প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ (বাঁ দিকে)। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বার বার রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়েছে কোচবিহার। রাজনৈতিক সংঘর্ষে সেখানে মৃত্যু হয়েছে চার বিজেপি কর্মীর। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েক জন। মৃত এবং আহত কর্মীদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করল কেন্দ্রীয় বিজেপির ‘তথ্যসন্ধানী দল’। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের নেতৃত্বাধীন ওই দল মৃত বিজেপি কর্মী জয়ন্ত বর্মণের স্ত্রী-সহ দিনহাটার কালমাটি এলাকায় গুলিবিদ্ধ বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেছে। কোচবিহারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করেন ওই দলের সদস্যেরা। অন্য দিকে, বিজেপির এই তথ্যসন্ধানী দল এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্করকে কটাক্ষ করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় গণতন্ত্র আছে বলেই রবিশঙ্কর প্রসাদেরা ঘুরে বেড়াতে পারছেন।’’
বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠক করেন রবিশঙ্করেরা। তার পর বাসন্তীতে গিয়েছিল বিজেপির তথ্যসন্ধানী দল। সেখান থেকে কেন্দ্রের প্রাক্তন আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা এখানে এসেছি কারণ, আপনি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) কী ভাবে বাংলা চালাচ্ছেন, সেটা পৃথিবীকে দেখাতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের মমতার সার্টিফিকেটের কোনও প্রয়োজন নেই। মমতাজি যা-ই বলুন, এই জয়ে আপনিও লজ্জা পেয়েছেন। তাই আপনি বলেছেন হিংসার জন্য অনুশোচনা হচ্ছে।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘উনি তো বামেদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। অথচ বাম জমানার থেকেও এখন পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা খারাপ।’’ এর পর শুক্রবার কোচবিহার থেকেও রাজ্যের শাসকদলকে নিশানা করে বিজেপির তথ্যসন্ধানী দল।
শুক্রবার কোচবিহার-১ ব্লকের ফলিমারী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় মৃত বিজেপি কর্মী মাধব বিশ্বাসের বাড়িতে যান রবিশঙ্করেরা। পর পর একাধিক এলাকায় ‘আক্রান্ত’ বিজেপি নেতাকর্মী এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ওই দল। এ নিয়ে দিনহাটার বামনহাট-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে গুলিবিদ্ধ বিজেপি কর্মী মিলন বর্মণ বলেন, ‘‘ভোটের এক দিন আগে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাকে এবং আমাদের আরও দুই কর্মীকে গুলি করে। এখন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছি। কিন্তু বাড়ি ফিরতে পারিনি।’’ তিনি রবিশঙ্করের কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, বাড়ি ফিরলে আবারও হামলার মুখোমুখি হতে হবে তাঁকে। তুফানগঞ্জ-২ ব্লকের শালবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতে মৃত বিজেপি কর্মী জয়ন্ত বর্মণের স্ত্রী কণিকা বর্মণ জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। এই সমস্ত বিষয় তিনি তথ্যসন্ধানী দলকে জানিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গে দেখা করে রবিশঙ্কর বলেন, ‘‘আমরা যেখানেই যাচ্ছি, সব জায়গায় একই ঘটনা!’’ মুখ্যমন্ত্রী মমতার উদ্দেশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘মা-মাটি-মানুষ কোথায় গেল? মা-মাটি-মানুষের জন্য কি মানুষকে গুলি করা হচ্ছে?’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মহিলা ফাইটার (যোদ্ধা) হিসাবে মানুষ আপনাকে সম্মান দিয়েছে। কিন্ত আপনার শাসন বামফ্রন্টের কুশাসনের থেকেও আরও বেশি ভয়ানক। আপনার বিরুদ্ধে যাঁরা ভোট দেবেন, তাঁদের গুলি করা হবে, লাঠি মারা হবে! বাচ্চাদের অপহরণ করার হুমকি দেওয়া হবে! এটাই কি আপনার শাসন?’’
রাজ্য পুলিশের ভূমিকারও সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘এখানে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। আমি পুলিশের কাছে আবেদন জানাই, যাঁদের শরীরে গুলি লেগেছে, সেই সমস্ত মামলার সঠিক ভাবে তদন্ত হোক। এবং সমস্ত বিষয়ে রাজ্যপালকেও জানানো হবে।’’ এ নিয়ে কোচবিহারের তৃণমূল নেতা তথা শাসকদলের মুখপাত্র পার্থপ্রতিম রায় বলেন, ‘‘এর আগে এমন কেন্দ্রীয় দল বহু বার এসেছে। আসলে ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের পরাজয় এবং তার পর এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের হার থেকে মুখ লুকোনোর জন্য বাংলাকে খাটো করতে বিজেপি চক্রান্ত করছে। এই ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম’ তারই একটি অঙ্গ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কোচবিহার থেকে আর কিছু দূর গেলেই তো মণিপুর। সেখানে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। তাঁরা সেখানে যান। বিজেপির ডবল ইঞ্জিন সরকারের আমলে সেখানে ছাত্রছাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ এমনকি, সেনাকর্মীরাও নিরাপদে নেই।’’
শুক্রবার সন্ধ্যায় নন্দীগ্রামে রাজনৈতিক সংঘর্ষে আহত তৃণমূল কর্মীদের দেখতে এসএসকেএমে হাসপাতালে যান অভিষেক। সেখান থেকে বেরিয়ে কেন্দ্রের এই দলকে কটাক্ষ করেন তিনি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘‘উনি (রবিশঙ্কর) বলছেন বাম আমলেও এমন হিংসা হয়নি। কিন্তু ২০১১ সালের আগে থেকে ৩৪ বছরে উনি কত বার বাংলায় এসেছেন? জঙ্গলমহল দেখেছেন? সেখানে প্রতি দিন খুনের খবর মিলত। মানুষ বেরোতে ভয় পেতেন। সেখানে এ বার পঞ্চায়েত ভোট সুষ্ঠু ভাবে হয়েছে। আর বাংলায় গণতন্ত্র আছে বলেই ওঁরা ঘুরে বেড়াতে পারছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy