Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Child Marriage

সহপাঠীদের সহযোগিতায় বিয়ে বন্ধ নাবালিকা ছাত্রীর

বেশ কিছুদিন ধরে নেহা স্কুলে স্কুলে না আসায় সহপাঠীদের মনে প্রশ্ন জাগে। নেহার খোঁজে তার বাড়িতে পৌঁছে যায় কয়েক জন সহপাঠী। তারা জানতে পারে, বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় নেহার পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন বাবা-মা।

—প্রতীকী চিত্র।

মেহেদি হেদায়েতুল্লা
শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০২৪ ০৯:৪১
Share: Save:

বাড়িতে অভাব। বাবা দিনমজুর, মা পরিচারিকার কাজ করেন। বংশে সে-ই প্রথম মাধ্যমিকের দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। ভাল পাত্রের খোঁজ পেয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি হিসাবে মেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন বাবা-মা। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের এক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী নেহা (নাম পরিবর্তিত) পড়তে চায়। সহপাঠীদের সে মনের কথা জানানোয়, তাদের হস্তক্ষেপে থামে বিয়ে। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত মেয়ের বিয়ে দেবেন না, মুচলেকা দেন বাবা। মেয়ের পড়াশোনা চালানোয় পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

বেশ কিছুদিন ধরে নেহা স্কুলে স্কুলে না আসায় সহপাঠীদের মনে প্রশ্ন জাগে। নেহার খোঁজে তার বাড়িতে পৌঁছে যায় কয়েক জন সহপাঠী। তারা জানতে পারে, বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ায় নেহার পড়া বন্ধ করে দিয়েছেন বাবা-মা। সে স্কুলে যেতে চাইলে তাকে ঘরে বন্দি করে, মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। সহপাঠীরা পুরো বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানান। প্রধান শিক্ষক ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর মেয়েদের সেখানে পাঠান। তারা নেহার বাবাকে বুঝিয়ে বলে, নেহাকে এ ভাবে আটকে রাখা আইন বিরুদ্ধে। নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিলে কারাদণ্ড হতে পারে।

নেহার বাবা পরে মুচলেকা দিয়ে জানান, ভবিষ্যতে এমন কাজ করবেন না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাড়িতে অভাব। দুই মেয়েকে নিয়ে সংসার টানছি। ভাল পাত্র পেয়ে ভেবেছিলাম, মেয়ের বিয়ে দেব। তা জানতে পেরে বেঁকে বসে নেহা। তাই পড়াশোনা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। বান্ধবীদের সাহায্য নিয়ে সে কথা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয় নেহা। আমি ভুল বুঝতে পেরেছি। আমি লজ্জিত। মেয়ের কাছে হার মেনেছি। মেয়ের পড়াশোনার জন্য পাশে থাকব।’’ পাশাপাশি নেহার দাবি, ‘‘আমি স্বনির্ভর হয়ে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে সকলকে দেখাতে চাই, শুধু বিয়ে করার জন্য মেয়েরা জন্মায়নি।’’ স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘নেহার সাহসিকতাকে স্যালুট। ওর সহপাঠীরা যে ভাবে উদ্যোগী হয়ে নেহাকে স্কুলে ফেরাল, তাতেও আমি গর্বিত। নেহাকে বলা হয়েছে, হস্টেলে থেকেও পড়াশোনা করতে পারে। পড়াশোনার খরচ দিতে হবে না।’’

উত্তর দিনাজপুর জেলা শিশু সুরক্ষা দফতরের আধিকারিক অসিত দাস বলেছেন, ‘‘সরকার মেয়েদের জন্য আর্থিক সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি, সচেতনতা শিবির করে প্রচারও করছে। তা সত্ত্বেও কিছু নাবালিকার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করতে এ ভাবে সবাই এগিয়ে এলে, এমন প্রবণতা রোখা যাবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage school North Dinajpur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy