কিনারা: ধৃত ছোটন ঘোষ।
হাতের উল্কিতে লেখা ছিল ‘জে প্লাস এম’। আগুনে শরীর ঝলসে গেলেও স্পষ্ট ছিল ওই অক্ষর দু’টি। সোশ্যাল সাইটে ‘ভাইরাল’ হওয়া ঝলসানো সেই হাতের ছবিই হদিশ দিল ইংরেজবাজারের ধানতলা-কাণ্ডে নিহত মহিলার পরিচয়। বুধবার সকালে শিলিগুড়ি থেকে এসে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করলেন তাঁর পরিজনেরা।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই ঘটনায় ধানতলা সংলগ্ন সাহাজালালপুর গ্রামের বাসিন্দা বাপন ঘোষ ওরফে ছোটনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, বিবাহবর্হিভূত সম্পর্কের টানাপড়েনের জেরেই শিলিগুড়ির এনজেপি থানার অম্বিকানগরের বাসিন্দা বছর পঁচিশের ওই মহিলাকে খুন করা হয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত কিনা, দেখছে পুলিশ। বুধবার মালদহের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়।’’
গত বৃহস্পতিবার সকালে ইংরেজবাজার শহর সংলগ্ন কোতোয়ালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ধানতলা গ্রামের আমবাগানে অজ্ঞাতপরিচয় এক মহিলার অর্ধনগ্ন, দগ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ওই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তার পরে আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে বলে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে।
তবে এত দিন নিহতের পরিচয় জানতে হিমসিম হয় পুলিশ। তার জেরে তদন্তের গতিও কমেছিল বলে জানিয়েছিলেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। তাঁরা জানান, সে জন্য ওই মহিলার পরিচয় জানা মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল তদন্তকারীদের। তাই সোশ্যাল সাইটে ছবি দেওয়া হয়েছিল। সেই সূত্রেই মেলে পরিচয়।
নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আট বছর আগে জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি এলাকায় তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তাঁর এক মেয়ে, এক ছেলে রয়েছে। তবে বছর তিনেক আগে ডিভোর্স হয়ে যায়। তার পর থেকে তিনি শিলিগুড়ির শান্তিনগর এলাকায় ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। তাঁর ছেলে-মেয়েরা স্বামীর বাবা, মায়ের কাছে থাকে। ওই মহিলা ভুট্টার খই তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। ওই মহিলার বাবা থাকেন কোচবিহারে। মা-ও থাকেন আলাদা।
পুলিশ জানায়, ২ ডিসেম্বর বিকেলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ওই মহিলা। তার পরেই নিখোঁজ হন। ৯ ডিসেম্বর এনজেপি থানায় নিখোঁজ ডায়েরি দায়ের করেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। মহিলার মা বলেন, ‘‘প্রথমে ভেবেছিলাম মেয়ে কোথাও গিয়েছে। পরে মোবাইলে দেখতে পাই মেয়ের হাতের ছবি, আংটি, বালা। থানায় যোগাযোগ করলে পুলিশ জানায় মালদহে মেয়ের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, বাপন ওরফে ছোটনও শিলিগুড়িতে ওই ভুট্টার খই তৈরির কারখানায় কাজ করতেন। সেখানেই দু’জনের পরিচয় হয়। বাপনও বিবাহিত। বছর চারেক আগে ভুতনিতে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। তার দুই ছেলে রয়েছে। ইংরেজবাজারের মিল্কির বাসিন্দা হলেও বিয়ের পরে কোতোয়ালির সাহাজালালপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন বাপন। তিনি এখন দুধের ব্যবসা করেন।
পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মোবাইল ফোনের কল রেকর্ড দেখেও তদন্ত চলছিল। কোতোয়ালির কোনও একটি নম্বর থেকে এনজেপির একটি নম্বরে ২ ডিসেম্বরের পর থেকে একাধিক বার কথা হয়। সেই সূত্র ধরেও তদন্ত শুরু হয়।’’ তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শিলিগুড়ি থেকে ট্রেন ধরে মালদহে আসেন ওই মহিলা। তাঁকে স্টেশনে গিয়ে নিয়ে আসে বাপন। তবে ২ থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওই মহিলা কোথায় ছিলেন তা জানার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ মৃতদেহ উদ্ধারের ১২-২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল বলে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। অলোক বলেন, ‘‘ধৃতের স্ত্রীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy