বন্ধ জাতীয় সড়ক। ট্রাক থামিয়ে রাস্তাতেই রান্না। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
অসম বন্ধের প্রভাব পড়েছে কোচবিহারেও।
আক্রাসু-সহ একাধিক সংগঠনের ডাকা তিন দিনের বন্ধের দ্বিতীয় দিনে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে কোচবিহার-তুফানগঞ্জ সরাসরি সড়ক যোগাযোগ পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। মঙ্গলবার থেকে ওই রাস্তায় অসম, মেঘালয়, অরুণাচল, মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যগামী পণ্যবাহী ট্রাক আটকে পড়ে।
একদিনের মধ্যেই ওই জাতীয় সড়কে কোচবিহার-তুফানগঞ্জ রুটের মারুগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় দশ কিমি এলাকাজুড়ে ট্রাকের দীর্ঘ লাইন দাঁড়িয়ে রয়েছে। বুধবার দুপুরের পর জাতীয় সড়কের সঙ্গেই কোচবিহার শহরের রেলঘুমটি পর্যন্ত এলাকাতেও ট্রাকের সারির লাইন পড়ে যায়। ফলে রীতিমতো ভোগান্তির মুখে পড়েন জেলার বাসিন্দা ওই রুটের নিত্যযাত্রীরা।
অভিযোগ, ঘুরপথে এনবিএসটিসি ও বেসরকারি বাস চললেও তা সংখ্যায় কম ছিল। ঘুরপথে যাতায়াতে বাড়তি সময়, অতিরিক্ত ভাড়াও লাগছে। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া ওই বন্ধ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। সবমিলিয়ে নিত্যযাত্রীদের যাত্রীদের ক্ষোভ চরমে উঠেছে। উদ্বেগ বেড়েছে ট্রাক চালকদের।
এনবিএসটিসি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবল রায় বলেন, “যানজটের সমস্যার জন্য ওই রুটে দুদিন ধরে স্বাভাবিক বাস পরিষেবা চালানোয় সমস্যা হচ্ছে। তবে যাত্রীদের যাতে অসুবিধে না হয় সেজন্য ঘুরপথে পর্যাপ্ত বিশেষ পরিষেবা বাস চালানো হচ্ছে। বাড়তি দূরত্বের জন্য অতিরিক্ত তেল খরচ হচ্ছে। তাই সেক্ষেত্রে সামান্য বেশি ভাড়া নিতে হচ্ছে।” বেসরকারি বাস মালিক সমিতির তুফানগঞ্জ মহকুমা সম্পাদক সন্তোষ সাহা জানিয়েছেন, ওই রুটে স্বাভাবিক বাস পরিষেবা ব্যাহত হয়ে পড়েছে। অসম বন্ধের জেরে কোচবিহার থেকে কালজানি-আলুধোয়া হয়ে ১০ কিমি, দেওয়ানহাট- বলরামপুর-দেওচড়াই হয়ে ১৫ কিমি ঘুরপথে কিছু বাস চালানো হচ্ছে।
বাসিন্দারা জানান, ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের ওই রুট দিয়ে দৈনিক গড়ে এক হাজারের বেশি ট্রাক অসম-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে যাতায়াত করে। সবজি, তেল, মাছ, জামাকাপড়, রং-সহ বিভিন্ন সামগ্রী আমদানি-রফতানি হয়। অসম বন্ধের জেরে বিপাকে পড়েছেন ওই ট্রাকের চালক, খালাসিরাও। তাদের অনেককেই রাস্তার ওপর দাঁড় করিয়ে রাখা ট্রাকের নীচেই রান্না করতে হচ্ছে। পানীয় জল, স্নান, শৌচাগারের সমস্যায় নাকাল হচ্ছেন তাঁরা। এক ট্রাক চালক মকবুল হোসেন বলেন, “আলু নিয়ে গুয়াহাটি রওনা হয়েছি। রোদ, কুয়াশায় আলু নষ্টের আশঙ্কায় চিন্তা হচ্ছে। শৌচাগারের সমস্যাও রয়েছে।” অন্য এক চালক শাহনাওয়াজ খান বলেন, “আগরতলা যাব। অথচ দু’দিন রাস্তায় ট্রাক নিয়েই দাঁড়িয়ে আছি।”
পুলিশ জানিয়েছে, জাতীয় সড়ক যতটা সম্ভব যানজট মুক্ত রাখার চেষ্টা হচ্ছে। নির্দিষ্ট এলাকায় ট্রাক দাঁড় করানো হচ্ছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবাল বলেন, “সামগ্রিক পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” বাস মালিকদের একাংশের অবশ্য অভিযোগ, বিকল্প দুটি রুটেই একাধিক জায়গায় কালীপুজোর চাঁদার জুলুম নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টি পুলিশের নজরে আনা হবে। পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোচ, রাজবংশী-সহ অসমের আরও ৫টি জন গোষ্ঠীকে তফসিলি জাতিতে অর্ন্তভুক্ত করার দাবিতে ছয় জনগোষ্ঠী ঐক্য মঞ্চ বুধবার সকাল ৫ টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই বন্ধের ডাক দিয়েছে। বন্ধ চলাকালীন ধুবুরি, কোকরাঝাড় এবং বঙ্গাইগাঁও জেলায় সবরকমের সরকারি বেসরকারি যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। ধুবুরির গোলকগঞ্জ রেল ষ্টেশনের কাছে শিলিগুরি-ধুবুরি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেসকে ঘণ্টাখানেক আটকে রাখে বন্ধ সমর্থনকারীরা। ধুবুরি, কোকরাঝাড় ও বঙ্গাইগাঁও জেলায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ধুবুরি জেলার গোলকগঞ্জ, এলাকা থেকে মোট ১৫ জন বন্ধ সমর্থনকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ধুবুরির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রনীল বড়ুয়া।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy