগ্রী প্রচুর পরিমাণে প্রতিদিন অসমে যায়। সেটা বন্ধ
থাকায় ব্যবসায় ভীষণ ভাবে মার খাচ্ছে এই এলাকার ব্যবসা।’’ এমন চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে তাঁর আশঙ্কা।
পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া নমনি অসমের লোকজন খুব কম পরিমাণে এ রাজ্যে আসছেন। অসমের শিমূলটাপু গ্রামের সুকুমার দাস সাইকেল নিয়ে বারবিশা থেকে ফিরছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরা অসমে থাকলেও বারবিশা থেকেই সমস্ত কেনাকাটা করি। অসমের পরিস্থিতি ভাল নেই। তবে আমাদের গ্রামগুলি শান্ত রয়েছে।’’
আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা বলেন, ‘‘অসমের পরিস্থির জেরে আমাদের রাজ্য স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে। আমরা নজর রাখছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy