Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
jalpaiguri

Jalpaiguri: ‘মা বলেছেন পড়তে হবে’, দুঃখ ভুলে তাই ছুটছেন স্ট্রাইকার

মেয়ে ছুটেছেন। অসুস্থ মাকে নিয়ে। নিঝুম বন্ধ বাগানে আগাছা জড়িয়ে ধরা চা বাগিচার মধ্যখানের সরু রাস্তা দিয়ে।

অনির্বাণ রায়
জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২২ ০৯:৩১
Share: Save:

মেয়ে ছুটছেন। কখনও ডান পায়ে, কখনও বাঁ পায়ে ফুটবল নিয়ে ছুটছেন। স্কুলের ফুটবল দলে খেলেন। স্ট্রাইকার। গোলের পথ চেনেন।

মেয়ে ছুটেছেন। অসুস্থ মাকে নিয়ে। নিঝুম বন্ধ বাগানে আগাছা জড়িয়ে ধরা চা বাগিচার মধ্যখানের সরু রাস্তা দিয়ে। মায়ের যকৃতে ছিল কর্কট রোগ। মেয়ে ছুটেছেন জলপাইগুড়ির বন্ধ রায়পুর বাগান থেকে কখনও জলপাইগুড়ি, কখনও শিলিগুড়ির হাসপাতালে। সরকারি কার্ডের টাকা ফুরিয়ে গেলে, আরও টাকা প্রয়োজন হয়। মেয়ে ছুটেছিলেন স্কুল ফেলে, বই-খাতা ফেলে। শিলিগুড়িতে কাজের খোঁজে ছুটে গিয়েছিলেন। আঠারো দিন কাজও করেছেন। মা আরও অসুস্থ হন। মেয়ে আবার ছুটতে ছুটতে ফিরে আসেন। সপ্তাহখানেক আগে, মায়ের মৃত্যু হয়েছে। বাড়িতে শ্রাদ্ধশান্তি করার টাকা নেই। দুপুরবেলায় মেয়েটি উঠোনে বসেন। অন্ধকার ঘরে চকচক করে ফুটবল খেলে পাওয়া পুরস্কারগুলো। পড়শি শিশুরা প্লাস্টিকের ছোট ফুটবল নিয়ে খেলে। আনমনে সে দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মেয়ে উঠে দাঁড়ান। মনের খেয়ালে ওদের সঙ্গে বল পায়ে খেলতে শুরু করেন। পেয়ারা গাছের ডালের ফাঁক দিয়ে মেয়ের মুখে দুপুরের রোদ এসে পড়ে। গাছের ডালে কে যেন জাতীয় পতাকা বেঁধে দিয়ে গিয়েছে। স্বাধীনতার পঁচাত্তরের উৎসবের আঁচ লেগেছে বন্ধ বাগানেও।

মেয়েটি বলেন, “আমার কাছে স্বাধীনতা মানে স্কুলে পড়াশোনা করতে পারা। আমার কাছে স্বাধীনতা মানে স্কুল-দলে ফুটবল খেলার সুযোগ পাওয়া।”

বন্ধ রায়পুর চা বাগানকে যেন পেঁচিয়ে শুয়ে রয়েছে পিচ সড়ক। তির বেগে গাড়ি চলে যায় সর্বক্ষণ। সড়কের ব্যস্ততা, কোলাহল, উৎসবের সুর-শব্দ গুদাম লাইন পর্যন্ত পৌঁছয় না। এই শ্রমিক লাইনে বসে সঙ্গীতা বলেন, “এ বার স্বাধীনতার ৭৫ বছর জানতাম না। আসলে, মাকে নিয়ে এত ছোটাছুটি করতে হল!”

সঙ্গীতা ওঁরাও। আঠারো ছুঁইছুই। বারোপেয়িটা পাঁচিরাম নাহাটা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত বছরই মাধ্যমিক দেওয়ার কথা ছিল। মায়ের অসুস্থতার কারণে পড়া ছেড়ে শিলিগুড়িতে কাজে চলে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে আবার স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। সঙ্গীতা বলেন, “মা চেয়েছিল, আমি পড়াশোনা করি, খেলি।”

সঙ্গীতার এক দিদি বাড়িতে এখন একমাত্র রোজগেরে। বন্ধ বাগানে পাতা তুলে ১৮০ টাকা পান। ভাইয়ের থ্যালাসেমিয়া। বাবা অসুস্থ। এক জনের আয়ে সংসার চলবে না। সঙ্গীতা বলেন, “চা বাগানে মায়ের কাজ পাব। আমি কাজ করব। কিন্তু পড়াশোনাও করব।” বন্ধ বাগানেই থাকেন পাতকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান প্রধান হেমব্রম। প্রধান বলেন, “মেয়েটিকে সব সাহায্য করব।” স্কুলে সঙ্গীতার খেলার কোচ কিংশুক রায় বলেন, “মেয়েটা ভাল খেলে। ও স্ট্রাইকার। বল নিয়ে ছুটলে গোল পাবেই।” বন্ধ রায়পুর বাগানের জীর্ণ কারখানার সামনে জাতীয় পতাকা তোলা হবে স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তির দিনে। সঙ্গীতা সেখানে যেতে পারবেন না। মায়ের শ্রাদ্ধের টাকা জোগাড় করতে বেরোতে হবে তাঁকে। মেয়ে ফের ছুটবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

jalpaiguri Football Team North Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE