নোটের গেরোয় বদলে যাচ্ছে বিয়ে বাড়ির মেনু তালিকা। কেউ অগ্রিম দেওয়া অর্ডার বদলে দিচ্ছেন। কেউ আবার নতুন অর্ডারেও পাতে ফেরাতে চাইছেন পুরোনো পদের সম্ভার। যাতে খরচ কমবে, আবার অনুষ্ঠানও নামান যাবে। ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’র প্রবাদও ঘুরছে কারও মুখে। সব মিলিয়ে অনেকেরই চিতল, ইলিশের মত দামী মাছের মেনু ছেড়ে রুই, কাতল, চিংড়ির দিকে ঝোঁক বাড়ছে। নান, পকোড়ার বদলে কেউ আবার পুরানো বেগুনি কিংবা ভেজ ডালই শুরুতে পাতে ফেরাচ্ছেন। মেনু কাটছাঁটে তাই মাথায় হাত পড়েছে কোচবিহারের ক্যাটারার থেকে মাছ থেকে ব্যবসায়ীদের একাংশের।
ক্যাটারার ব্যবসায়ীদের সূত্রেই জানা গিয়েছে, শীতের মরসুমের বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে গত কয়েক বছর ধরেই ‘আধুনিকতার’ ছাপ ক্রমশ ফুটে উঠছে কোচবিহারের মধ্যবিত্ত থেকে অবস্থাসম্পন্ন বাসিন্দাদের আয়োজনে। যাদের পারিবারিক অবস্থা ততটা ভাল নয় তাঁরাও প্রিয়জনের বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথি আপ্যায়নে যতটা সম্ভব চেষ্টার কসুর রাখতেন না। তাই মেনু কার্ডের শুরুতে থাকা নান, ভেজ-ডিম পকোড়া, ভেটকি পকোড়া, ফ্রিশফ্রাই দিয়ে পরিবেশন শুরু প্রায় স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
ইলিশ ভাপা, ইলিশ পোস্ত, চিতল ঝাল, মাটন কসা, মাটন চাপ, পোলাও, ফ্রায়েড রাইস, মিষ্টি, আইসক্রিম যা শেষ।
একশো, পাঁচশো টাকার নোট বাতিলের জেরে ওই রকমারি মেনুর অগ্রিম অর্ডার ফেরাচ্ছেন অনেকে। কোচবিহারের ক্যাটারার ব্যবসায়ীদের একজন রানা দাস বলেন, “এক প্লেট চিতলের জন্য দুশো টাকা, ইলিশের জন্য দেড়শো টাকা বাড়তি খরচের চাপ অনেকেই এখন নিতে চাইছেন না। তাই কয়েক মাস আগে দেওয়া অর্ডারও বদল করছেন। কাতল, চিংড়ি তুলনামূলক দাম কম বলে ওই দিকেই ঝোঁকটা বাড়ছে। তার থেকেও বড় কথা নিমন্ত্রিতের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে বিয়ের মরসুমের ব্যবসা মার খাচ্ছে।” তুফানগঞ্জের এক ক্যাটারার ব্যবসায়ী প্রশান্ত চক্রবর্তী বলেন, “ ভেজ ডাল, বেগুনির মত আগের মেনুতে অনেকে ফিরছেন। চিতল, ইলিশ, কাতল ছাড়ুন নোটের সমস্যায় মেনু বদলে রুইয়ের কদরও বেড়েছে। তারপরেও নতুন করে অর্ডার নেওয়া যাচ্ছেনা। হাতে আমাদের যোগান কম। অনেকে চেক দিতে চাইছে।”
কী বলছেন বিয়েবাড়ির কর্তারা? তাঁদের অনেকেই এখন চাইছেন, যদি বেয়াই পক্ষ রাজি থাকে, তা হলে বিয়ে পিছিয়ে দিতে। যাঁজ়রা তা পেরেছেন, তাঁরা খুশি। যাঁরা পারেননি, তাঁদের চিন্তা যাচ্ছে না। কোচবিহারের তল্লিতলা এলাকার বাসিন্দা জয়ন্ত রায় বলেন, “ছেলের বৌভাতে রকমারি মেনু করার ইচ্ছে ছিল। বিয়ের জন্য আড়াই লক্ষ টাকা তুলতে পারব খবর শুনে আশায় ছিলাম। কিন্তু ওই টাকা ব্যাঙ্ক থেকে পাইনি। কেন্দ্রের ঘোষণা আর বাস্তবের মিল পেলাম না। তাই চিংড়ি, পাবদা করাও সম্ভব হয়নি। সাদামাঠা পাঁঠার মাংসের ঝোলের সঙ্গে শুধু কাতলটা রেখেছি।”
বক্সিরহাটের স্কুল শিক্ষক অনুপম উপাধ্যায় বলেন, “মেনুই শুধু নয় নিমন্ত্রিতের সংখ্যাও কাটছাট করেছি। নিজের বিয়েতে আত্মীয়দের উপহার পর্যন্ত দিতে পারিনি। আত্মীয়বন্ধুরা পাশে না দাঁড়ালে বিয়েটাই হত না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy