(বাঁ দিকে) নিশীথ প্রামাণিক এবং শুভেন্দু অধিকারী। — নিজস্ব চিত্র।
ভোট মিটলেও ‘অশান্তি’ অব্যাহত পশ্চিমবঙ্গে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্ত হিংসার ঘটনার অভিযোগও উঠছে। শনিবার কোচবিহারে ‘আক্রান্ত’ বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কোচবিহারের প্রাক্তন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে পাশে নিয়ে তিনি জানান, যত দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে ‘আক্রান্ত’দের বাড়িতে পৌঁছনো হবে না, তত দিন তাঁদের সব দায়িত্ব নেবে বিজেপি। শুভেন্দু যখন কোচবিহারে ‘আক্রান্ত’দের সঙ্গে কথা বলছেন, তখন কলকাতায় কোর কমিটির বৈঠকে বসেছিল বাংলার বিজেপি। সেই বৈঠকে শুভেন্দু, নিশীথের না-থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। শুভেন্দু যদিও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই কোচবিহারে এসেছি। বৈঠকে যা সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জেনে নেব।’’
এ বারের লোকসভা ভোটে কোচবিহারে তৃণমূলের জগদীশচন্দ্র বসুনিয়ার কাছে হেরেছেন নিশীথ। অভিযোগ, তার পর থেকেই জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের উপর হামলা হচ্ছে। বাংলার শাসকদল তৃণমূলই এই হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলেও অভিযোগ তোলে পদ্মশিবির। ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ। অনেকেই ‘ঘরছাড়া’! তাঁদের বিজেপির দলীয় কার্যালয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার সেখানেই যান শুভেন্দু। সকলের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে কথা বলেন তিনি। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন বিরোধী দলনেতা। তিনি বলেন, ‘‘যত দিন পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে আক্রান্তদের বাড়িতে না পৌঁছনো হচ্ছে তত দিন পর্যন্ত তাঁদের থাকা খাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করবে দল।’’ এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং তাঁদের চলার মত স্বাভাবিক পরিস্থিতির ব্যবস্থা করারও আশ্বাস দেন শুভেন্দু।
ভোট পরবর্তী ‘হিংসায় আক্রান্ত’দের সঙ্গে নিয়ে বৃহস্পতিবারই রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন শুভেন্দু। অভিযোগ, তাঁদের রাজভবনে গেটের মুখেই আটকে দেওয়া হয়। পুলিশ তাঁদের ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। এ নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টেও মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশের পর রবিবার ‘আক্রান্ত’দের নিয়ে আবার রাজভবনে যাবেন শুভেন্দু। শনিবার কোচবিহারে সেই কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি জানান, রাজ্যপালের সামনে সন্ত্রাসের সমস্ত ঘটনা তুলে ধরবেন এবং তাঁকে কোচবিহারের সন্ত্রাস কবলিত এলাকা পরিদর্শনের আর্জিও জানাবেন শুভেন্দু। তিনি আরও বলেন, ‘‘২০২১ সালের নির্বাচনের পর তৃণমূলের হামলায় বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছিল। তবে এ বার তৃণমূল অন্য পন্থা অবলম্বন করেছে। জীবনে বেঁচে থাকার জন্য নূন্যতম যে জিনিসগুলো প্রয়োজন যেমন রেশন, বাজারঘাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তৃণমূলের ঝান্ডা ধরার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। ইতিমধ্যেই যে সমস্ত এলাকায় সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে সমস্ত ঘটনার তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রের কাছে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল পশ্চিমবঙ্গে আসবে এবং সন্ত্রাস কবলিত এলাকা পরিদর্শন করবে। কোচবিহারেও তাঁদের আসতে অনুরোধ করব।’’
ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগের পাশাপাশি শুভেন্দু এ-ও অভিযোগ করেন, কোচবিহারে নিশীথকে ইচ্ছাকৃত ভাবে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলনেতা বলেন, ‘‘আমরা জানি নিশীথকে কী ভাবে হারানো হয়েছে! নিশীথের ১৭০০ বুথে ৬০ হাজার ভোটে লিড ছিল। তাঁকে ১৯ এবং ২০ নম্বর রাউন্ডে ১৬৪টি বুথে হারানো হয়েছে। ওই ১৬৪টি বুথের ইভিএম বদলানো হয়েছে। পুলিশ এবং আইপ্যাকের সাহায্যে ইভিএম বদলেছেন জেলাশাসক অরিন্দমকুমার মীনা।’’ এ প্রসঙ্গে নিশীথকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার পরামর্শও দেন শুভেন্দু।
ভোটের ফল ঘোষণার পর প্রথম শনিবার কলকাতায় বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক বসেছিল। সেই বৈঠকে গরহাজির ছিল শুভেন্দু, নিশীথ, সুভাষ সরকার। ২০ জন সদস্যের কোর কমিটির বৈঠকে ছিলেন না জন বার্লা, মিঠুন চক্রবর্তীরাও। জন এ বারে ভোটে লড়েননি। রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরেই রেখেছেন তিনি। আর মিঠুন ১ জুন ভোট দিয়েই ঘোষণা করেন, ভোটে দল যা দায়িত্ব দিয়েছিল, তা পালন করেছেন। এ বার তিনি সিনেমার কাজে ব্যস্ত থাকবেন। তা-ই মিঠুন যে থাকবেন না তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। তবে শনিবারের বৈঠকে সকলের নজর ছিল শুভেন্দু, দিলীপ ঘোষের দিকে।
কোচবিহারে থাকার কারণে শুভেন্দু যাননি বৈঠকে। দিলীপ ঘোষও এসেছিলেন বৈঠক শুরু হওয়ার অনেকটাই পরে। অনেকেই ভেবেছিলেন এই বৈঠকেই দু’জন নেতা সামনাসামনি হবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হল না। একে অপরের থেকে ‘দূরে’ই রইলেন শুভেন্দু-দিলীপ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy