ভাঙন: রবিবার সকালে ব্যাপক গঙ্গা ভাঙনে কালিয়াচক ৩ ব্লকের চিনাবাজারে এ ভাবেই পাকা বাড়ি ভেঙে পড়ে। নিজস্ব চিত্র
সরকারটোলার পরে চিনাবাজার। চার বছর আগে এই সময়েই দশম মার্জিনাল বাঁধের ৫০০ মিটার অংশ ভেঙে গঙ্গা ভাঙন হয়েছিল কালিয়াচক ৩ ব্লকের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারটোলায়। রবিবার সকাল থেকে ফের ওই মার্জিনাল বাঁধের প্রায় ২৫০ মিটার অংশ ভেঙে বিধ্বংসী ভাঙন হল সরকারটোলা সংলগ্ন চিনাবাজার গ্রামে। আচমকা ওই ভাঙনে গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে গেল অন্তত ১০০টি বাড়ি। আচমকা ভাঙনের জেরে অনেকে ঘরের আসবাবপত্র পর্যন্ত সরাতে সময় পাননি। ভাঙনের আতঙ্কে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য-সহ এলাকার অন্তত ১০০টি পরিবার নিজেদের ঘরবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিয়েছেন। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ফরাক্কা ব্যারাজের সমস্ত গেট না খুলে জল ধরে রাখার জেরেই এই ভাঙন। এ দিন ব্যারাজ কর্তৃপক্ষের তরফে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোখার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে খবর, চার বছর আগে ভাঙনের কবলে পড়া সরকারটোলার উজানের দিকে এ দিন সকাল থেকে মার্জিনাল বাঁধের প্রায় আড়াইশো মিটার অংশ ভেঙে গঙ্গার জল ঢুকে পড়ে চিনাবাজার গ্রামে। ঘটনাস্থলে হাজির বৈষ্ণবনগরের বিধায়ক স্বাধীন সরকার জানান, এ দিন সকাল আটটা থেকে দুপুর দুটো পর্যন্ত গঙ্গা ভাঙন চলে।
এ দিন চিনাবাজার গ্রামে গঙ্গা ভাঙনে পাকা বাড়ি তলিয়ে যায় দিনমজুর পাতানু মণ্ডলের। পাতানু বলেন, ‘‘সকালে আচমকা বিকট শব্দে বাড়ির কাছে থাকা বাঁধের একটা অংশ ভেঙে পড়ে। আমি আমার স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনও রকমে ঘর থেকে বেরিয়ে যাই। কিছুক্ষণ পরেই আমার বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে যায়।’’ একই ভাবে ভাঙনে বাড়ি হারিয়েছেন চিনাবাজার গ্রামের হুমায়ুন শেখ, সাইফুদ্দিন শেখ, আজিজুর হক। তাঁরা পরিবার নিয়ে কেউ খোলা আকাশের নিচে, কেউ আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
ভাঙনের আতঙ্কে এ দিন ঘরবাড়ি ভেঙে নেন অন্তত ১০০টি পরিবার। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য হারুন রশিদও। তিনি বলেন, ‘‘গঙ্গা ভাঙন যে ভাবে শুরু হয়েছে তাতে নদী থেকে মাত্র ৫০ মিটার দূরে থাকা আমার বাড়ি নিরাপদ মনে করিনি। সেই কারণে নিজেই নিজের বাড়ি ভেঙে সরিয়ে নিয়েছি।’’
বিধায়ক জানান, ভাঙনের বিষয়টি প্রশাসনকে জানানোর পাশাপাশি ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ফরাক্কা ব্যারাজের ইঞ্জিনিয়াররা এসে এলাকা পরিদর্শন করে যান। এ দিন দুপুরে ঘটনাস্থলে যান কালিয়াচক ৩ ব্লকের বিডিও গৌতম দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যে ত্রাণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’’ বৈষ্ণবনগরের প্রাক্তন বিধায়ক বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘চার থেকে পাঁচ বছর আগে চিনাবাজার গ্রামে বোল্ডার ফেলে ভাঙন রোধের কাজ করেছিলেন ফরাক্কা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপর আর রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। আর এই রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ার জেরেই এ দিন বাঁধ ভেঙে ভাঙনে সর্বস্বান্ত হল শখানেক পরিবার। ওই সব পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং সরকারি ভাবে সাহায্য করতে হবে।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে ফরাক্কা ব্যারাজের ইঞ্জিনিয়াররা কোনও মন্তব্য করেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy