বিজেপির খাসতালুকে দাঁড়িয়ে মোদীকে তীব্র আক্রমণ অভিষেকের। — ফাইল ছবি।
জলপাইগুড়ি জেলার নাগরাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত মাটিয়ালি ব্লকে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করলেন। শুরুতেই উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জে অশান্তির ঘটনার প্রেক্ষিতে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টার বন্ধের প্রসঙ্গ তোলেন অভিষেক। বন্ধকে উপেক্ষা করে যে ভাবে তাঁর জনসভায় মানুষ এসেছেন, তা দেখে তাঁদের ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘‘মানুষ কর্মনাশা, ধর্মনাশা ধর্মঘট সমর্থন করে না। আজকে এই সভায় মানুষের অংশগ্রহণ সে কথাই আরও এক বার স্পষ্ট জানিয়ে দিচ্ছে।’’ পাশাপাশি, নাগরাকাটা থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক।
তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচিতে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার হয়ে অভিষেকের ক্যারাভ্যান এসে পৌঁছেছে জলপাইগুড়ি জেলায়। এই জেলায় অভিষেকের প্রথম সভা ছিল নাগরাকাটা বিধানসভার মাটিয়ালি ব্লকে। জনসংযোগ যাত্রার চতুর্থ দিনে মোদী সরকারকে তীব্র আক্রমণ শানালেন অভিষেক। বললেন, ‘‘এক বুক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০১৯ সালে আপনারা বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন। আপনারা ভোট দিয়েছিলেন ধর্মের নামে। আপনারা ভোট দিয়েছিলেন রাম মন্দিরের নামে। রাম মন্দির তৈরি হচ্ছে, কিন্তু আপনার বাড়ির ছাদের টাকা মোদী আটকে রেখেছেন।’’ অভিষেকের দাবি, বাংলায় মমতার সরকার উন্নয়ন বা পরিষেবা প্রদানের বিষয়ে দল-মত-রং দেখে না। তার উদাহরণ দিতে গিয়ে অভিষেক বলেন, ‘‘আপনারা জানেন, এই জলপাইগুড়ি জেলায় চারটি পঞ্চায়েতে জিতেছিল বিজেপি। কিন্তু যে পঞ্চায়েতে তৃণমূল হেরেছে, সেই পঞ্চায়েতেও লক্ষ্মীর ভান্ডার, সবুজ সাথী পান মানুষ। বিরোধীদের জেতা পঞ্চায়েতেও জল-কল পৌঁছেছে।’’ ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে বিজেপি হেরেছে, সেই রাগেই রাজ্যের প্রাপ্য আটকে রাখছেন মোদী, এ দিন আবারও এ কথা বলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
অভিষেক জনতার সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনে গিয়ে বলেন, ‘‘দুর্নীতিমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত পঞ্চায়েত চান কি? মহাত্মা গান্ধী যে পঞ্চায়েত তৈরি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই পঞ্চায়েত চান? দয়া করে নিজেদের হাত তুলে বলুন।’’ অভিষেকের দাবি, দিল্লির তুঘলকি কারবারের বিরুদ্ধে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়ে মেরুদণ্ড সোজা রেখে যে লড়াই করতে পারবেন, পঞ্চায়েতে তেমন প্রার্থীই ঠিক করবেন মানুষ। তিনি বলেন, ‘‘বন্ধ ঘরে পঞ্চায়েতের প্রার্থী ঠিক হবে না। রাজনৈতিক হিংসায় ইতি টানার নাম তৃণমূলে নবজোয়ার।’’ অভিষেকের অভিযোগ, নির্বাচনে সন্ত্রাস ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে সিপিএম। সেই সন্ত্রাস এবং দুর্নীতিমুক্ত পঞ্চায়েত গড়তেই মাঠে নেমেছে তৃণমূল। অভিষেকের কথায়, ‘‘মানুষ যাঁকে চাইবেন, তিনিই আগামী দিনে তৃণমূলের প্রার্থী।’’
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘আপনাকে নিজের অধিকারকে সামনে রেখে ভোট দিতে হবে, ধর্মকে সামনে রেখে নয়। এক দিকে দিদি লক্ষ্মীর ভান্ডারে বছরে ১২ হাজার টাকা দিচ্ছেন। অন্য দিকে মোদী আধার-প্যান লিঙ্কের নাম করে ১ হাজার নিয়ে নিচ্ছেন। এক দিকে দিদি দিচ্ছেন, অন্য দিকে মোদী নিচ্ছেন। কাকে ভোট দেবেন আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’’ তার পরেই অভিষেকের আহ্বান, ‘‘১০০ দিনের কাজের টাকা পাওনাকে ভোটের ইস্যু করে ভোট দিন। কারও ক্ষমতা নেই আপনার হকের টাকা আটকে রাখে।’’ অভিষেক জনতার উদ্দেশে একটি ফোন নম্বর দেন। ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়াতে যাঁদের সমস্যা, তাঁরা ওই নম্বরে ফোন করে নিজের পরিচয় গোপন রেখে ভোট দিতে পারবেন।
রাজনৈতিক ভাবে নাগরাকাটা বিধানসভা তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে, গত বিধানসভা ভোটে এই কেন্দ্রে জয়ী বিজেপি প্রার্থী প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। আর জনসংখ্যার বিন্যাস বলছে, এই কেন্দ্রে তফসিলি উপজাতির হার প্রায় ৪৭ শতাংশ। যে তফসিলি উপজাতির জনসংখ্যা বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছে বিগত কিছু নির্বাচনে। এই প্রেক্ষাপটে মাটিয়ালিতে দাঁড়িয়ে গেরুয়া শিবিরের দিকে একের পর এক অভিযোগের তির ছুড়লেন অভিষেক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy