কোলেপিঠে: দিদার সঙ্গে বিশ্বনাথ। নিজস্ব চিত্র
বছর চোদ্দোর বিশ্বনাথ চৌধুরীর উচ্চতা পৌনে তিন ফুট। প্রতিবন্ধকতার ছাপ জন্ম থেকেই। বাড়ি থেকে তিন কিমি দূরের স্কুলে যেতে তবুও ক্লান্তিহীন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বিশ্বনাথ। পড়াশোনা করে অনেক বড় মানুষ হতে চায়। আর তার জন্য পড়াশোনা চালিয়ে যাবে সে।
জন্মের পর প্রতিবন্ধকতা নিয়ে সে জন্মেছে দেখে বাবা রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। কিন্তু মা রাধারানি মণ্ডল চৌধুরী হাল ছাড়েননি। স্বামী আলাদা সংসার পেতেছেন বলে খবর পান। তারপর ছেলে বিশ্বনাথকে নিয়ে নিজের মায়ের কাছে ফিরে আসেন রাধারানি। দিদিমা বিমলা মণ্ডল বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন নাতিকে ঘরে তুলতেই, ক্ষোভে ঘর ছেড়ে চলে যান বিশ্বনাথের মামারা।
বাড়ির এমন পরিস্থিতিতে, যেখানে সিংহভাগ ছাত্রের পড়াশুনো থেকে মন উঠে যেত, সেখানে বিশ্বনাথ পড়াশুনোকেই আরও আঁকড়ে ধরতে চায়। দিদিমা বিমলাদেবী রোজ সকালে নাতিকে নিয়ে হেঁটে স্কুলে দিয়ে আসেন। ছুটির পর আবার তিনিই বিশ্বনাথকে বাড়ি নিয়ে যান। মা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওদলাবাড়ির একটি ভাতের হোটেলে কাজ করেন। দৈনিক ১০০ টাকা মজুরি মেলে। আর বিশ্বনাথের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শংসাপত্রের জন্য মাসে এক হাজার টাকা অনুদান মেলে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। সংসার কি এতে চলে? প্রশ্ন করলেন, দিদিমা বিমলা মণ্ডল। দরমার বেড়ার ঘর, তার চালও ফুটিফাটা। বৃষ্টিতে অঝোর ধারায় জল নামে সে ঘরে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবুও বিশ্বনাথ পড়তে চায়। বড় মানুষ হতে চায়। ওদলাবাড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিরুমোহন রায় বলেন, “বিশ্বনাথ প্রতিদিন প্রার্থনা সঙ্গীতের আগেই স্কুলে পৌঁছে যায়, ওর জন্যে স্কুলের পক্ষ থেকে কিছু করা যায় কিনা তা আমরা ভেবে দেখছি।”
বড় হয়ে মা, দিদার কষ্ট ঘোচাতে চায় বিশ্বনাথ। আত্মপ্রত্যয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে তাঁর চোখ। আর সেই কথা শুনে ছেঁড়া শাড়ির আঁচলে তখন চোখের জল মোছেন মা ও দিদা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy