প্রস্তুতি: কোচবিহারের পালপাড়ায় তৈরি হচ্ছে কালীপ্রতিমা। নিজস্ব চিত্র।
সন্ধ্যার অন্ধকার নামতেই যেন শুরু হয়ে যাচ্ছে লুকোচুরি খেলা। না, এখন আতশবাজিতে নয়, শব্দবাজিতে জানান দেওয়া হচ্ছে, বাজিপ্রেমীরা ম্যাচ পকেটে ভরে রেখেছেন। শীতের রাতে আচমকা এই সব বাজির শব্দ দুই শহরের অনেকটা অংশ কাঁপিয়ে দিচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, অন্যান্য বার কালীপুজোর আগে এর থেকে বেশি বাজি ফাটে। এ বারে তুলনায় কম। কিন্তু সেটা যেন পুলিশ-প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ফাটানো হচ্ছে। কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার দুই জেলাতেই একই ছবি।
পুলিশ-প্রশাসনের একটি অংশের বক্তব্য, বিজেপির জয়ের পরে শব্দবাজির এই সশব্দ নিজেকে জাহির করার ঘটনা বেড়েছে। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কালীপুজো বা দেওয়ালির দিন কী হতে পারে।
দুই জেলাতেই বাসিন্দাদের একাংশের সন্দেহ, পুরনো মজুত থেকে বাজি, পটকা লুকিয়ে বিক্রির জেরেই এমনটা ঘটছে। পুলিশ ও প্রশাসন সাদা পোশাকের পুলিশ বিভিন্ন এলাকায় নজর রাখছে। বাজি, পটকা বিক্রি বন্ধ করতে কোচবিহারে ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। নজরদারি আরও বাড়ানোর তোড়জোড়ও শুরু করা হয়েছে।
কোচবিহারের সদর মহকুমা শাসক সঞ্জয় পাল বলেন, “ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করা হয়েছে। যাঁরা আগে বাজি ব্যবসা করতেন, তাঁদের কর্মতীর্থ প্রকল্পের আওতায় আনার চেষ্টা হচ্ছে।” কোতোয়ালি থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায় বলেন, “সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে নজরদারি।”
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে বাজি, পটকা না ফাটাতে আর্জি জানাচ্ছেন পরিবেশপ্রেমী, চিকিৎসকদের অনেকেই। কোচবিহারের পরিবেশপ্রেমী সংস্থা ন্যাসগ্রুপের সম্পাদক অরূপ গুহ বলেন, “দীপাবলির আগেই বাজি পোড়ানোর এই প্রবণতা অত্যন্ত উদ্বেগের।’’ চিকিৎসক উজ্জ্বল দাসশর্মা বলেন, “বাজি, পটকা পোড়ানো মানেই দূষণ। করোনা আবহে তা উদ্বেগের।’’
রাজ্যের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “বিজেপি কোনও দিনই আইন মানেনি। এ বারেও গেরুয়া জামা, টুপি পরেই বাজি, পটকা ফাটানো হয়।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, “আমরা বরাবর আদালতের নির্দেশকে মান্যতা দিই। দলের কাউকে বাজি, পটকা ফাটাতে বলা হয়নি। কেউ তা করেনি। আসলে বিহারে দলের জয়ে আমজনতা সামিল হচ্ছেন।’’
আলিপুরদুয়ারেও সন্ধ্যার পর আচমকাই শহর কিংবা লাগোয়া এলাকার ফাটছে শব্দবাজি। থানায় বসে সেই আওয়াজও পেতে শুরু করেছেন পুলিশ আধিকারিকরা। সঙ্গে সঙ্গে নির্দিষ্ট এলাকায় এলাকায় পৌঁছে যাচ্ছে টহলদারি ভ্যান। কিন্তু পুলিশ পৌঁছাতেই সবার মুখে কুলুপ। এ ভাবে চললে কালীপুজোয় বাজি ফাটানো বন্ধ হবে কী করে, সেটাই বুঝে পাচ্ছেন না আলিপুরদুয়ারের খোদ পুলিশ আধিকারিকদের কেউ কেউ।
অভিযোগ, সন্ধ্যার পর জেলার বিভিন্ন জায়গায় অনেক সময়ই শব্দবাজির আওয়াজ মিলছে। যে ঘটনা চিকিৎসক ও পরিবেশপ্রেমীদের ভয় বাড়ছে। বাজির কথা স্বীকার করে নিচ্ছেন পুলিশ কর্তাদের অনেকে। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “সন্ধ্যার পর থানায় বসে আমিও বাজির আওয়াজ পাচ্ছি। দ্রুত টহলদারি ভ্যান পাঠাচ্ছি। কিন্তু কেউ মুখ খুলছে না।’’
পুলিশের কথায়, হাইকোর্টের নির্দেশের আগেই হয়তো কেউ চোরাপথে শব্দবাজি জোগাড় করে মজুদ করেছেন। সে জন্যই বাজি নিয়ে কড়াকড়ি আরও বাড়ানো হচ্ছে। যেখানে বাজি ফাটছে, সেখানকার বাসিন্দাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy