সিকিমে কাজ করতে গিয়ে নিখোঁজ শিলিগুড়ির চার যুবক। — ফাইল ছবি।
প্রকৃতির রোষে বিপর্যস্ত সিকিম। তিস্তার ধ্বংসলীলায় নিখোঁজ বহু মানুষ। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন। পাহাড়ের আনাচেকানাচে আটকে বহু পর্যটক নামার পথ খুঁজছেন। অনেকেরই খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। চার মাস আগে রাজমিস্ত্রি ও সহকারির কাজ করতে সিকিমে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি মহকুমার অন্তর্গত চটহাটের একই গ্রামের চার যুবক, জয়কুমার এক্কা, কিশোর খালকো, পেটুরাস এক্কা এবং মনসুর আলি। সকলে এক সঙ্গেই কাজ করতেন লাচুংয়ে। গত মঙ্গলবার রাতে ফোনে শেষ বার কথা হয়েছিল নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের সঙ্গে। পরের দিন থেকে আর কোনও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না তাঁদের সঙ্গে।
শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের অন্তর্গত ফাঁসিদেওয়া ব্লকের চটহাট অঞ্চলের নিরখিনগছ গ্রাম। সেই গ্রামের বহু পরিবারেই বাবা-মা, স্ত্রী, সন্তানদের পরিজনের চিন্তায় ঘুম উড়েছে। দুশ্চিন্তায় ডুবে গিয়েছে গোটা গ্রাম। চার যুবক বা তাঁদের ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গেও কোনও ভাবেই যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। সংবাদমাধ্যমে সিকিমে বিপর্যয়ের ভয়াবহ ছবি দেখে আঁৎকে উঠছে পরিবারগুলি। কী অবস্থায় রয়েছে তাদের প্রিয়জন! কোথায় রয়েছে, কোনও খবরই যে পাওয়া যাচ্ছে না! অগত্যা পরিবারের সদস্যরা দ্বারস্থ হয়েছেন প্রশাসনের। যদিও প্রশাসন নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো খবর শোনাতে পারেনি। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।
নিখোঁজ কিশোর খালকোর স্ত্রী লালিমা টোপ্পো বলেন, ‘‘মঙ্গলবার রাতে শেষ বার কথা হয়েছে। বুধবার ফোন করার চেষ্টা করি কিন্তু ফোনে পাইনি৷ সিকিমের খবর তখনও পাইনি। যেখানে স্বামী কাজ করে সেখানে নেটওয়ার্কের সমস্যা আছে। ভাবলাম, হয়তো সেই কারণে ফোন লাগছে না। পরে সংবাদমাধ্যমে জানতে পারি পরিস্থিতির কথা। খুবই দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি। জানি না কী হবে।’’
পেটুরাসের স্ত্রী অনিমা তির্কে বলেন, ‘‘দুই ছেলেমেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে কী ভাবে যে দিন কাটাচ্ছি, বলে বোঝাতে পারব না। মঙ্গলবার রাতে শেষবার কথা হয়েছে৷ ঠিকাদারের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না। প্রশাসনকে সব জানিয়েছি৷ ছবি-সহ সব তথ্যও পাঠানো হয়েছে৷ এখন প্রার্থনা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।’’
জয়কুমারের স্ত্রী রেনুকা কুজুর এক্কা কথা বলতে বলতে কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতেই বললেন, ‘‘মঙ্গলবার তিন থেকে চার বার কথা হয়েছিল। বুধবারও যোগাযোগ করতে না পেরে ওঁকে ফোন করি। কিন্তু কিছুতেই ফোন লাগেনি। পরে সংবাদমাধ্যমে ঘটনার কথা জানতে পেরে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে৷ গোটা পরিবার চিন্তায় আছে।’’
মনসুরের বাবা জাহাঙ্গির আলম বলেন, ‘‘আমার ছেলে মাসচারেক ধরে সিকিমে কাজ করত। সোমবার শেষ বার কথা হয়েছে৷ তার পর থেকে আর কোনও খোঁজখবর নেই। বাড়িতে কান্নাকাটি পড়ে গিয়েছে। খুবই চিন্তায় আছি।’’
অন্য দিকে, এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান রাজেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘বিষয়টি গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাতে জানতে পেরেছি। প্রশাসনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সিকিমে যে সব টোল-ফ্রি নম্বরগুলি দেওয়া হয়েছে, সেখানে যোগাযোগ করার চেষ্টা হচ্ছে। চার যুবক যত ক্ষণ পর্যন্ত বাড়িতে না ফিরছেন, খুবই চিন্তায় রয়েছে পরিবারগুলি। আমরা সব সময় ওই পরিবারগুলির পাশে আছি। ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারাও যোগাযোগ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy