Advertisement
৩০ ডিসেম্বর ২০২৪
Firing

firing: চা বাগানে গুলিবিদ্ধ ছাত্র

এ দিন বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ ইসলাপুরের আগডিমটিখুন্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের গাঠিয়াটোলে চা বাগান লাগোয়া এলাকায় ওই গুলির ঘটনা ঘটে।

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে আনা হল উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

গুলিবিদ্ধ কিশোরকে আনা হল উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু ও অভিজিৎ পাল
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৩
Share: Save:

চা বাগান নিয়ে গোলমাল চলছিল তিন বছর ধরেই। কিন্তু তার জেরে তাঁদের মাত্র তেরো বছরের ছেলে সাহানওয়াজকে যে গুলিতে জখম হতে হবে তা ভাবতে পারছেন না মা মর্জিনা, বাবা মাজারুলও। মাজারুলও ওই বাগানের শ্রমিক। জখম ছেলেকে নিয়ে প্রথমে ইসলামপুর হাসপাতাল পরে সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে ভর্তি করানো হয়। সঙ্গে ভর্তি আরও দুই জন।
মহম্মদ গোফিল এবং আলাউদ্দিন। তাঁরা সম্পর্কে সাহানওয়াজের কাকা।

শুক্রবার দুপুরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের করিডরে বসে চোখেমুখে একরাশ ভয়, আতঙ্ক নিয়ে ছেলের কথা ভেবে কাঁদছিলেন মর্জিনা। কী করবেন, বুঝতে পারছিলেন না মাজারুল। মালিক পক্ষ তিন বছর আগে বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কোনও রকমে চার ছেলেমেয়েকে নিয়ে সংসার চলছে। হাসপাতালে সঙ্গে আত্মীয়রা কয়েকজন রয়েছেন। চিকিৎসক ততক্ষণে গুলি বার করার চিকিৎসা শুরু করেছেন।

তবুও বিকেলেও হুশ ফেরেনি সাহানওয়াজের। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসকদের একাংশ জানান, সাহানওয়াজের বুকের এক দিক দিয়ে গুলি ঢুকে শরীরের অন্য ধার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে। তাতে ফুসফুসের একাংশে ক্ষতি হয়েছে। ফুসফুসের আঘাত মেরামত করা হয়েছে। তবে রোগীর সঙ্কট এখনও কাটেনি। চিকিৎসকেরা এও জানিয়েছেন, মহম্মদ গোফিলের মাথা ফেটেছে পাথরের আঘাতে। আলাউদ্দিনকে মারধর করায় তাঁর পায়ে এবং শরীরে গুরুতর চোট রয়েছে।

এ দিন বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ ইসলাপুরের আগডিমটিখুন্তি গ্রাম পঞ্চায়েতের গাঠিয়াটোলে চা বাগান লাগোয়া এলাকায় ওই গুলির ঘটনা ঘটে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সে সময় বাড়িতে রান্নার কাজ করছিলেন মা মর্জিনা। বাবা মাজারুল চা বাগানের কাজে গিয়েছিলেন। সাহানওয়াজ স্থানীয় একটি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ। তাই মাঝে মাঝে মাঠে গরু বেঁধে আসা বা বিকেলে সেগুলোকে আনার কাজ করে।

এ দিনও মাঠে গুরুকে ঘাস খাওয়াতে গিয়েছিল। ফেরার সময় বাড়ির কাছে রাস্তায় গোলমালের মধ্যে পড়ে যায়। গুলিবিদ্ধ হয়। সাহানওয়াজরা চার ভাইবোন। তার এক দিদি, এক বোন এবং ছোট ভাই রয়েছে। বাবা, মা এবং পরিচিতেরা সাহানওয়াজকে শিলিগুড়িতে নিয়ে আসার পর বাড়িতে তাঁরাও উদ্বেগে রয়েছেন। বাড়িতে ঠাকুমা, দাদু, পিসিরা রয়েছেন।

ঘটনার প্রতিবাদে মাটিকুণ্ডায় পথ অবরোধ। শুক্রবার।

ঘটনার প্রতিবাদে মাটিকুণ্ডায় পথ অবরোধ। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র।

মা মর্জিনার কথায়, ‘‘গুলি চলেছে খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে ছেলে। সেখান থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।’’ কাঁদতে কাঁদতে মর্জিনা আরও বলেন, ‘‘আমার ছেলেকে বাঁচাও।’’ আর মাজারুলের কথায়, তিন বছর ধরে বন্ধ বাগানে কোনও রকমে পাতা তোলার কাজ করে দিন চলছে। ছেলের চিকিৎসা কী ভাবে হবে বুঝতে পারছি না।’’

তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন কামরুল হুদা। তিনি জানান, এ দিন বন্দুক, পিস্তল নিয়ে বাইরের লোকজন এনে হামলা চালান হয়। বাগান থেকে বাড়ির দিকে ফিরে এলেও ওরা তাড়া করে। তিনি বলেন, ‘‘আমাকেও গুলি করেছিল। আমি সরে যেতেই পাশে থাকা ভাইপোর গায়ে গুলি লাগে। ওদের নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। বিকেলে একটু খাওয়া দাওয়া করা হয়েছে। হাতে টাকা পয়সা নেই। রাতে কোথায় থাকব, কী খাব কিছুই বুঝতে পারছি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Garden Firing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy