হলং বাংলো। —ফাইল চিত্র।
কোলাহল না করে বয়ে যাওয়া নদীটার নাম হলং। নদীর নামেই গভীর গহন জঙ্গলের ভেতরে সবুজ কাঠের বাংলোটির নাম রাখা, হলং বাংলো। সেই বাংলোকে বিস্তৃত করে রয়েছে এক সভ্যতা। যে সভ্যতা আদিম। অথচ, শান্ত, বন্য কিন্তু মার্জিত। জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানে চেকপোস্টের কাঠের গেট পেরোলেই যে সভ্যতার শুরু। এক চিলতে নুড়ি বিছানো পথের ধারে যেখানে নিশ্চিন্তে চড়ে বেড়ায় একশৃঙ্গ গন্ডার। পুরু চামড়ার প্রাণীটির পিঠে এসে বসে লেজ নাড়ায় ফিঙে পাখি। এক গাছের ছায়া থেকে অন্য গাছের ছায়ায় দৌড়ে যায় চিতল হরিণ। জঙ্গলের লতাপাতা ছিঁড়ে এগোয় হাতির দল। শুকনো পাতার ওপরে হস্তিযূথের পা পড়ে মর্মর শব্দে চমকে ময়ূর উড়ে যায় শিমূল থেকে জারুলের ডালে। কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে হঠাৎ তরতরিয়ে কাঠবিড়ালি নেমে এসে ঢুকে যায় মাছপাতা গাছের ঝোপে। সে পথ পৌঁছয় হলং বাংলোয়।
মঙ্গলবার রাতে সমাজমাধ্যমে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ছিল জ্বলতে থাকা হলং বাংলোর ছবি। রাতের অন্ধকারে তোলা ভিডিয়োয় বাংলোর গায়ের সবুজ রং চোখে পড়ছিল না। তখন কেবল কমলা, হলুদ, ঘন লাল রঙের আগুনের ধীরে ধীরে, কিন্তু নিশ্চিত গতিতে বাংলোর সবটুকুকে জড়িয়ে নেওয়া ছাড়া, আর সব মিথ্যে। যে সভ্যতা হলং বাংলোকে ঘিরে রাখে রোজ, তারা তখন কতটাই না ভীত সন্ত্রস্ত! হয়তো বনের মধ্যে শুরু হয়েছিল আতঙ্কের ছোটাছুটি। যেমন প্রতিদিন জিপসি গাড়ি বোঝাই পর্যটক ক্যামেরা ধরে হইহই জুড়ে দিলে ভয় পেয়েছে সম্বর হরিণ, গন্ডারের পিঠে বসে থাকা লেজঝোলানো পাখিটা। রাতের বেলায় নুন খেতে আসা বাইসন বা গন্ডারের চোখে টর্চের আলো পড়লে যে ভাবে তারা ভয়ে দৌড়ে পালিয়েছে বার বার।
শুক্ল দ্বাদশীর রাত ছিল মঙ্গলবার। আকাশে মেঘ থাকায় চাঁদের আলো ছড়ায়নি জঙ্গলের এই খণ্ডে। জ্যোৎস্নার আলোয় হলং বাংলোর সামনে বসে সামনে নুন দেওয়া কুয়োতে জল পানে আসা প্রাণীদের দেখা, বাংলোর সামনে জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া হলং নদীকে দেখা, অথবা চাঁদের যেমন আলোতে জঙ্গলকে করুণ মনে হয়, সে দিকে তাকিয়ে থাকার অভিজ্ঞতা এত দিন দিয়েছে কেবল হলং বাংলোই।
ষাটের দশকের শেষের দিকে তৈরি বাংলোর কাঠের শরীরে লেপ্টে ছিল আভিজাত্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী থেকে বিচারপতি—গণ্যমান্য অতিথিদের পছন্দের গন্তব্য ছিল হলং বাংলো। সেই বাংলো আবার নতুন করে তৈরি হবে, সে কথা সরকার জানিয়ে দিয়েছে। ডুয়ার্সের জয়ন্তী বাংলোও পুড়ে গিয়েছিল। সেখানে কংক্রিটের নতুন বাংলো হয়েছে। সে বাংলোকে ঘিরে নানা বিতর্ক হয়েছে। পরিবেশপ্রেমীরা বলেছেন, নদী-জঙ্গল-চারপাশের ভারসাম্য রাখতে ফিরিয়ে দেওয়া হোক কাঠের বাংলোটি। গভীর অরণ্যে হলং বাংলোটিও ফের কাঠেরই তৈরি হবে সেটাই কাম্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy