মর্মান্তিক: হাসপাতালে ঋষভের দেহ। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুলের প্রায় সব ক’টি ক্লাসঘরের জানলায় গ্রিল লাগানো। কিন্তু তিনতলার ওই ঘরে ক’দিন আগেই ছাত্ররা গ্রিলটি খুলে ফেলে বলে দাবি স্কুল কর্তৃপক্ষের। এ দিন নবম শ্রেণির ক্লাস ছিল সেই বাতানুকূল ঘরে। দুপুর তখন দেড়টা। টিফিন পিরিয়ড শেষের মুখে। এই সময়ে ধাক্কাধাক্কিতে স্লাইডিং জানলার কাচ ভেঙে যায়। তিনতলা থেকে ছিটতে নীচের কংক্রিটের চাতালে পড়ে দুই ছাত্র। এর মধ্যে ঋষভ আর্য ভারতীর (১৪) মৃত্যু হয়েছে। অন্য ছাত্র ঋত্বিককুমার সিংহের দু’টি হাত ভেঙেছে। সে নার্সিংহোমে ভর্তি।
সোমবার শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে নারায়ণ স্কুলের ঘটনা। ঋষভের বাড়ি বিহারের পূর্ণিয়ায়। সে এখানে স্কুলের হস্টেলে থাকত। দুর্ঘটনার পরপরই তার বাবা, পেশায় আইনজীবী অরুণকুমার ভারতীকে কে খবর পাঠানো হয়।
হাসপাতালে বসে ভেঙে পড়েছিলেন অরুণবাবু। চোখ দিয়ে অঝোরে জল ঝরছে। তার মধ্যে জানান, দুপুরেই স্কুল থেকে ফোন পান তিনি। তাঁর এক ভাইপো এই স্কুলে পড়ে। তিনি ফোন করে জানান, ঋষভ গুরুতর আঘাত পেয়েছে। পরে স্কুল থেকে অধ্যক্ষ ফোন করে তাড়াতাড়ি আসতে বলেন। তাঁর কথায়, ‘‘ঘনঘন ফোন পেয়ে বুঝতে পারি, একটা অঘটন হয়েছে। স্ত্রীকে জানাইনি। আদালতের এক কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি করে চলে আসি। আমার সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। কত স্বপ্ন ছিল ওকে নিয়ে। বলত, আইএএস অফিসার হব। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল!’’ তবে একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে তিনি কোনও অভিযোগ করতে চাননি। বলেন, ‘‘আমার কপালে যা ছিল হয়েছে। স্কুলকে দোষ দিতে চাই না। দোষ দিয়ে কী হবে?’’
জখম ছাত্র ঋত্বিকের বাবা গোপালকুমার সিংহ কাওয়াখালিতে সিআরপিএফ অফিসে কাজের সূত্রে কোয়ার্টারে থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘ক্লাসের জানলায় গ্রিল না থাকায় বিপদ ঘটল। ছেলের পরিস্থিতি দেখে দুশ্চিন্তায় আছি।’’
অরুণবাবু অভিযোগ করতে না চাইলেও অভিভাবকদের একটি অংশের থেকে প্রশ্ন উঠেছে, কী করে স্লাইডিং জানলার কাচ ভেঙে পড়ল? ওই জানলায় গ্রিলই বা ছিল না কেন? স্কুলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক দিন আগেই পড়ুয়ারা সেটি খুলে ফেলে। তাই সরিয়ে রাখা হয়েছিল। নিরাপত্তার খাতিরে গ্রিলটি কেন লাগানো হয়নি? কী রকম ভাবে গ্রিলটি লাগানো ছিল যে পড়ুয়ারা খুলে ফেলেছিল? এই সব প্রশ্নের সদুত্তর দিকে পারেননি অধ্যক্ষ রজনী প্রসাদ। ক্লাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখারও দাবি উঠেছে।
ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে অধ্যক্ষ রজনী প্রসাদ বলেন, ‘‘আমি দফতরে বসে ছিলাম। হঠাৎ আওয়াজ পেয়ে খোঁজ করতে বলি। দুই ছাত্র নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির সময় কাচ ভেঙে পড়ে যায়।’’ প্রথমে তিনি জানান, জখম অবস্থায় নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। পরে নার্সিংহোম জানায়, এক জন মৃত। তখন অধ্যক্ষ মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করেন বলে দাবি।
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের একটি অংশ পড়ুয়াদের নিরাপত্তার অভাব নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁরা জানান, স্কুলের তরফে এই নিয়ে কাউকে কিছু স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। কেউ শুনেছেন, ছাদ থেকে দুই ছাত্র পড়ে গিয়েছে। কাউকে বলা হয়েছে, বারান্দা থেকে পড়ে গিয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। জখম ছাত্রকে দেখতে এবং মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। কী ভাবে ঘটল পুলিশ খতিয়ে দেখুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy