নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কিতে ঘাঁটি গেড়েই ওমানের একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে নিয়মিত অনলাইনে টাকা লেনদেন করতেন ভুয়ো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ মামলায় ধৃত রণবিজয় সিংহ। সোমবার রাতে তাকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জেরায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সামনে এমনই তথ্য সামনে এসেছে। পুলিশ এবং গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতের ঘরে তল্লাশি চালিয়ে চারটি ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড ও নথিপত্র উদ্ধার হয়েছে। একটি অ্যাকাউন্ট ওমানের একটি ব্যাঙ্কের। বাকি তিনটি দিল্লি, বিহার ও শিলিগুড়ির। আরবের ওমান, দুবাই ছাড়াও নেপাল থেকে ওই অ্যাকাউন্টগুলিতে নিয়মিত টাকা ঢুকেছে। আবার বিভিন্ন স্থানীয় ব্যাঙ্কের থেকে রণবিজয় টাকাও তুলছে। গত কয়েকমাসে রণবিজয় প্রায় ১০ লক্ষ টাকার লেনদেন করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
শুধু কী ভুয়ো টেলিফোন এক্সচেঞ্জ চালিয়ে ওই টাকা লেনদেন হয়েছে না কি কোনও সংগঠনের তরফেও টাকা অ্যাকাউন্টগুলিতে ঢোকানো হয়েছে, তা তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। নভেম্বরের মাসের আগে পর্যন্ত মাসে ৫০/৬০ হাজার টাকা রণবিজয় দফায় দফায় তুলেছেন। কখনও এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্য অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করেছেন। তদন্তকারীরা জানান, বছর দেড়েক আগে ওমানে একটি সফটওয়্যার সংস্থায় ইঞ্জিনিয়র হিসাবে রণবিজয় কাজ করতেন। অ্যাকাউন্টটি সেই সময় খোলা হয়। তিনি সেখান থেকে পাকাপাকিভাবে চলে আসলেও আরবের অ্যাকাউন্টটি পুরোদমে সক্রিয় রয়েছে। তাতেই তদন্তকারীদের সন্দেহ বেড়েছে।
মঙ্গলবার সকালে ধৃতকে খড়িবাড়ি থানার পুলিশ শিলিগুড়ি এসিজেএম আদালতে পেশ করে। পুলিশ সূত্রের খবর, কোনও সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে আদালতে অবশ্য এখনও জানায়নি পুলিশ। তবে মামলাটির সঙ্গে দেশের সুরক্ষা জড়িত বলে জানানো হয়েছে। বিচারক ধৃতকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, প্রচুর লেনদেনের সম্পর্কে জানা যাচ্ছে। ব্যাঙ্কগুলির কাছে তথ্য চাওয়া হচ্ছে। নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মেনে বিদেশি ব্যাঙ্কটিরও তথ্য যাচাই হবে। কোনও কিছুই আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেও সেনাবাহিনী, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসাররা ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, মূলত নেপাল থেকে চিন, পাকিস্তান, দুবাই-সহ বিভিন্ন জায়গায় আইএসডি কল ইন্টারনেট প্রোটোকলের সাহায্যে ঘুরিয়ে সস্তায় করানোর কাজই ভুয়ো টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে করতেন তিনি। রণবিজয় ঘরে বসে ১৫৫টি নেপালের সিম, ৩৪টি ভারতীয় সিম, ৪টি ল্যাপটপ, ৫টি আন্তর্জাতিক জিএসএম মেশিন দিয়ে সেই কাজ করছিলেন। তদন্তকারীরা জানান, দেখা যায় প্রতি মিনিটের ৬০/৭০ টাকার আইএসডি কল ভুয়ো এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে ২০ টাকা পর্যন্ত নামিয়ে আনা হচ্ছিল। আমেরিকার একটি সার্ভারকে ব্যবহার করে ওই কাজ হচ্ছিল। নেপালের একটি এজেন্সির মাধ্যমে কলগুলি ওই এক্সচেঞ্জে আসত। তবে সেখানে খুব বেশি টাকা লেনদেন তথ্য মেলেনি। যা রণবিজয়ের মামলায় প্রাথমিকভাবে পাওয়া গিয়েছে। তাই বিষয়টি বিস্তারিতভাবে খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy