আরো একটা বছর পার। প্রতীকী চিত্র।
পয়লা বৈশাখ আসলে ‘একলা বৈশাখ’। কোথাও সঙ্গোপনে, অন্তরে-অন্তরে। নতুনের প্রস্তুতিপর্বে সারা বছরের আলো-ছায়ার বালাপোশখানি উলটে, পালটে একটু রিফু-তালি করা, রোদ খাওয়ানো। গেরস্থালির আনাচকানাচ সাফসুতরো করার ছলে খুঁজে পাওয়া হারিয়ে যাওয়া প্রিয় কলম, ঝুটো পাথরের নাকফুল, বাটিকের রুমাল, হাতে বানানো ‘পেজ মার্ক’, চন্দন কাঠের বোতাম, কুড়িয়ে আনা শুকনো পাইন পাতা, ছোট্ট নুড়ি। তুচ্ছ বাতিল জিনিসও আবার নতুন করে পাওয়ার আনন্দ কেমন যেন মায়ার বুদবুদ ওড়ায় বুকের ভিতরে। নতুন ফোটা আমের মুকুল, মাধবীলতার দু-একটা ছিন্ন পাপড়ি তার বাষ্পে। প্রহর শেষের আলোয় রাঙা চৈত্র মাসের অবিরাম পাতা ঝরে যাওয়া পথ ধরে যে চলে গেল, তার শাড়ির আঁচলে পায়েস-গন্ধে বাঁধা একটা গোলার্ধ। পৃথিবী তাঁকে অন্নপূর্ণা নামে জানে, আমি জানি, আমার মা।
এ সব বিয়োগচিহ্ন বুকেই নববর্ষ দুয়ারে। সাজো সাজো রাই, সাজাও তোমার আঙিনা,পাড়া, মুলুক। গাছ-বন-রোদ্দুর সবাই সেজে ওঠো। ধুয়ে, মুছে নাও গ্লানিভার। মন সাজাও, উপশম দাও। সারা বছর বাংলা তারিখের গায়ে হেলাফেলার ধুলো, দেখিতে না পাও ছায়ার মতো আছি কি না আছি। সে সারা বছরের ভুলে থাকা তারিখগুলোর আলতো অভিমান মুছিয়ে দাও। আর তাদের লাল-নীল সিঁড়ি বেয়ে শৈশবের দরজায় ফিরে যাও। ওই যেখানে মাঝবয়সের বিপন্নতার গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায় কৃষ্ণচূড়া কুড়োনো স্কুলবেলা। উড়ে যাওয়া শুকনো পাতা মাড়িয়ে স্টেশনের পাশের শিরিস ছায়ায় লুকিয়ে দেখা করে কিশোর-কিশোরী। হাতেলেখা চিঠি টুক করে ছুড়ে ফেলে, হাওয়ায় মিলিয়ে যায় লাল সাইকেল।
শিবঠাকুরের জটা মাথা থেকে নামিয়ে প্ল্যাটফর্মের বাঁধানো বেঞ্চে শুয়ে থাকে সারাদিন গাজনের গান গেয়ে বেড়ানো সিধু ঠাকুর। সাদা থার্মোকলের বাক্স থেকে ছোট্ট, সরু প্যাকেটে লাল-নীল মিষ্টি বরফ এগিয়ে দেয় রশিদ শেখ। সারাদিন রোজা রেখে, ঠা-ঠা রোদে নিজের জিভ-গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে থাকা ভুলে যায় সে। বছরের শেষ দিন দুই ক্লান্ত প্রতিবেশী ট্রেনের অপেক্ষায় বসে থাকে পাশাপাশি, ঘেঁষাঘেঁষি। ঘরে ফেরার সঙ্গে সামান্য উপার্জন যদি হয়ে যায়, দরমার ঘরে আজ দুপুর বা সন্ধ্যায় মাংস-ভাতের গন্ধ উঠবে মহল্লা ছাপিয়ে।
চৈত্র সেলের বিক্রি শেষে ওই তো জামাকাপড়ের ব্যাগ কাঁধে ও পাড়ার কানুদা! আজ ছুটি নেবে ও। এই এক মাস কোকিলের চিৎকার ছাপিয়ে মফস্সলের অলিগলি মুখরিত ছিল ওর ‘সেল সেল’ হাঁকডাকে। বিকেলের দিকে হাওয়া ওঠে মন কেমন করা। কোথায় যেন রবীন্দ্রগান বাজে। যাক উড়ে যাক জীর্ণ, পুরাতন। বিবাদ, বিসংবাদ ভুলে হাতের উপরে হাত রেখে আরও এক বার বলো ‘ভালবাসি’।
অজস্র নতুন পাতায় ভরে গিয়েছে গাছ।
পাতা ঝরার ক্ষত ঢেকে সে কেমন ফুল ফোটাতে পারে! আমরা পারি না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy